খুলনার পাইকগাছায় দিনভর লাশ নিয়ে অপেক্ষার পরও স্বামীর পৈত্রিক কবরস্থানে দাফন হয়নি এক সদ্য প্রসূতি মায়ের।
শনিবার মর্মস্পর্শী ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কপিলমুনির নগরশ্রীরামপুর এলাকায়। সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীসহ ও ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশ আসলেও হৃদয় টলেনি শরীকদের।
অবশেষে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে মৃত প্রসূতি হালিমাকে খাতুন(২০) কে নিয়ে প্রায় ৩ কিলো মিটার দূরে তার মামার বাড়িতে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
অভিযোগে জানানো হয়, প্রায় বছর দু’য়েক আগে উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের মৃত হাতেম আলী সরদারের ছোট মেয়ে হালিমার সাথে বিয়ে পার্শ্ববর্তী নগরশ্রীরামপুর গ্রামের মৃত ইউসুফ সরদারের ছেলে পীর আলী সরদারের। দাম্পত্য জীবনে হালিমা সন্তান সম্ভবা হলে প্রায ১৮ দিন আগে কপিলমুনির একটি বে-সরকারী ক্লিনিকে নিলে সেখানে সিজারের পর একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। ভালবেসে সবাই নবজাতকের নাম রাখেন, আব্দুর রহমান। তবে ভালবাসা বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি আব্দুর রহমানের।
গর্ভধারিনী মা হালিমার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় শুক্রবার আশংকাজনক অবস্থায় ক্লিনিক থেকে রেফার করা হলে এ্যাম্বুলেন্সযোগে নেয়া হয় সাতক্ষীরায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই তার মৃত্যু হলে সকালে দাফনের জন্য তাকে নেয়া হয় স্বামীগৃহ নগরশ্রীরামপুরে। জরুরী দাফনেরও প্রস্তুতি নেয়া হয় তার। তবে বাঁধসাধে কবর খোঁড়ার সময়। পৈত্রিক কবরস্থানে কবর খুঁড়তে গেলে স্বামী পীরআলীর শরীক চাচাতো ভাই জনৈক রেজাউল সরদারের নেতৃত্বে তার ভাইয়েরা দাবি করেন, দাদার কাছ থেকে কবরস্থানসহ জমির সিংহভাগ তারা লিখে নিয়েছেন। স্বামী পীর আলীর পিতা-মাতাকেও দাফন করা হয়েছিল ঐ কবরস্থানে। তবে পিতা-মাতাকে শায়িত কবরস্থানের জমির ইতোমধ্যে চুপিসারে মালিকানা হারিয়েছেন তারা।
খবর পেয়ে এলাকাবাসীর পাশাপাশি উপজেলা সদর থেকে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে হেল্পলাইন ৯৯৯ এর সহায়তায় স্থানীয় হরিঢালী ফাঁড়ির পুলিশও পৌছে ঘটনাস্থলে। তবে সবার অনুরোধ অগ্রাহ্য করে কবরস্থান থেকে ফিরিয়ে দেওযা হয় লাশ। তাৎক্ষণিক মর্মস্পর্ষী ও হৃদয়গ্রাহী ঘটনায় অনেকেইে চোখের পানি সংবরণ করতে না পারলেও হৃদয় টলেনি রেজাউল দিংদের। তাদের সাফ কথা, কোন অবস্থাতেই ব্যাক্তি মালিকানাধিন জমিতে দাফন হবেনা তার।
এরপর অগত্যা আছরের পর সন্ধ্যার আগে হালিমার লাশ নিয়ে তার স্বজনরা পার্শ্ববর্তী ৩ কিলোমিটার দূরে কাশিমনগর তার মামার বাড়িতে নিয়ে দাফন সম্পন্ন করেন।
এদিকে হালিমার মৃত্যুতে সদ্যজাত তার সন্তানকে নিয়েও শুরু হয় টানা হেঁচড়া। স্বজনদের মধ্যে কে নেবে অবুঝ শিশুর দায়িত্ব? এমন প্রশ্নমুখে শিশুটির এক মামী আবুল হাসানের স্ত্রী সখিনা বেগম পরম স্নেহে কোলে তুলে নেন ১৮ দিনের নবজাতক আব্দুর রহমানকে। সর্বশেষ শিশুটি সেখানেই অবস্থান করছে।
এব্যাপারে নিহতের দেবর শের আলী গাজী জানান, তার পিতা ইউসুফ আলী সরদারের মৃত্যুর পর চাচা নুরমোহাম্মাদ সরদারের ছেলেরা দাদা ইজাহার আলী সরদারের নিকট থেকে সিংহভাগ জমি রেজিস্ট্রি করিয়ে নিয়েছে। যার মধ্যে তাদের ১৮১ খতিয়ানের ৯৭ দাগের সাড়ে ৩ শতক ও ২৪৪ খতিয়ানের ২৩৬ দাগের ৭ শতক কবরস্থানের জমিও সম্পৃক্ত রয়েছে। তিনি জানান, তার দাদা-দাদী, পিতা-মাতার কবরও সেখানে। অথচ তার ভাবীর মৃত্যুর পর সামান্য তার কবরটুকু পর্যন্ত দিতে দেয়নি তারা। তিনি এর সুষ্ঠু বিচার চান।
এব্যাপারে অভিযুক্ত মো: রেজাউল জানান, কবরস্থানের জমিটি মূলত তাদের মালিকানাধীন এবং রেকর্ডীয় শের আলীদের অন্য জায়গা থাকতেও তারা তাদের বাড়ি অভ্যন্তরে কবর দিতে চেয়েছিল।
অভিযুক্তদের আরেক ভাই আমিনুর রহমান দাবি করেন, তারা অনেক ভাই ঐ জমি খন্ড তার দাদা তাদেরকে রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছেন। সেমতে তারা রেকর্ডও প্রস্তুত করেছেন। এক সাথে থাকাকালীন তাদের পিতা-মাতার কবর সেখানে দেওয়া হয়েছিল স্বীকার করে বলেন, সর্বশেষ তার চাচীর মৃত্যু হলে চাচাতো ভাইদের সতর্ক করা হয়েছিল যে, এখন জায়গা-জমি বন্টন হয়ে গেছে,উক্ত জমি আমাদের। ভবিষ্যতে তারা যেন আর কাউকে সেখানে দাফন না করে। মূলত তার চাচাতো ভাইয়েরা তাদেরকে হয়রাণি করছে বলেও উল্টো দাবি করেন তিনি।
এব্যাপারে পাইকগাছা থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, খবর পেয়ে হরিঢালী ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তবে কবরস্থানের জায়গা আগেই রেজাউল দিংরা নিজনামে রেকর্ড প্রস্তুত করেছে। মানবিক দৃষ্টিতে তারা তাদের জায়গায় অন্যকে কবর দিতে না দিলে পুলিশের কিই বা করার থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//৫ জুলাই-২০২২//

Discussion about this post