Saturday, 5 July 2025
🕗
দৈনিক দেশতথ্য
Advertisement
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় খবর
  • স্বদেশ খবর
  • বিদেশি খবর
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • কৃষি
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • ধর্ম
  • আইটির খবর
  • লাইফস্টাইল
    • ভ্রমণ তথ্য
  • সম্পাদকীয়
    • মতামত
  • অন্যান্য
    • প্রাপ্ত বয়ষ্কদের পাতা
    • সাহিত্য ও সংষ্কৃতি
    • স্মৃতিচারণ/স্মরণ
    • ফটো গ্যালারী
  • ই-পেপার
No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় খবর
  • স্বদেশ খবর
  • বিদেশি খবর
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • কৃষি
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • ধর্ম
  • আইটির খবর
  • লাইফস্টাইল
    • ভ্রমণ তথ্য
  • সম্পাদকীয়
    • মতামত
  • অন্যান্য
    • প্রাপ্ত বয়ষ্কদের পাতা
    • সাহিত্য ও সংষ্কৃতি
    • স্মৃতিচারণ/স্মরণ
    • ফটো গ্যালারী
  • ই-পেপার
No Result
View All Result
দৈনিক দেশতথ্য
No Result
View All Result

ছোটগল্প: কুয়াশা

গাজীপুর অফিস by গাজীপুর অফিস
02/05/2022
in সাহিত্য ও সংষ্কৃতি
Reading Time: 1 min read
0
ছোটগল্প: কুয়াশা
Share on FacebookShare on Twitter Share on E-mail Share on WhatsApp

