কাজী আরেফসহ ৫জাসদ নেতা হত্যার দায়ে দন্ডিতদের শাস্তি কার্যকরের দাবি
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও স্বাধীন বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকার রূপকার ৬২র নিউক্লিয়াস সদস্য সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী আরেফসহ ৫জাসদ নেতাকে হত্যা দায়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতার ও রায় কার্যকরের দাবিতে নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ২৩তম দিবস পালিত হয়েছে। বুধবার বিকেল ৩টায় কুষ্টিয়া পুরাতন পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে দিবসটি স্মরণে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কাজী আরেফ স্মৃতি সংসদের সভাপতি গোলাম মহসিন।
এর আগে ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী সংগঠিত নৃশংস এই হত্যা দিবস স্মরণে কাজী আরেফ স্মৃতি সংসদের আয়োজনে পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে শিশুকিশোরদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বক্তব্য রাখেন, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল আলিম স্বপন’, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আখতারুজামান মাসুম, বীর মুক্তিযুদ্ধা নজরুল ইসলাম সভাপতি সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলা শাখা, কুষ্টিয়া,কমরেড হাফিজ সরকার, সাধারণ সম্পাদক, ওয়াকার পাটি কুষ্টিয়া জেলা শাখা, কমরেড শফিউল রহমান শফি, আহবায়ক বাসদ কুষ্টিয়া জেলা শাখা, আহাম্মদ আলী, সদস্য জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি, কনক চৌধুরী সংস্কৃতিক সংগঠন কুষ্টিয়া, খলিলুর রহমান মজু সংস্কৃতির সংগঠন কুষ্টিয়া, কারশেদ আলম, প্রতিষ্ঠাতা কাজী আরেফ আহামেদ স্মৃতি সংসদ কুষ্টিয়া, অধ্যাপক শহিদুর রহমান বিভাগীয় প্রধান বাংলা বিভাগ রবীন্দ্র মৈএী বিশ্ববিদ্যালয়, হাসিবুল রহমান তামিম” সিনিয়র প্রভাষক বাংলা বিভাগ রবীন্দ্র মৈত্রী বিশব্বিদ্যালয়, মাহাবুব হাসান, সাধারণ সম্পাদক জাতীয় যুব জোট কুষ্টিয়া জেলা শাখা, পরিচালনা করেনথ মোঃ সুমন আলী,সাধারণ সম্পাদক, কাজী আরেফ আহমেদ সৃতি সংসদ!!
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৯৯ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন সন্ত্রাস কবলিত রক্তাক্ত জনপদ খ্যাত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের কালিদাসপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ চলাকালে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা মহান মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক জাতীয় নেতা কাজী আরেফ আহামেদসহ জেলা জাসদের সভাপতি বীরমুক্তিযুদ্ধা লোকমান হোসেন,সাধারন সম্পাদক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযুদ্ধা এ্যাডঃ ইয়াকুব আলী,স্থানীয় নেতা ইসরাইল হোসেন তফসের ও শমসের মন্ডলসহ ৫জাসদ নেতাকে ব্রাশফায়ার করে হত্যাকরে।
এঘটনায় দৌলতপুর থানার তৎকালীন ওসি ইসাহক আলী বাদী হয়ে করা হত্যা মামলাটি নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তদন্ত শেষে জড়িত অভিযোগে ২৯ আসামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন এবং বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয় আদালতে। ২০০৪ সালের ৩০ আগষ্ট আদালত ১০ জনের মৃত্যুদন্ড এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন। রায় পরবর্তীতে নিম্ন ও উচ্চ আদালতে সকল বিচারিক বিধি সম্পন্ন করে ২০০৮ সালে শুধুমাত্র ৯জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রেখে বাকীদের খালাস দেন। এই ৯ জনের মধ্যে জামিনে থেকে অদ্যবধি ৫জন পলাতক থাকলেও ২০১৬ সালের জানুয়ারীতে কারান্তরীন ১আসামীর মৃত্যু এবং ৩আসামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়।তবে গত বছরের মাঝামাঝিতে ছদ্মনামে পলাতক থাকা মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী রওশন আলীকে গ্রেফতারের পর বর্তমান তিনি যশোর কারাগারে কারান্তরিন আছেন।
এহত্যাকান্ড মামলার প্রধান প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী কারশেদ আলাম বলেন,“দন্ডপ্রাপ্ত এসব পলাতক আসমীরা পাশর্^বর্তী ভারতে অবস্থান করেন এবং মাঝে মধ্যেই সীমান্ত পার হয়ে এসে পরিবারের সাথে দেখা করেন এবং এখানকার স্থানীয় সহযোগী অপরাধ সংগঠনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে আবার ভারতে ফিরে যান”।
জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলীম স্বপন বলেন,‘কাজী আরেফ হত্যায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামীদের অবিলম্বে আসামীদের গ্রেফতার ও রায় কার্যকর করতে হবে’।
কাজী আরেফের অন্যতম রাজনৈতিক সহযোদ্ধা কুষ্টিয়ায় প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনকারী সম্মিলিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. আব্দুল জলিল বলেন, “কাজী আরেফ হলেন স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের স্মরণীয় বরণীয় ব্যক্তি, স্বাধীন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি ছিলেন এক অনন্য নেতৃত্ব গুনাবলীর অধিকারী। কাজী আরেফ হত্যার ঘটনাটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে চক্রটি একেরপর এক দেশকে যোগ্য নেতৃত্ব শুন্য করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে এসব নৃশংস হত্যা ঘটিয়ে চলেছে ওই চক্রটিকে সমুলে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই নৃশংসতা চলতেই থাকবে। তাই অবিলম্বে কাজী আরেফ হত্যা দায়ে সাজাপ্রাপ্তদের গ্রেফতার ও রায় কর্যকর করার দাবি জানাচ্ছি”।
কাজী আরেফ হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৪জন আসামী এখনও ধরাছোয়ার বাইরে পলাতক থেকে চরম হুমকি ও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা এমামলায় স্বাক্ষী ছিলেন তাদের সবাই বিশেষ করে প্রত্যদর্শী স্বাক্ষী কারশেদ আলমকে নানা ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি এর প্রতিবাদ জানায় এবং এখনও পর্যন্ত যেসব আসামীদের গ্রেফতার করা হয়নি তাদের গ্রেফতার সেই সাথ গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে রাজশাহী থেকে গ্রেফতার পলাতক আসামী রওশন আলীর মৃত্যুদন্ড কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি”।
পলাতক দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মান্নান মোল্লা, জালাল উদ্দিন ওরফে বাসার, বাকের, এবং জীবন। এসব আসামীদের গ্রেফতার ও রায় কার্যকরের মধ্যদিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কালিমামুক্ত করার দাবি নিহতদের পরিবার ও জেলাবাসীর।
এবি//দৈনিকদেশতথ্য//১৬.০২.২০২২//

Discussion about this post