নির্বাচন ১৫ জুন। চরপাথরঘাটা ইউপিতে প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। শেষ মূহুর্তে ধীরে ধীরে জমে উঠেছে উপজেলার সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন।
বিছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া এখন পর্যন্ত কোথাও কোন বড় ধরনের সমস্যা হয় নি। ফলে প্রার্থীরা মাঠের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী , সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য প্রার্থীরা দিন রাত মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন।
প্রত্যেক প্রার্থীই জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছেন। সেক্ষেত্রে এখনো উঠোনবৈঠকেই বন্দি আনারস। কাগজে কলমে ইউনিয়নে তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী। এরা হলেন-নৌকা প্রতীকের মোঃ সেলিম হক, আনারস প্রতীকে হাজী ছাবের আহমদ ও চশমা প্রতীকে মনির আহমদ মার্শাল।
ইভিএমে এই ভোট যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষ মূহর্তে ইউনিয়নে আনাচে কানাচে নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সেলিম হক। তিনি দলের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে রাত দিন ভোট সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সজ্জন ও দলের ত্যাগি নেতা হিসেবে পরিচিত তিনি। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ভোটারদের সামনে তুলে ধরছেন। তিনি নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে জানিয়েছেন সাংবাদিকদের।
নির্বাচনে দাঁড়ালেও নানা কারণে হাজী ছাবের আহমদ প্রচারণায় পিছিয়ে। তাঁর পক্ষে প্রকাশ্যে কেউ মুখ দেখাচ্ছেন না। তাঁদের নেতাকর্মীদের দাবি আনারসের নীরব ভোট ব্যাংক রয়েছে। সুষ্ঠু ভোটে চমক দেখাবে তাঁরা। মাঠে নেই এই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী ছাবের আহমদ। নেই বিশাল কর্মী বাহিনী। রয়েছে কয়েকশ এলাকার সাধারণ ভোটার।
অনেকেই বলছেন, একটি ওয়ার্ডের কর্মী সমর্থক দিয়ে পুরো ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করা ও নির্বাচনী বৈতরনী পার করা অসম্ভব। দুএকদিন পর পর হাজী ছাবের আহমদ নিজ বাড়ির উঠোনে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের ডেকে শোনাচ্ছেন আশার বানী। একই মতবিনিময় সভা পরিচালনা করছেন চশমা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী। এটা নিয়ে অনেকে হাস্যরস শুরু করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে নীরবে ভোট বর্জনের মতো নানা কথাও। কেননা এখনো প্রকাশ্যে মাঠে আসছে না আনারস। কেন আসছে না তাও স্পষ্ট করছেন না হাজী ছাবের আহমদ।
ওদিকে ফাঁকা মাঠ পেয়ে অল্প সময়ে ভোটের মাঠে সাড়া ফেলেছেন তরুণ চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম হক। আগামি নির্বাচনে তিনি জয়ী হতে তার নৌকা প্রতীক নিয়ে ক্লান্তহীনভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মাঠে রয়েছে তাঁর শত শত কর্মী বাহিনী ও ভোটার। তিনি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পুরো নির্বাচনী মাঠে। চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে পুরোদমে চলছে ভোটের আমেজ । দীর্ঘ ৬ বছর পর এই ইউনিয়নে নির্বাচন হওয়ায় এবার মানুষ অধির আগ্রহে বসে আছেন ভোট দেওয়ার জন্য।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ সকলেই রয়েছেন নৌকার প্রচারণায়। যদিও ভোটের মাঠে এখন বিশাল ফ্যাক্টর সাধারণ ভোটারগণ। তাঁদের গতি বুঝা বড় মুশকিল। ভেতরে ভেতরে মেম্বারদেরও নানা প্রচারণা চোখে পড়ছে। তবে নৌকার জয়ে বাঁধা হয়ে আছেন আনারসের স্বতন্ত্র প্রার্থী। নৌকার জয় ঠেকাতে ভিন্ন রাজনীতি চলছে এই ইউনিয়নে।
প্রার্থী যেই হোক এই ইউনিয়নে আঞ্চলিকতা কাজ করছে ভোটারদের কাছে। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোরেশোরে মাঠে নেই। ব্যাপক গণসংযোগ করে যাচ্ছেন সেলিম হক। চরপাথরঘাটাবাসী তাঁকে নিয়ে এবার নতুন স্বপ্ন দেখছেন বলে জানিয়েছেন শাহরিয়ার মাসুদ।
ওদিকে পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মাঠের যুদ্ধে নামার সাহস পাচ্ছেন না হাজী ছাবের আহমদ। এজন্য প্রচার-প্রচারণায় পিছিয়ে তিনি। ইতোমধ্যে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে ভোটারগণও অপেক্ষা করছেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী করতে। সার্বিক পরিস্থিতি ও জনপ্রিয়তা দেখে এবার সিদ্ধান্ত নেবে ভোটাররা।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ দলীয় নেতাকর্মীরা ভেদাভেদ ভুলে একসাথে রাত-দিন নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়ালেও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাঁদের নেতাকর্মীদের দেখা মিলছে না। আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে এ ইউনিয়নে। সেলিম হক ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হওয়ায় সকলের কাছে জনপ্রিয় তিনি। অপরদিকে এলাকায় গরিব মানুষদের বিভিন্ন সময়ে সাহায্য সহযোগিতা করায় একটা জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন হাজী ছাবের আহমদ।
কয়েকজন সাধারণ ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্যক্তি ইমেজের কারণে বেশির ভাগ মানুষ তাকে বিজয়ী দেখতে চান। শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশার অপেক্ষায় ভোটাররা এমন মন্তব্য করেছেন বেশির ভাগ ভোটার।
হাজী ছাবের আহমদ বলেছেন, বিভিন্ন জায়গায় হামলার কারণে এবারের ভোট প্রদান করার আগেই যেভাবে সাধারণ মানুষ ভয়-ভীতির মধ্যে আছে। ভোটের দিন সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি না হলে কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় ভোটাররা। সাধারণ মানুষের কাছে ভোট হচ্ছে উৎসবের, কিন্তু এবারের ভোট হচ্ছে আতঙ্কের। তাই নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান ভোটের দিন যেন সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে। সেলিম হক বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মানুষ এবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেবে বলে আমি আশা প্রকাশ করছি।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল শুক্কুর জানান, ১৫ জুন সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটাররা যেন ভোট প্রদান করতে পারেন সেজন্য আমরা সর্তক অবস্থানে রয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের সকল কার্যক্রম শেষ। ১৩ জুন মগ ভোটিং হবে। ভোটের দিন কোনো অরাজকতা হলে প্রশাসন কঠোর হস্তে দমন করবে। ভোটের আগেই প্রতিটি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//৬ জুন-২০২২//

Discussion about this post