বদলে গেছে কাল। পাল্টে গেছে আত্মহত্যার ধরন। আগের যুগে আত্মহত্যাকারীরা সবার অলক্ষে বিষ খেয়ে, গলায় দড়ি দিয়ে, ঘুমের বড়ি খেয়ে, গলায় কলসী বেঁধে ট্রেনের সামনে লাফ দিয়ে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করতো। পুলিশ এসে নোট পড়ে অনুসন্ধানে নামতো।
এখন সময়ের বিবর্তনে পাল্টে গেছে আত্মহত্যার ধরন। এর আগে ঢাকার এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ব্যার্থতার গ্লানিতে জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। সেই ঘটনা যে, সমাজে কতটা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে তার প্রমান দিয়েছে জামালপুরের এক যুবক।
ওই যুবকের নাম হানিফ পালোয়ান (১৬)। সে ট্রাক চালক বাবার কাছে একটি মোটরসাইকেল চেয়েছিল। বাবা চাওয়ামা্ত্র সময়ের মধ্যে মোটরসাইকেল কিনে দিতে পারেননি।
এই ঘটনায় নিজেকে বিক্ষুব্ধ বানিয়ে হানিফ পালোয়ান ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করে বাবার স্বপ্নের আয়না ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছেন।
বুধবার (২০ জুলাই) রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের আবাসিক কলোনিতে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
হানিফ পালোয়ান উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর সরিষাবাড়ী গ্রামের ট্রাক চালক সাহের পালোয়ানের ছেলে। সরিষাবাড়ী রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সে আসন্ন এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিলো।
স্থানীয়সুত্রে জানা যায়, হানিফ পালোয়ান মোটরসাইকেলের প্রতি ব্যাপক আগ্রহী ছিলো। কিছুদিন আগে তার পরিবার পুরাতন একটি মোটরসাইকেল তাকে কিনেও দিয়েছিলো। কিন্তু তার শখ ছিলো নতুন মোটরসাইকেলের।
বাবা-মা টাকা জোগাড় করতে না পারায় চাওয়ামাত্র সময়ের মধ্যে মোটরসাইকেল কিনে দিতে দেরি করে। এরপর সে বুধবার রাত ১০টায় দিকে ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছে তার নতুন মোটরসাইকেলের খুব ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু মা-বাবা কিনে দেয়নি। তাই সে দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছে। তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।
এ স্ট্যাটাসের কিছুক্ষণ পর সে উপজেলা পরিষদের আবাসিক কলোনির ভাড়া বাসায় ফেসবুক লাইভে গিয়ে ফাঁসিতে ঝুলতে থাকে। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. দেবাশীষ রাজবংশী বলেন, ওই কিশোরকে রাত সাড়ে ১০টায় দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনে পরিবার। কিন্তু এরআগেই সে মারা যায়।
সরিষাবাড়ী থানার পুলিশ উপপরিদর্শক মুর্শেদ আলম বলেন, পরিবারের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//২১ জুলাই-২০২২//

Discussion about this post