ছোটগল্প: কুয়াশা
নেহাল আনোয়ার: সিহাবের চাচাতো বোনের বিয়ে। বাসা থেকে বড়মামাকে দাওয়াত দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছিল সিহাবের ওপর। তখন মোবাইল ফোনের ব্যবহার না থাকায় সরাসরি যেতে হবে। তাই সকাল সকাল ঈশ^রদীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হবে সিহাবকে। বাসা থেকে নানার সাথে বেরিয়ে সিহাব পোড়াদহ রেলস্টেশনে পৌছালো। সিহাবকে ওর নানা স্টেশন মাষ্টারের সাথে পরিচয় করে দিয়ে এসেছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেন এসে গেল স্টেশনে। স্টেশন মাষ্টার একটি ভালো সিটে ওকে বসিয়ে দিয়েছিলো এবং টিটি সাহেবের কাছে বলে দিয়েছিলো ওকে স্টেশনে নামিয়ে দিতে। সিহাব যখন স্টেশনে নামলো তখন সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেছে। এই প্রথম এই শহরে আসা। কিছুক্ষণ ভেবে একজন রিকশাওয়ালকে জিজ্ঞেস করাতে রিকশাওয়ালা চিনতে পারলো। এমনকী সিহাবের মামাকেও চিনতে পারলো। সিহাব রিকশা থেকে নেমে মামার বাসার গেটে কলিং বাজাতে বাজাতে মনে মনে গুন গুন করে গান ধরেছে – ‘দরজা খুইলা টেখুম যারে করুম তারে বিয়া / আমি বউ সাজাইয়া নিয়া যামু টোপর মাথায় দিয়া’। গান শেষ হতে হতে না হতেই সিহাবের মামাতো বোন কুয়াশা এসে দরজা খুলে দিলো। আরে ভাইয়া তুমি ? ভিতরে আসো বলে কুয়াশার পিছনে পিছনে যাচ্ছে সিহাব, আর ভাবছে গানের কথা গুলো যদি সত্যি হতো তাহলে তার জীবনে আর চাওয়া পাওয়ার কিছুই থাকতো না।
মামা-মামি সিহাবকে দেখে খুব খুশি হলো। হালকা নাস্তা দিয়ে মামি বলল, তুমি একটু অপেক্ষা করো, আমি ভাত দিচ্ছি। সিহাব নাস্তা খেয়ে মামার সাথে গল্প করতে করতে মামী ভাত খেতে ডাকলেন। সিহাব একাকী ভাত খেতে আগ্রহ দেখালো না। কারন তার মনের মধ্যে যে কল্পনা বাসা বেঁধেছে তা তো কেউ বুঝতে পারলো না। সে ভেবে নিলো, একাকী ভাত খেতে বসলে তো আর কুয়াশার সাথে বসা যাবে না। তাইতো সে ওছিলা করে বললো, যখন সবাই খায় তখন খাবো মামি। নাস্তা যা করেছি, তাতে খাবার পরে খেলেও হবে। মামি তাতেই সায় দিলো।
মামাতো ভাইদের সাথে সিহাব বাইরে বের হলো। বাজার থেকে আসতে যতো দেরি হচ্ছে মনের মধ্যে ছটফটানি ততই বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভাইদেরতো বলতে পারছ না যে, চলো তাড়াতাড়ি বাসায় যাই। বাজারে গিয়ে ভাইদের সাথে চা বিস্কুট খেয়ে ঘন্টা খানেক পরে বাসায় ফিরে এলো।
রাতের খাবার খেতে বসলো সকলেই একসাথে। মামা আর মামাতো ভাই সকলে বসাতে কুয়াশার আর বসা হলো না। সিহাব একটু চালাকি করে বলল, যদি জায়গা না হয় আমি একটু পরে বসি। কিন্তু সে সুযোগ তার হলো না। সে যে আজকের অতিথি। তাই মামা তাকে নিয়ে বসে পড়লো। খাবার খাওয়া শেষ হলে সকলেই যখন ড্রইং রুমে বসল, সিহাব তখন মামার কাছে বিয়ের বিষয়ে বিস্তারিত বললো। কবে বিয়ে, কী ব্যাপার ইত্যাদি ইত্যাদি। মামা, মামিকে বললেন,-তুমি কী বলো ? মামী বললেন, তুমি যা ভালো মনে করো তাতে আমার কি আপত্তি থাকে? মামা সিদ্ধান্ত নিলেন সকলেই যাবো। কিন্তুআগামী পরশুদিন পর্যন্ত আমার অফিস করতে হবে। এ কয়দিন সিহাব থাক, একসাথে যাওয়া যাবে। মামী বললেন আমারও ভালো হবে। কারণ নতুন বছরের খাতায় নাম গুলি তুলে স্কুলের কাজ শেষ করে গেলে ভালো হবে। সিহাব এতে খুশিই হলো।কুয়াশার কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ যদি পাওয়া যায়। তাহলে তার মনের কথা বলতে পারবে। কিন্তু স্বাভাবিক কথাবার্তা ছাড়া আর কোন কথা বলার সুযোগ হলো না সিহাবের। কিন্তু এ কয়দিনে তার সাথে মোটামুটি কথাবার্তা হয়েছে।
বিয়ের অনুষ্ঠানে এসে মামারা সিহাবদের বাড়িতে কয়েকদিন থাকবে চিন্তাভাবনা করে এসেছিলো। মামারা আসার পর সিহাব সুযোগ খুঁজছিল কখন কুয়াশাকে একাকী পাবে। কুয়াশাকে তার মনের কথাটি বলা হয়নি। কিভাবে বলবে, সে ভাবতে থাকলো। সুযোগের অপেক্ষায় থাকা মানুষের ঠিকই সুযোগ এসে যায়। সিহাবেরও সে সুযোগ এসে গেল। বাগানে সিহাব পেয়ারা গাছে উঠে পেয়ারা খাচ্ছিল। এমন সময কুয়াশা এসে হাজির।
-ভাইয়া আমাকে কয়টা পেয়ারা দাও না।
– তুমি পেয়ারা খাবে?
– হ্যাঁ, ভাইয়া।
সিহাব গাছ থেকে পেয়ারা নিয়ে নেমে এলো। ইচ্ছে করলে সে উপর থেকে পেয়ারা গুলি দিতে পারতো, কিন্তু তা দিলো না। তার যে অনেক কথা বলার আছে। পেয়ারাগুলি কুয়াশার হাতে দিলো। কুয়াশা গাছের উপরের দিকে একটি পেয়ারা দেখিয়ে বলল, ভাইয়া তুমি কি ঐ পেয়ারাগুলি পারতে পারবে ? পেয়ারাগুলি দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। সিহাব বললো, তুমি চাইলে ঐ পেয়ারাগুলি কেন, আমার সাধ্যের মধ্যে থাকলে আমি আরো কিছু তোমার জন্য এনে দিতে পারি।
