অবশেষে নানা ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়েই পূর্ব নির্ধারিত সময়ের ৩মাস পেরিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রানের ক্যাম্পাস কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হোষ্টেলে গিয়ে উঠেছেন। এখনও প্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র
অসম্পূর্ন অবস্থায় থাকলেও শিক্ষা জীবনের স্পন্দন খুঁজে নিতে চান শিক্ষার্থীরা। তারা দীর্ঘদিনের বঞ্চনামুক্ত হতে পেরে উৎফুল্ল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের রহিমা আফসার ছাত্রীনিবাস এবং এবং রিফাত মিলন ছাত্রাবাসের কক্ষগুলি কানায় কানায় পূর্ন হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের আগমনে। এভাবেই বলছিলেন হোস্টেলে উঠা শিক্ষার্থীরা। তবে বিলম্বের কারন উল্লেখ করে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারদের অসহযোগিতা এবং আংশিক প্রকল্প বুঝে নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক গঠিত হস্তান্তর কমিটির সকলের সম্মতি না থাকায় দ্রুত হস্তান্তরে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কঠোর চাপ থাকলেও কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ছাত্রীনিবাসের সহকারী তত্ত্ববধায়ক সাবিহা পারভিন আখি বলেন, ‘নিজের বাড়িতেও একটা নতুন ঘর তৈরী করে প্রথমে উঠার সময় প্রয়োজনীয় নানা কিছুর ঘাটতি থাকে, আমাদের ক্ষেত্রেও বলতে পারেন তার ব্যতীক্রম নয়। বড় কথা হলো- অনেক প্রতিক্ষার পর কাঙ্খিত নিজের ক্যাম্পাসে আমরা আসতে পেরেছি এটাই বড় কথা। প্রয়োজনীয় যেসব ত্রুটি বিচ্যুতি আছে সেগুলিও এক সময় পূরন হয়ে যাবে। বর্তমান কুষ্টিয়া মেডিকেলের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম ব্যাচ পর্যন্ত সকল ছাত্রীর অনুকুলে সর্বমোট ২০৪টি সীটের মধ্যে মোট ১৬৪জন ছাত্রী সবাই নিজ নিজ কক্ষে বরাদ্দকৃত সীটে উঠেছেন।
একইভাবে রিফাত-মিলন ছাত্রাবাসের ৫১টি কক্ষের প্রতিটিতে ৪টি করে সীট হিসেবে মোট ২০৪ সীটের মধ্যে ১৩২জন ছাত্রের সকলের অনুকুলে সীট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে নিজ ছাত্রাবাসে উঠা ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী অনুজ কুমার রায় জনান। “তবে কক্ষের মধ্যে রিডিং টেবিলসহ এখনও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাবপত্র শিক্ষার্থীরা পায়নি। ঠিকাদাররা এখনও নাকি সেগুলি হ্যান্ডওভার করেনি বলে শুনছি”। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে আমরা শেষ সময়ে হলেও প্রানের ক্যাম্পাসের স্বাদ নিতে পারলাম এটাই বড় কথা। আমাদের আগে আরও ৫টি ব্যাচ এখান থেকে পড়াশুনা শেষ করে চলে গেছেন সীমাহীন কষ্ট যন্ত্রণা নিয়ে, আমরা
সেখান থেকে লাকি বলতে পারেন”।
২০১১ সালে অনুমোদন পাওয়া তিন বছরের নির্মাণ মেয়াদকে ১০বছরে পূর্ণ এবং ২শ ৭৫ কোটি টাকার প্রাক্কলন ব্যয় সম্প্রসারিত হয়ে ৬শ ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান প্রকল্প সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এবছরের শুরুতেই প্রাণের ক্যাম্পাসে ফেরানোর কথা ছিলো কুষ্টিয়া মেডিকেলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। নির্মানাধীন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ বুঝে নেয়ার জন্য গঠিত কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. আব্দুল মালেক জানান, “ছাত্রাবাস, একাডেমিক ভবন ও শিক্ষকদের ডরমিটরী গত ডিসেম্বরের মধ্যেই একাডেমীক কার্যক্রম শুরুর লক্ষে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো একাডেমিক ভবন, ছাত্র ও ছাত্রী হোষ্টেলের অবকাঠামো নির্মানের মূল কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু নানা কারণে হস্তান্তরযোগ্য করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সেজন্য বিলম্ব কিছুটা হচ্ছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ আনুষঙ্গিক মালামাল সরবরাহের কাজটি এখনও
অসম্পূর্ন রয়েছে”।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ নির্মান প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা: আমিনুল ইসলাম বলেন, অতীতে যা কিছুই হোক, আমরা আর পিছন ফিরে দেখতে চাই না। আমাদের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক কার্যক্রম মূল ক্যাম্পাসে শুরু করতে পারবেন এটা হবে আমাদের জন্য অনেক বড় প্রারম্ভিক অর্জন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবছর অক্টোবরের মাঝামাঝি ৬শ ৮২ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্পের ২য় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)র অনুমোদন লাভ করেছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্মানকাল মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পটির সকল নির্মান কার্যক্রম সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে কঠোর নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
প্রকল্পটির গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নযোগ্য কাজগুলি সম্পন্ন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪শ ৮৮ কোটি টাকা এবং বাকী ১শ ৯৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে একাডেমিক কার্যক্রমসহ আনুষঙ্গিক চিকিৎসা খাতের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয় বাবদ।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: দেলদার হোসেন বলেন, আমার মন্তব্য জানতে চাইলে বলবো- কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সুচনা হলো। সবশেষ কথা হলো- আমরা মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা মনোরম পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারব এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সিমাহীন অনিয়ম দুর্ণীতি, সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগের অব্যবস্থাপনা ও অস্বচ্ছতার সাথে যুক্ত স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবে মুখ থুবড়ে পড়া নির্মানাধীন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ প্রকল্পটির ২য় ডিপিপি অনুমোদনের জন্য গতবছর একনেক সভায় উপস্থাপন করা হলে একনেক সভাপতি প্রধানমন্ত্রী ক্ষব্ধ হন এবং আইএমইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই থেকে প্রকল্পের চলমান নির্মান কাজ সম্পূর্নরূপে বন্ধ ছিলো।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//৩১ মার্চ, ২০২২//

Discussion about this post