হাটহাজারী (চট্টগ্রাম)প্রতিনিধিঃ হাটহাজারীতে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের নির্মাণ কাজ পছন্দের লোক না পাওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে নির্মাণ কাজে বাধা ও ভাঙ্গচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বুধবার (৩ অগাস্ট) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার আলমপুর ও আদর্শগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ঘটনার দিন বিকালে আদর্শগ্রাম এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে যান উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলম। এসময় ইঞ্জিনিয়ার মুহিব, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা মনি, উপজেলা চেয়ারম্যানের পিএস রাশেদ ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা আনোয়ার মেহেদীসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ আছে, উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল আলমের উপস্থিতিতেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অজুহাতে নির্মাণাধীন ঘরের কিছু অংশ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি একজন নির্মাণ শ্রমিকে মারধর করেন আনোয়ার মেহেদী। এসময় সবকিছু দেখেও নিশ্চুপ ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল। অভিযুক্ত আনোয়ার মেহেদী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে হাটহাজারী উপজেলার ভূমি ও গৃহহীনদের বাসস্থান নিশ্চিত করতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় গত ২১ জুলাই ৬০টি ঘর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সেই প্রকল্পের অধীনে চলমান আছে ঘরগুলোর নির্মাণকাজ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ নিজের পছন্দের মানুষকে (ইঞ্জিনিয়ার মুহিব) দিতে চেয়েছিলেন হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলম। তবে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৩ জন প্রকৌশলীর সহযোগিতায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই প্রকল্পটি তদারকি করায় পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ দিতে পারেননি তিনি। যার প্রেক্ষিতে কাজে অনিয়মের অভিযোগ তুলে এমনটি করিয়েছেন তিনি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণাধীন কাজে বাধাদান ও ভাঙচুরের একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায়, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও কাজে গাফিলতির অভিযোগ তুলে সদ্য ঢালাই দেওয়া কাঁচা পিলার লাথি মেরে ভেঙে দিচ্ছেন এক ব্যক্তি (আনোয়ার মেহেদী)। এসময় কর্মরত এক নির্মাণ শ্রমিককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে তাকে চড় মারতে দেখা যায় সেই ভিডিওটিতে।
এদিকে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজে বাধা দেওয়া ও ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদুল আলম। এসময় নির্মাণ শ্রমিকেরা ঘটনার বিবরণ দিয়ে তাদের উপর হওয়া নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। নিজেদের অসহায়ত্ব তুলে ধরে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতিকার চান তারা।
এ প্রসঙ্গে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে কয়েকটি ঘরের গ্রেট বিমের কাজ চলছিল। সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু কয়েকদিন আগের ঘরে তাদের কোনো অবজারভেশন ছিল না। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে ফোনে জানিয়েছেন, আমাদের সমস্ত মালামাল এ গ্রেডের, এ নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সিমেন্ট এবং বালির মিশ্রণের দিকে একটু নজর দিতে বলেছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণাধীন ঘরের গ্রেট বিমের কাঁচা ঢালাই ও একটি ওয়ালের কয়েক ফুট গাঁথুনি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানের সাথে আনোয়ার মেহেদী নামে এক ব্যক্তি গিয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে এমন কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পেয়েছি। তিনি একজন নির্মাণ শ্রমিককে মারধরও করেছেন।’
‘এ ধরনের ব্যবহার কোনভাবেই কাম্য নয়। কোনো কাজে আপত্তি থাকলে আমাদের জানানো যেত। আমি নিজে কাজটা দেখছি। উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে অনুরোধ করেছেন আগামীকাল আমিসহ তিনি ওই স্থানে যেতে চান। গিয়ে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিবেন। তবে তিনি যদি সন্তোষজনক কোনো ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আমরা সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।’
হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম বলেন, ‘আমি আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করে চলে আসার পর এ ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। আমার সামনে কোনো ধরনের ভাঙচুর করা হয়নি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমার যাওয়া থেকে শুরু করে সেখানে কি বলেছি সবকিছুর ভিডিও আমার কাছে আছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আনোয়ার মেহেদী আমাদের দল করে। তার মানে এই নয় যে তিনি আমার অনুসারী। আর প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনের সময় তিনি আমার সাথে ছিলেন না৷ যে ভিডিওটার কথা বলা হচ্ছে সেখানে আমি আছি এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবে? কেউ যদি নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রীর কথা তুলে মারধর করে তার দায়ভার আমি কেন নেব?’ যদিও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি যিনি করেছেন তার পেছনে উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। সুষ্ঠু তদন্ত হলে বিষয়টির প্রমাণ মিলবে।
হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পের উপদেষ্টা হওয়া সত্ত্বেও আমি আজ পর্যন্ত জানি না প্রকল্পের টেন্ডার কখন হয়েছে, কে টেন্ডার পেয়েছে, তা আমি জানি না। সেখানে আমার সংশ্লিষ্টতার প্রশ্নই আসে না। আমার পছন্দের কোনো ঠিকাদার নেই।’
উপজেলা চেয়ারম্যান টেন্ডারের কথা বললেও মুজিববর্ষে ঘর উপহার দেওয়ার কাজ টেন্ডারে হয় না; প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে হয় বলে জানা গেছে।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//৪ আগষ্ট-২০২২

Discussion about this post