-ভাইয়া বুঝলাম না।
– আচ্ছা থাক, তুমি ও সব বুঝবে না।
-কেন আমি আমি বুঝবো না ?
– আমি এখনো ছোট খুকি আছি যে, আপনার কথা বুঝতে পারবো না।
– আমি কী করে তোমাকে বলবো বুঝতে পারছি না।
-ভাইয়া কী এমন কথা যা আপনি আমাকে বলতে এমন লাজুক লতার মতন হয়ে যাচ্ছেন।
– তুমি যদি মামা-মামি কে বলে দাও।
-আপনি কী বলবেন, যা মা-বাবাকে বললে সমস্যা। আচ্ছা ঠিক আছে আমি কথা দিচ্ছি, যে আপনি যা বলবেন তা আমি মা-বাবাকে বলবো না।
-সিহাব এবার কিছুটা আশ^স্ত হয়ে বললো, কুয়াশা তোমাকে প্রথম দিন দেখে তোমার প্রতি আমার কেমন যেন দুর্বলতা বেড়ে গেছে।
আপনি যদি কাল বেলা এগারোটার দিকে আমাদের বাসায় আসেন, তাহলে ও আপনার সাথে কথা বলতে পারবে।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কাল তোমাদের বাসায় যাবো।
কুয়াশার আর বুঝতে বাঁকী নেই, সিহাব ভাইয়া কী বললো। কিন্তু কী বলবে কুয়াশা? কুয়াশা মনে মনে ভাবছে, এ কয়দিনে তারও তো কিছুটা সিহাবকে ভালো লেগে গেছে। আর এজন্যই তো পেয়ারা খাওয়ার জন্য নয়, সিহাব ভাইয়ার সাথে একটু গল্প করার জন্য তাকে খুঁজতে খুঁজতে বাগানে আসা। পেয়ারা খাওয়া তো ছিলো তার ওছিলামাত্র।
-ভাইয়া, তুমি যা বললে, তুমি কি ভেবে বললে?
– হ্যাঁ, আমি ভেবে বললাম। আমার ভাবনার মধ্যে কোন গলদ নেই।
-ভাইয়া আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসলাম। আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেলাম। যদি তখন মা-বাবা কিংবা আপনার মা-বাবা রাজী না হয় তাহলে তখন কী করবেন?
– আমরা নিজেরাই তখন আমাদের মতো করে সব সাজিয়ে নেব। সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরাই নিবো।।
-ভাইয়া তা কি হয়? তাহলে দুজনের পরিবারের মধ্যে যে ব্যবধান তৈরী হবে, তা আপনি কী করে মেটাবেন। আমরা যে সারাজীবন অপরাধী হয়ে যাবো দু’পরিবারের কাছে।
কুয়াশার কথাগুলি যুক্তিপূর্ণ। কিন্তু মন যে মানে না। মনের মধ্যে যে ঢেউ খেলছে, তা সে কী করে দূর করবে।
সিহাব এবার ভাবগম্ভীর ভাবে বললো, আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি একটু ভেবে দেখো। আমি এ কয়দিনে তোমাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি। তোমাকে না পেলে আমার জীবনটা অনেকটা অন্ধকারের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। কাল কথা হবে বলে কুয়াশা বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। সিহাব বসে বসে একাকী ভাবছে, কী করা যায়? তার মনের মধ্যে কুয়াশার কথাগুলি গেঁথে গেছে। যে মেয়ে এতো সুন্দর করে কথা বলতে পারে, সে মেয়ে অবশ্যই জ্ঞানী। ওর জ্ঞানের গভীরতা তাকে আরো বেশি মুগ্ধ করে ফেললো।
পরের দিন সিহাবের সাথে কুয়াশার একই জায়গা দেখা হলো। দুজনে কথা বলতে বলতে সিহাব বললো, কী ভাবলে?
-আপনি কী ভাবলেন? আমি তো আপনাকে সব বললাম। আমি আপনাকে ভালোবাসিনি তা কিন্তু বলিনি। আমিও আপনাকে এ কয়দিনে ভালোবেসে ফেলেছি। আপনি যা বললেন, আমি তা বলতে পারিনি। কিন্তু যা করবেন ভেবে চিন্তে করাই ভালো। আমরা যখন আমাদের ভালোবাসার নৌকা নিয়ে অনেকদূর চলে যাবো, তখন যদি আমাদের তীরে ফিরে আসতে হয়, তাহলে সেটা হবে আমাদের জীবনে যন্ত্রণার কঠিন ইতিহাস। তারচেয়ে সেই ভালো, আমাদের মধ্যে যে সামান্য সময়ের ভালোলাগা, ভালোলাগাই থেকে যাক। ভালোবাসায় রুপান্তর করার দরকার নেই।
-কুয়াশা, আমি তোমার কথাগুলি নিয়ে অনেক ভেবেছি। তোমার কথা অবশ্যই ঠিক আছে। কিন্তু বিশ^াস করো, আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি। তোমাকে যে আমি সত্যি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি। ভবিষ্যত পরে ভাববো। তেমন কোন পরিস্থিতি হলে,আমার তোমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমরাই নিবো।
কুয়াশা বললো, কাল আমরা চলে যাবো। নতুন বছরে মায়ের ক্লাস শুরু হবে। আর এজন্য মা থাকতে চাচ্ছে না। আমার মনের মধ্যে যে ঝড় আপনি তুললেন, জানি না কতদিনে থামবে।
কুয়াশারা চলে গেলো। যাবার সময় মামাদের স্টেশনে আগানোর দায়িত্ব সিহাবকেই দেওয়া হলো। সিহাব মনে মনে ভাবলো, ভালোই হলো। স্টেশন পর্যন্ত পৌছে দিয়ে মামা- মামিদের বিদায় দিয়ে কুয়াশার দিকে তাকালো সিহাব। আবেগঘন স্মৃতির অন্তরালে ভালোবাসার মানুষকে বিদায় দিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু বিদায় দিতে হলো। কুয়াশা সিহাবের দিকে লক্ষ্য করে বললো, আসি ভাইয়া। দোয়া করো আমাদের জন্য। আবার দেখা হবে। যদি পারো বাসায় এসো।

