মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা : টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ৭৮ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আন্তজেলা ডাকাত সর্দার ইসমাইল হোসেন মামুনকে দুই দিনের রিমান্ডে এনেছেন মির্জাপুর থান পুলিশ। অপর ডাকাত সর্দার মিলনকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালতের বিচারক। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) তাদের আদালতে হাজির করা হলে বিচারকের কাছে তারা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ও টাকা লুটসহ গুলি করার কথা স্বীকার করেছে। মামলার পর পুলিশ ডাকাতির ৭৮ লাখ টাকার মধ্যে তিন লাখ ১২ হাজার হাজার টাকা, দুটি মোটর সাইকেল, একটি হাইয়েজ (মাইক্রোবাস) এবং ১০ রাউন্ড গুলিসহ আন্তজেলা দুই ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) মামলার তদন্তকারী অফিসার ও বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. মোকলেছুর রহমান এবং মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোশারফ হোসেন বিষয়টি নিশি।চত করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত আন্তজেলা ডাকাত সর্দাররা হচ্ছে, বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার দুধল মৌ গ্রামের মো. নাজিমুদ্দিনের ছেলে মো. মিলন (৪৬) এবং রাজবাড়ি সদর উপজেলার খানবানাপুর গ্রামের মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে ইসমাইল হোসেন মামুন (৫০)। ঢাকার হাজারিবাড় ও যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) পুলিশ জানায়, গত ২২ মার্চ সন্ধ্যায় গোড়াই-সখীপুর-ঢাকা রোডের বাঁশতৈল ইউনিয়নের পাঁচগাও এলাকায় একদল ডাকাত গুলি ছুরে প্রাইভেটকার ভাংচুর করে রাজশাহীর বিন্দারামপুর গ্রামের মোকসেদ আলীর ছেলে পিয়ারোল এবং একই এলাকার লিটন মিয়া, মনিরুল ও জেবেল মিয়ার নিকট থেকে দুই ব্যাগে ভর্তি ৭৮ লাখ টাকা ডাকাতি করে নিয়ে পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা উপজেলার কাইতলা গরুর হাটে ঐ দিন সারাদিন গরু ও মহিষ বেচা কেনা শেষ করে সন্ধ্যায় প্রাইভেটকারে ফির ছিলেন। পথে পাঁচগাও এলাকায় ৮ থেকে ১০টি মোটরসাইকেল ও একটি মাইক্রোবাসে আসা ২০-২৫ জন ডাকাত প্রাইভেটকারের গতিরোধ করে। এ সময় তারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে প্রাইভেটকারে গুলি করে গ্লাস ভেঙে অস্ত্রের মুখে তাদরে জিম্মি করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকা ৭৮ লাখ টাকা দুটি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় ব্যবসায়ী পিয়ারোল বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের নামে মির্জাপুর থানায় মামলা করেন।
মামলার পর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের নির্দেশনায় গোয়েন্দা পুলিশ ও মির্জাপুর থানা পুলিশের সমন্বয়ে টিম গঠন করা হয়। এই টিম আসামীদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মোকলেছুর রহমান জানান, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলার তদন্তকারী অফিসার মো. মোকলেছুর রহমান ও ডিবি পুলিশের শক্তিশালী একটি টিম গত ১১ এপ্রিল ও ১৮ এপ্রিল ঢাকার হাজারিবাগ ও যাত্রবাড়ি থেকে মিলন ও ইসমাইল নামে দুই ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যমতে পুলিশ নগত ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা, দুটি মোটরসাইকেল, একটি মাইক্রাবাস এবং ১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায় ইসমাইল হোসেন মামুন ও মিলন আন্তজেলা ডাকাত দলের সর্দার। তাদের দলে ৩-৪০ জন সদস্য রয়েছে।
চক্রটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, ঢাকা-মানিকগঞ্জ রোড, ঢাকা-ময়মনমনসিংহ রোড, ঢাকা-সিলেট রোড, ঢাকা-চট্রগ্রাম রোড ও ঢাকা-মাওয়া-পদ্মা সেতু রোডসহ বিভিণœ আঞ্চলিক রোডে যাত্রীবাহি বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ পিকআপ ভ্যানে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের জিম্মি করে ডাকাতি করে আসছে। তাদরে নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ৭৮ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় মামলার পর থেকেই ডাকাতদের ধরতে পুলিশ তৎপর ছিল। পুলিশ সুপার মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় ঘটনার মুল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত সর্দার ইসমাইল হোসেন মামুন ও মিলনকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনা স্বীকার করেছে। পরে আদালতের বিচারক ডাকাত সর্দার ইসমাইল হোসেন মামুনকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। অপর ডাকার সর্দার মিলনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদরে দেওয়া তথ্য মতে অপর ডাকার দলেল সস্যদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছেন।

Discussion about this post