খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিতে এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধ হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঁচারের অভিযোগ উঠেছে। সে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঁচা করে স্বস্ত্রীক ভারতে পাড়ি দিচ্ছেন।
জীবনের পড়ন্ত বেলায় রহস্যজনক স্বস্ত্রীক ভারতে চলে যাওয়ায় জন্য গোয়ালবাথান গ্রামের ষাটোর্ধ সরাজ মন্ডল দেশের সমুদয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করেছেন। ইতোমধ্যে বসত-ভিটাসহ অন্তত ৮বিঘা জমি বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে। এসব টাকা নাকি হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাচার করা হয়েছে। পার্সপোর্টও রেডি করা হয়েছে। যেকোন সময় তিনি ভারতে পাড়ি দিবেন এমনটাই নিশ্চিত করেছেন স্থানীয়রা।
এদিকে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে চীরতরে ভারতে যাওয়ার কারণ জানা সম্ভব না হলেও তার একমাত্র ছেলে সবুজ মন্ডল আরো ১০/১২ বছর আগে ভারতে সেটেল হয়েছেন। দু’মেয়ের একজন আলো মন্ডলকে পাত্রস্থ করা হয়েছে ভারতে। সূত্র জানায়, এক মাত্র ছেলে সবুজ দেশে থাকাকালীণ মাস্টার্স কমপ্লিট’র পর চাকুরীর জন্য বাবার কাছে টাকা চেয়ে না পাওয়ায় ক্ষোভে-দু:খে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন তিনি। যদিও নিরুদ্দেশ হওয়ার পর আর দেশে ফেরেননি তিনি। পারিবারিক সূত্র দাবি করছে, সবুজ নিরুদ্দেশ হওয়ার পর বর্তমানে ভারতের বর্ধমান এলাকায় বসবাস করছেন। তার বাবা-মা দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে ভারতে ছেলের কাছেই সেটেল হচ্ছেন।
পাইকগাছা উপজেলার গোয়াল বাথান গ্রামের মৃত নগেন্দ্র মন্ডলের ছেলে সরাজ মন্ডল (৬০) তার বসত-ভিটার সম্পত্তির ২ বিঘা ১২ কাঠা জমি তিনি ২৬ মে বৃহস্পতিবার একমাত্র ভাইপো বিক্রম ওরফে শোভন ওরফে সোনা মন্ডলকে রেজিষ্ট্রী করে দিয়েছেন। বাকি জমি আগের দিন ২৫ মে বুধবার খুলনার বটিয়াঘাটা এলাকার জনৈক স¤্রাট ওরফে খোকনকে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। তবে সরাজ মন্ডল কি সত্যিই ভারতে স্থায়ী হচ্ছেন? নাকি অন্তরালে অন্য কোন কাহিনী লুকিয়ে রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অনেকের মন্তব্য, যে ব্যাক্তি তার একমাত্র ছেলের পড়া-লেখা সম্পন্ন করানোর পর তাকে সুখী করতে পৈত্রিক ১ কাঠা জমি বিক্রি করতে রাজী ছিলেন না। সেই ব্যাক্তির কি এমন ঘটনা ঘটল যে, দেশে তার সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে সেই ছেলের কাছেই চীরতরে চলে যাচ্ছেন! বিষয়টি রীতিমত রহস্যজনক বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
সূত্র জানায়, রাজ মন্ডলকে সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে ভারতে পাড়ি জমানোর বুদ্ধিদাতা ও পরিকল্পনাকারী স্থানীয় দ্রুতশ্রী ওরফে চান্টু। তিনি গোটা বিষয়টিকে সামাল দিতে সরাজেরই একমাত্র ভাইপো শোভনকে সাথে নেন। এবং গোটা সম্পত্তিই ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করিয়েছেন।
এব্যাপারে সরাজের ভাইপো বিক্রম ওরফে শোভনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাকা তার জমি বিক্রি করবেন আর তিনি ক্রয় করবেন সেটাই স্বাভাবিক। তবে টাকার অভাবে তিনি সমুদয় সম্পত্তি খরিদ করতে নাপেরে বটিয়াঘাটাস্থ আরো একজনকে রেজিস্ট্রি করিয়েছেন বলে জানান। তবে সরাজ ভারতে যাচ্ছেন কি অন্য কোথাও যাচ্ছেন তা তিনিও জানেনা বলে দাবি করেন। যদিও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। চান্টু ও শোভন সস্ত্রীক সরাজকে ভারতে পৌছে দিবেন বলে তাদের ইতোমধ্যে চুক্তি হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, মোটা অংকের টাকায় কাকার সম্পত্তির বড় অংশ অন্যত্র বিক্রি করিয়ে শোভন নামমাত্র মূল্য ও সহযোগীতার স্বার্থে রেজিস্ট্রি করিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া মধ্যস্বত্ত্বভোগী হিসেবে চান্টুও লাভবান হয়েছেন। এমন যৌথ স্বার্থেই তারা দেশের সম্পদ বিক্রির টাকা ভারতে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার ও তাদেরকে চীরতরে ভারতে ঠেলে দিচ্ছেন।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//৩ জুন/২০২২//

Discussion about this post