দু’মাস কেটে গেলো। সিহাবের মনটা ছটফট করছে কুয়াশার জন্য। কিন্তু কী করবে? ভাবনার সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে ভাবলো, একটা চিঠি লিখে পাঠাই। দেখা না হোক, অন্তত কথার মাধ্যমে হলেও মনটাকে একটু শান্ত করা যাবে। সাথে সাথে একটি চিঠি লিখে পাঠিয়ে দিলো কুয়াশার কলেজের ঠিকানায়। বাসার ঠিকানায় চিঠি দিলে বিপদ হতে পারে, তাই সে কলেজের ঠিকানায় চিঠি লিখলো। পিয়ন চিঠি দিয়ে এলো অধ্যক্ষ মহোদয়ের কাছে। কুয়াশার নাম দেখে অধ্যক্ষ মহোদয় কুয়াশার মায়ের কাছে কলেজের পিয়নকে দিয়ে চিঠি পাঠিয়ে দিলেন। কুয়াশার মা যে স্কুলে চাকুরী করে, সে স্কুল আর কলেজ পাশাপাশি। কুয়াশার মা চিঠিটা খুলে পড়লেন। চিঠির ভাষা তাকে বুঝিয়ে দিলো কুয়াশা এবং সিহাবের মধ্যে ভালোবাসা দানা বেঁধেছে। তিনি চিঠির কথা কাউকে বললেন না। মনে মনে স্থির করলেন, মেয়েকে বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। চিঠির কথা ওর বাবাকে বললে, মামা-ভাগ্নের মধ্যে সম্পর্কের বাঁধন হালকা হয়ে যাবে। তিনি বাড়িতে এসে রাতে কুয়াশার বাবার সাথে গল্পের ছলে বললেন, মেয়ের বয়স হচ্ছে, ওকে বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দেখতে দেখতে ভালো কোন ছেলে পেয়ে গেলে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। কুয়াশার বাবা বললেন, আচ্ছা দেখা যাবে।
আরো একমাস চলে গেলো কোন চিঠির উত্তর আসলো না। চিঠির উত্তর না পেয়ে কুয়াশার জন্য সিহাবের অস্থিরতা বেড়ে গেলো। মনে হচ্ছে এখনই গিয়ে ওর সাথে দেখা করে আসি। কিন্তু কোন ওছিলায় যাবে? মনের অস্থিরতা যখন বেড়েই যাচ্ছে, তখন না হয় কলেজে গিয়ে দেখা করে আসি।
পরেরদিন সকালের ট্রেনে রওয়ানা হলো। বেলা এগারোটার দিকে কলেজ গেটে পৌঁছালো। কিন্তু কলেজের ভিতরে যাওয়া তো সম্ভব নয়। কলেজ গেটের পাশেই দোকানে অপেক্ষা করতে লাগলেন। কখন যে কলেজ ছুটি হবে? এমন চোখে পড়লো কুয়াশা বাইরে দিকে আসছে ওর কয়েকজন বান্ধবীসহ। ক্লাসের ফাঁকে ওরা কিছু কিনবে এ আশায় এসেছে। দোকানদারের সাথে কথা বলতেই সিহাব কুয়াশার কন্ঠস্বর শুনতে পেলো। আস্তে আস্তে দোকানের কাছে গিয়ে মৃদুস্বরে ডাকলো, কুয়াশা কেমন আছো? কুয়াশা চেয়ে দেখে সিহাব।
-ভাইয়া, কেমন আছো?
-আমি কেমন আছি তা বলতেই তো এখানে এসেছি।
– মানে?
– মানে,আমি তোমার সাথে কথা বলার জন্য এসেছি। চলো কোথাও গিয়ে বসি।
কুয়াশা সব বান্ধবীদের সাথে সিহাবকে পরিচয় করিয়ে দিলো, বললো, আমার ফুফাতো ভাই।
শুধু নন্দিনীকে রেখে সবাইকে বললো, তোরা যা আমি আসছি।
নন্দিনীদের বাসা কলেজের পাশেই। নন্দিনী কুয়াশার খুব কাছের বান্ধবী। নন্দিনীকে কুয়াশা সব বলেছে। তাই ও বুঝতে পেরেছে। নন্দিনী কুয়াশাকে বললো, চল আমাদের বাসায়। সিহাবকে সাথে নিয়ে নন্দিনী আর কুয়াশা নন্দিনীদের বাসায় গেলো। বাসায় নন্দিনী আর ওর মা থাকে। নন্দিনীর বাবা ঢাকায় থাকেন। নন্দিনীর মাও একটি বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষিকা। তিনিও স্কুলে, সেজন্য বাসায় এখন কেউ নেই।
নন্দিনীদের বাসায় যেতে পাঁচমিনিট লাগলো। নন্দিনী ওদেরকে তার নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বললো, তোরা গল্প কর, আমি আসছি বলে নন্দিনী চা তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।দ’জনের মধ্যে তখন শুরু হলো, এ কয়দিনের ব্যবধানের কষ্টের কাহিনী।
-কুয়াশা তুমি চলে আসার পর আমি যে কীভাবে দিন পা করছি তা বলতে পারবো না। আমার বুকের ভেতরে তোমার উপস্থিতি সব সময়। আমি তোমাকে ছেড়ে কী করে বেঁচে থাকবো বুঝতে পারছিনা। আমার অন্তরে সর্বদা তোমার স্মৃতি খেলা করে। তোমার বিহনে আমি কী করে ভালো থাকবো।
-ভাইয়া, আমি আপনাকে ভাই হিসেবে জেনে এসেছি। আপনি আমার মনের মধ্যে ভালোবাসার চারাগাছ যেদিন থেকে রোপন করেছেন, সেদিন থেকেই মনে হচ্ছে আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি। আমি যে আপনাকে ভুলে থাকতে পারছি না। আপনি আপনার কথা যতো সহজে বলতে পারেন, আমি তত সহজে বলতে পারি না। আপনি যদি আমাকে নিয়ে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন, তাহলে আমাকে ভালোবাসার আশ্বাস দিবেন। আর যদি পরে পরিবারের কথা বলে দূরে চলে যান, তাহলে এখনই আপনি দূরে চলে যান। আমাকে নিয়ে মিথ্যে মায়ায় জড়ানোর দরকার নেই।
-কুয়াশা, তোমাকে নিয়েই আমি ভালোবাসার সাম্পান সাজাতে চাই। আমি তোমাকে নিয়েই তৈরি করতে চাই আমার ভবিষ্যত। তোমাকে ছাড়া আমি কী করে বাঁচবো বলতে পারো?
দুজনে অনেকক্ষণ কথা হলো। এরমধ্যে নন্দিনী চা নিয়ে এসেছে। তিনজনে চা খেয়ে বিদায় নেওয়ার পালা। সিহাবকে ওখান থেকে বিদায় দিয়ে নন্দিনী আর কুয়াশা কলেজে চলে গেলো। সিহাব ফিরে এলো স্টেশনে। পিছনে পড়ে থাকলো কুয়াশার চাদরে ঢাঁকা কুয়াশার স্মৃতি।
স্টেশনে পৌঁছেই ট্রেন পেয়ে গেল। আসতে মন চাই না, তবু আসতে হয়। পোড়াদহ স্টেশনে আসতে আসতে রাত হয়ে গেলো। বাসায় ফিরতে একটু রাত হওয়াতে মা জিজ্ঞেস করাতে বললো, এক বন্ধুর বাসায় ছিলাম, বলে নিজের রুমে চলে গেলো সিহাব।
স্বাভাবিক হতে সময় লাগলো। বারবার মনে হচ্ছে কুয়াশার কথা। কিন্তু কাকে বলবে তার দুঃখের কথা। একবার ভাবলো মাকে বলি। আবার পরক্ষণেই ভাবলো মাকে বললে, মা যদি রেগে যায়, তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।
সময় গড়িয়ে যেতে লাগলো। সুযোগ পেলেই সিহাব চলে যেতো কুয়াশার কলেজে। কলেজে দেখা করে তাদের মনের কথা বলে হালকা হয়ে চলে আসতো। কিন্তু মন হালকা না হয়ে মনটা যে আরো বেশি কষ্ট পেতো, সে কথা পরে বুঝতো। তারপর ও দেখা হলে একটু ভালোলাগতো। ভালোলাগার অনুভুতি থেকে জন্ম নিতো ভবিষ্যত পরিকল্পনা। একদিন কুয়াশাকে সিহাব বললো, চলো দুজনে বিয়ে করে ফেলি। কুয়াশা বললো, মা- বাবার অমতে এ ভাবে বিয়ে করলে কী লাভ? বিয়ে যদি করতে হয়, তাহলে মা-বাবাকে রাজি করেই বিয়ে করতে হবে।
সিহাব বললো, তাহলে বলো, আমি কী করে বিশ্বাস করবো, তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করবে?
-আমি আপনার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারবো। আপনি পারবেন তো? কাপুরুষের মতো পালিয়ে যাবেন নাতো?
-আমি কখনোই পালিয়ে যাবো না। বিশ্বাস না হয় তাহলে আসো দুজনে কাবিন নামায় স্বাক্ষর করে রাখি। যদি কোনদিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, সেদিন না হয় এ কাবিন নামায় মা-বাবাকে দেখাবো।
-কোথায় আপনার কাবিন নামা?
সিহাব কাবিন নামাটা সাথে নিয়েই গিয়েছিল। কারণ তার মনের মধ্যে ছিলো যে কাবিন নামায় সই করাতে পারলে আর কোনদিন সে চলে যেতে পারবে না। এজন্য সে কাবিন নামাটা সাথে নিয়ে ঘুরতো। যেদিন সুযোগ পাবে, সেদিন কুয়াশাকে দিয়ে স্বাক্ষর করাবে। কিন্তু আজ কুয়াশা তার সুযোগ নিজেই করে দিলো। সুযোগকে সিহাব হাতছাড়া করলো না। কুয়াশাকে দিয়ে স্বাক্ষর করালো, নিজেও স্বাক্ষর করলো। কাবিন নামাটা স্বাক্ষর করে ভাঁজ করে পকেটে রেখে দিলো। তার মনে হলো, সে বুঝি একটু শান্তি পেলো। আসলে কতটুকু শান্তি পেলো তা তো একমাত্র বিধিই জানে।
এদিকে মেয়ের বিয়ের জন্য কুয়াশার মা কুয়াশার বাবাকে তাগিদ দিতে থাকলো। সত্যি সত্যিই একদিন মেয়ের জন্য কুয়াশার বাবা পাত্রের সন্ধান পেয়ে গেলেন। বাসায় এসে কুয়াশার মাকে বললেন, একটি ছেলের সন্ধান তিনি পেয়েছেন। তারা আগামি মাসে দেখতে আসতে চান। যদি পছন্দ হয়, তাহলে বিয়ে করবেন। মেয়ের বিয়ের কথাই মা একটু স্বস্তির নিঃশ^াস ফেললেন। তার মনের মধ্যে যে কষ্টেরা বাসা বেঁধেছে তা হালকা হবে।
দেখতে দেখতে সময় এসে গেলো। মা আগেই মেয়েকে কিছুই বললেন না। তাদের আসার আগের দিন কুয়াশাকে মা ডাকলেন,পাশে বসালেন, বললেন মারে আগামিকাল ছেলে পক্ষ তোকে দেখতে আসবে। যদি পছন্দ হয়, তারা বিয়ে করবেন। ছেলেটি ভালো একটা চাকুরী করেন। তোর বিয়ে হলে ভালোই হবে। কুয়াশা মায়ের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো। মাকে বললেন, তুমি আমাকে আগে বলোনি কেন? আমি এখন বিয়ে করবো, কী করবো না, তাতো আমাকে একবার জিজ্ঞেস করতে পারতে ?
কুয়াশার মা বললেন, মারে আমি সব জানি। তুই কেন বিয়ে বসতে চাচ্ছিস না ?
-মা, তুমি কী জানো?
-তুই যা চাচ্ছিস তা কেউ মেনে নেবে না। তোর আব্বু জানতে পারলে তুলকালাম কান্ড ঘটে যাবে। বরং মনের কথা মনের মধ্যে রেখে বিয়েতে রাজী হয়ে যা। আমি তোর বাবাকে কিছুই বলিনি। তোর কাছে সিহাব যে চিঠি লিখেছিলো, তা তোমার কলেজের অধ্যক্ষ আমার হাতে পিয়ন দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলো। আমি তোকে কিছুই বলিনি। তুমি লজ্জা পাবে বলে, আমি সব চেপে গেছি। তোর বাবাকেও কিছুই বলিনি। সে জানতে পারলে সমস্যা বেড়ে যাবে এই ভয়ে আমি সব গোপন করেছি। আমি জানতাম তোর সম্পর্ক কোনদিন দু’পরিবার মেনে নেবে না।
পরেরদিন ছেলের পক্ষ কুয়াশাকে দেখতে এলো। কুয়াশাকে দেখে তাদের পছন্দ হলো। তারা বাড়িতে গিয়ে কথা বলে পরে জানাবে বলে চলে গেলো। কুয়াশা যথারীতি কলেজে গেলো। নন্দিনীকে সব বলল। নন্দিনী সব শুনে ছেলেকে চিনে ফেললো। নন্দিনী বললো, তুই কি ঐ ছেলের সাথে কথা বলতে চাস?
-নন্দিনী আমি কথা বলতে চাই। আমি ওকে সব বলতে চাই। সব শোনার পর সে রাজী না হলে তো বিয়ে হবে না।
নন্দিনীদের বাসা থেকে কয়েক বাসা দুরে ঐ ছেলের বাসা। নন্দিনী বিকেলে ঘুরতে ঘুরতে ওদের বাসার কাছে গেলো। ছেলেটির নাম সেলিম। সেলিমকে দেখে নন্দিনী বললো, ভাইয়া, আমার বান্ধবীর সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে আমি জানি। আমার বান্ধবী আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই। ওর আপনাকে কিছু বলার আছে। আপনি যদি কাল বেলা এগারোটার দিকে আমাদের বাসায় আসেন, তাহলে ও আপনার সাথে কথা বলতে পারবে।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কাল তোমাদের বাসায় যাবো।
বিরহেই প্রেম বেশিদিন স্থায়ী হয়, এ সান্ত্বনা নিয়েই আজো দুজন দুজনকে ভালোবাসে। দু’জনের মনের মধ্যে সকালের কুয়াশার মতো সামান্য সময়ের ভালোবাসাকে বুকের মাঝে পুষে রেখে কাটিয়ে যেতে চাই সারাটি জীবন।
পরেরদিন নন্দিনীদের বাসায় সেলিম গেলো। কুয়াশা আগেই গিয়েছিলো। কুয়াশা বললো, আপনি যদি কিছু না মনে করেন তাহলে আমি কিছু কথা বলতে চাই। আপনার কাছে আমার একটি অনুরোধ, আমি যা আপনাকে বলবো তা আপনি আমার মা -বাবকে বলবেন না।
-আচ্ছা আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আমি কাউকে বলবো না।
-আপনার কাছে আমার একটি অনুরোধ, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না। আমি একজনকে ভালোবাসি। আমি তাকে না পেলে কোনদিন বিয়ে করবো না। আপনি আমাকে বিয়ে করলে, আমি আপনাকে সুখি করতে পারবো না। তখন আপনার খুব খারাপ লাগবে। কিন্তু আপনি আমার মা-বাবাকে বলবেন যে, আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি। তা না হলে আমার মা-বাবা জোর করে হলেও আমাকে আপনার সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে। অসুখি দাম্পত্য জীবনের চেয়ে সারাজীবন বিয়ে না করেই থাকাই ভালো। আপনার কাছে একজন বোন হিসেবে এ আমার একান্ত অনুরোধ।
সম্পর্কের কথা জানার পর আর তাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। পরেরদিন সেলিম তার মা-বাবাকে বললো মেয়েটিকে দেখে আমার ততটা পছন্দ হয়নি। আমি ঐ মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছি না। তোমরা ওদেরকে জানিয়ে দাও।
যথারীতি তাদের জানিয়ে দেওয়া হলো। আপাতত হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো কুয়াশা। কয়েকদিন পর সিহাব এলো কলেজ গেটে দেখা করতে। প্রতিবারের মতো নন্দিনীদের বাসায় বসলো। কুয়াশা সব খুলে বললো। কুয়াশা বললো, ভাইয়া তুমি যাই করো তাড়াতাড়ি করো। তা না হলে মা জেনে গেছে আমার তোমার সম্পর্কের কথা। যে ভাবেই হোক আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে।
-কুয়াশা, মামী কী করে জানলো ?
-ভাইয়া, আপনি যে চিঠি দিয়েছিলেন তা পিয়ন মায়ের কাছে দিয়ে গিয়েছিলো। মা কাউকে বলেনি। আব্বু জানতে পারলে আমাকে মেরেই ফেলতো।
-কুয়াশা চলো, আমরা বিয়ে করে ফেলি।
-ভাইয়া, বিয়ে না হয় করলাম। আমরা কি তাতে সুখি হতে পারবো? দু’পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের যে ফাটল ধরবে তা আমরা কী করে মেরামত করবো? দু’টি পরিবারের মধ্যে যে ভাঙ্গন ধরবে তা কোনদিন জোড়া লাগবে না। আমরা আমাদের সুখের জন্য কি এত বড় ক্ষতি করতে পারি?
-কুয়াশা, তাহলে তুমিই বলো আমি কী করবো? আমি যে তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। আমার জীবনে তোমার উপস্থিতি আমাকে পথের ঠিকানায় পৌঁছে দেবে। তোমাকে ছাড়া যে আমার জীবন বৃথা।
-ভাইয়া, আপনি ফুফুকে রাজী করাতে পারলে আমার মনে হয়, আমার আব্বু কোন কথা বলবে না। কারণ ফুফুকে আব্বু খুবই সম্মান করে। আপনি গিয়ে ফুফুকে বোঝানোর চেষ্টা করেন।
-আচ্ছা ঠিক আছে। দেখি কী করা যায়। সেদিনের মতো দুজনের কথা সংক্ষিপ্ত করে বিদায় নিয়ে এলো সিহাব।
পথে আসতে আসতে ভাবছে, মাকে কী করে রাজী করাবে? মাকে রাজী করাতে পারলে বাবা এবং মামাকে রাজী করানো সহজ হয়ে যাবে। ভাবতে ভাবতে বাড়িতে আসলো। সুযোগ খুঁজছে কখন মাকে একাকী পাবে। দু’তিনদিন পর মা সিহাবকে বললো, বাবা আজ কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছি, তুই কী যেনো ভাবছিস। ঠিক মতো খাবার খাচ্ছিস না। তোর কী শরীর খারাপ?
-না মা, শরীর খারাপ না। যে সমস্যা তা আমি তোমাকে কী করে বলি বুঝতে পারছি না। তুমি যদি আবার বকাবকি করো।
-আচ্ছা বল, আমি তোর সমস্যা শুনি, দেখি কোন সমাধান করতে পারি কিনা।
-মা তোমাকে কথা দিতে হবে তুমি কিন্তু বাবাকে আগেই কিছু বলবে না। তুমি যদি মনে করো, তাহলে বাবাকে বলবে। তা নাহলে দরকার নেই বলার।
-ঠিক আছে বল।
-মা, আমি কুয়াশাকে ভালোবাসি। আমি সত্যিই কুয়াশাকে না পেলে আমার জীবন বৃথা হয়ে যাবে। মা, তুমি আমার জন্য সব কিছু করতে পারো। আমার জন্য এ কাজটুকু করো। তা না হলে যে আমার জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে। তুমি যদি মত দাও, তাহলে মামা এবং বাবা রাজী হবে।
-মা বললেন, কুয়াশাও কী তোমাকে ভালোবাসে?
-মা, কুয়াশা তোমাকে বলতে বলেছে। ও বলেছে তুমি রাজী হলে ওর মা-বাবা রাজী হবে। তোমরা মতামত না দিলে দু’পরিবারের সম্পর্ক ভেঙে ও বিয়ে করতে রাজী হবে না।
-আচ্ছা আমি তোর আব্বার সাথে কথা বলি।
-মা, তুমি বললে কী আব্বা রাজী হবে না?
-আচ্ছা আমি বলে দেখি। এ সব বিষয়ে বেশি জোর করা ঠিক হবে না। বিয়ে শুধু নিজেদের সুখ নয়। বিয়ে হলো দুটি পরিবারের মধ্যে বন্ধন স্থাপন। সে বন্ধন যদি না হয় তাহলে বিয়ে করে কী লাভ?
সিহাবের মা সিহাবের বাবাকে বললে, তিনি বললেন সিহাবের মা, এ হয় না। আমি ওর মামাকে বললে সে যদি রাজী না হয়, তাহলে আমি অপমানিত হবো। আর আমিও চাই না তুমি তোমার ভাইকে এ বিষয়ে বলবে। সে এ বিয়েতে রাজী হবে না। আত্মীয়ের মধ্যে আত্মীয়তা দু’পরিবারে সম্পর্ককে অনেক দূরে নিয়ে যায়। এটা সম্ভব নয়। সিহাবের মা সিহাবের বাবাকে বুঝাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। ফিরে এসে সিহাবকে বললেন, তোমার বাবা এ বিয়েতে রাজী নয়। তুমি যদি মনে করো, নিজে নিজে এ বিয়ে করতে পারো। তবে সে ক্ষেত্রে এ পরিবার, এ সংসার থেকে চলে যেতে হবে।
সিহাব মাকে বললো, মা আমি তো এটা চাইনি। আমি তোমাদের মতামত ছাড়া কোনদিন এ বিয়ে করবো না। সিহাবের বুকের মধ্যে যে যন্ত্রনা শুরু হলো, তা বিধি ছাড়া আর কেউ জানেনা। বুকের কষ্ট বুকে ধরে সিহাব নিজের ঘরে গেলো।
পরেরদিন সিহাব কুয়াশার কলেজে গিয়ে দেখা করলো। নন্দিনীর বাসায় সেদিন আর গেলো না। কলেজ গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে দুজনে সব কথা বিনিময় হলো। সিহাব কুয়াশাকে সব বললো। কুয়াশাকে সিহাব বললো, চলো আমরা না হয় নিজেরাই বিয়ে করে ফেলি।
-ভাইয়া, তা হয় না। যদি সবাই রাজী না হয়, তা হলে আমাদের বুকের কষ্ট বুকে চেপে রেখে জীবন কাটাতে হবে। আমরা বিয়ে করলে দুটি পরিবার আমাদের কখনো মেনে নেবে না। আমাদের সুখের জন্য আমরা এটা করতে পারি না। আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিবেন।
– কুয়াশা, আমি তোমাকে ক্ষমা করলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? আমি তোমাকে কী করে ভুলে যাবো বলতে পারো?
কুয়াশার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সিহাব বাড়িতে ফিরে এলো। এদিকে সিহাবের বাবা সিহাবের জন্য বিয়ে ঠিক করতে লোক লাগিয়ে দিয়েছেন। বিয়ে দিয়ে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। সিহাবের বাবা নিজের সিদ্ধান্তে স্থির থাকলেন।
প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলো। মেয়ে দেখার কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। দেখতে দেখতে মেয়ের সন্ধান পেয়ে গেলেন সিহাবের বাবা। তিনি সিহাবের ভাইকে পাঠালেন মেয়ে দেখে আসতে। বড় ভাই এসে বললেন, মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে। সিহাবের বাবা বললেন, সিহাবকে দেখানো দরকার। তিনি সিহাবের মাকে বললেন, সিহাবকে মেয়ে দেখে আসতে বলো।
-সিহাব, তোর বাবা বড় ভায়ের সাথে গিয়ে তোকে মেয়ে দেখে আসতে বলেছে। মেয়ে পছন্দ হলে আজ্ই বিয়ে হবে।
-মা, আমার পছন্দ অপছন্দ আর কী দরকার? আমি যাকে পছন্দ করলাম তার সাথে তোমরা আমার বিয়ে বিয়ে দিলে না। তা হলে আমার দেখার আর কী দরকার? তোমরা যেখানে বলবে, সেখানেই আমি বিয়ে করবো। এতে আমার আর কোন আপত্তি নেই।
সেদিন রাত্ইে বিয়ে হয়ে গেলো। অল্প কিছু বরযাত্রী গিয়ে বিয়ে দিয়ে নিয়ে এলো বাবা। বুকের ভেতর কষ্টের পাহাড় জমা করে সিহাব বিয়ে করে ঘরে আনলো নতুন বউ। বাসর রাতে বউকে সিহাব তার জীবনের সমস্ত ঘটনা বলে নিজের বুকটাকে হালকা করলো। তার বিশ্বাস, যদি সে পরে জানতে পারে তাহলে যে অশান্তির ঝড় উঠবে, তার চেয়ে এখনই তাকে বলা ভালো। নিজের বউযের সাথে মানিয়ে নিতে কয়েকদিন দেরি হলেও নিজেই মানিয়ে নিতেই হলো। সিহাবের বিয়ের খরব কুয়াশার কাছে পোঁছালে কুয়াশা কয়েকদিন একাকী ঘরের কোণে বসে কেঁদেছিলো। কুয়াশার কান্নারা ছাইচাপা আগুনের মতো ভিতরটাকে নীরবে পুড়িয়ে যাচ্ছিল। কুয়াশার যন্ত্রণা আর কান্নার শব্দেরা আজো একাকীই কাঁদে। কাছের মানুষকে কাছে না পাওয়ার বেদনা আজো দুজনা মুখোমুখি হলে দুজনকে পুড়িয়ে মারে। আজো সিহাব আর কুয়াশার মনে হয় মিলনে নয়, না পাওযার মাঝেই ভালোবাসাকে সারাজীবন মনের মাঝে স্থায়ী করে রাখা যায়। বিরহেই প্রেম বেশিদিন স্থায়ী হয়, এ সান্ত্বনা নিয়েই আজো দুজন দুজনকে ভালোবাসে। দু’জনের মনের মধ্যে সকালের কুয়াশার মতো সামান্য সময়ের ভালোবাসাকে বুকের মাঝে পুষে রেখে কাটিয়ে যেতে চাই সারাটি জীবন।

জামাল, ২মে,২০২২

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন
Previous Post

কুষ্টিয়ায় সিজিবির ঈদ সামগ্রী বিতরণ

Next Post

আরটিভি সুফিয়ানা ২০২২, চ্যাম্পিয়ন হলেন কুষ্টিয়ার ইতি ইব্রাহিম

Related Posts

কোটালীপাড়ায় কুম্ভমেলা
সাহিত্য ও সংষ্কৃতি

কোটালীপাড়ায় কুম্ভমেলা

কুড়িগ্রামে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী পালিত
সাহিত্য ও সংষ্কৃতি

কুড়িগ্রামে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী পালিত

কুমারখালীতে জাতীয় কবির ১২৬তম জন্মজয়ন্তী পালিত
সাহিত্য ও সংষ্কৃতি

কুমারখালীতে জাতীয় কবির ১২৬তম জন্মজয়ন্তী পালিত

Next Post
আরটিভি সুফিয়ানা ২০২২, চ্যাম্পিয়ন হলেন কুষ্টিয়ার ইতি ইব্রাহিম

আরটিভি সুফিয়ানা ২০২২, চ্যাম্পিয়ন হলেন কুষ্টিয়ার ইতি ইব্রাহিম

Discussion about this post

সর্বশেষ সংবাদ

ঘরে ঢুকে বৃদ্ধাকে কুপিয়ে স্বর্ণালংকার লুট

ঘরে ঢুকে বৃদ্ধাকে কুপিয়ে স্বর্ণালংকার লুট

অনিয়ম দুর্নীতি ঢাকতে নতুন কারসাজিতে ও ঠিকাদার ব্যর্থ!

অনিয়ম দুর্নীতি ঢাকতে নতুন কারসাজিতে ও ঠিকাদার ব্যর্থ!

জুড়ীর কৃতি সন্তান বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম

জুড়ীর কৃতি সন্তান বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম

সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকিরের পিএস রাশেদ গ্রেফতার

সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকিরের পিএস রাশেদ গ্রেফতার

মৌলভীবাজার সীমান্তে শিশুসহ ৭১ জনকে ফেরত

মৌলভীবাজার সীমান্তে শিশুসহ ৭১ জনকে ফেরত

আর্কাইভ

July 2025
S M T W T F S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
« Jun    

প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ আব্দুল বারী
ইমেইলঃ dtbangla@gmail.com

Mobile No- +88 01710862632
ঢাকা অফিসঃ ৩৩ কাকরাইল (২য় তলা)
ভিআইপি রোড, কাকরাইল ঢাকা -১০০০
প্রেসবিজ্ঞপ্তি পাঠানোর ইমেল:
newsdtb@gmail.com
কুষ্টিয়া অফিস: দৈনিক দেশতথ্য
দাদাপুর রোড (মজমপুর)
(কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের সামনে)
মোবাইল:01716831971

Copyright © 2024 dailydeshtottoh All right reserved. Developed by WEBSBD.NET

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় খবর
  • স্বদেশ খবর
  • বিদেশি খবর
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • কৃষি
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • ধর্ম
  • আইটির খবর
  • লাইফস্টাইল
    • ভ্রমণ তথ্য
  • সম্পাদকীয়
    • মতামত
  • অন্যান্য
    • প্রাপ্ত বয়ষ্কদের পাতা
    • সাহিত্য ও সংষ্কৃতি
    • স্মৃতিচারণ/স্মরণ
    • ফটো গ্যালারী
  • ই-পেপার

Copyright © 2024 dailydeshtottoh All right reserved. Developed by WEBSBD.NET

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist