সুদীপ্ত শাহীন, লালমনিরহাট, ২৮ সেপ্টেম্বর ॥ বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সিকিমের গ্যাংটক হয়ে সড়ক পথে চীনে যাওয়া মোটেও অসম্ভব নয়। কারন বুড়িমারী থেকে চীন সিমান্তের দূরত্ব মাত্র ২শ’ থেকে আড়াইশ’ কিলোমিটার। এটি করলে পাল্টে যাবে উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র। কর্মসংস্থান পাবে হাজার হাজার মানুষ। এর অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায়।
সেই হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগের স্বর্ণদ্বার লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর পেতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্ব। বাংলাদেশ, ভারতের সাথে দুই দেশের সীমান্ত চুক্তি রয়েছে। এখন শুধু চীনে সাথে স্থল করিডোর চুক্তি হলেই বিশাল সম্ভাবনাময় হয়ে উঠত এই বন্দর।
ভৌগলিক অবস্থানগত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে লালমনিরহাট জেলা। এক সময় ভারত বর্ষের স্বর্ণদ্বার ছিল লালমনিরহাট। তাই বৃটিশ সরকার ১৮৮২ সালে লালমনিরহাটের সাথে রেলওয়ে যোগাযোগ স্থাপন করে। পরবর্তীতে ১৮৪৫ সালে এই জেলায় দক্ষিণএশিয়ার বৃহত্তর বিমানবন্দর বা ঘাঁটি স্থাপন করে ( যার আয়তন ১৭৬০ একর)। বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত চুক্তির ফলে পূণরায় সেই খ্যাতি ফিরে পেতে যাচ্ছে লালমনিরহাট।
চীন ও ভারতের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এখন ভারত কে উদার মানসিকতা নিয়ে চীনের সাথে চুক্তি করলে সিকিম রাজ্যে মাত্র ৫০ কিলোমিটার রাস্তা ব্যবহার করতে দিতে হবে। তাহলে বাংলাদেশের সাথে চীনের সড়ক পথে যোগাযোগ স্থাপন হয়ে যাবে। এছাড়াও মাত্র দুই হাজার মিটার নতুন রেললাইন সংযোগ দিতে হবে ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরের সাথে । এতেই বুড়িমারী স্থলবন্দরের সাথে চ্যাংড়াবান্ধা রেলওয়ে যোগাযোগ স্থাপন হয়ে যাবে।
চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত ভারতের ও বুড়িমারী পর্যন্ত বাংলাদেশের রেলওয়ের নিজনিজ দেশের যোগাযোগ রয়েছে। রেলওয়ে যোগাযোগে একসাথে অনেক বেশী পণ্য পরিবহন করা যায়। স্বল্পমূল্যে অপচনশীল পণ্য দ্রব্য পরিবহন রেলওয়ে সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয়। এতে করে বাংলাদেশ রেলওয়ের গড় বার্ষিক আয় কয়েক গুণ বেড়ে যেত। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো । যাহা দেশের স্থায়ী উন্নয়নে জিডিপিতে অবদান রাখতে পারত।
জানা গেছে, ভারতে সিকিমের গ্যাংটক হয়ে চীনের সঙ্গে বুড়িমারী স্থলবন্দরে যোগাযোগ স্থাপিত করা সম্ভব। পাল্টে যেত উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বুড়িমারী বন্দরের গুরুত্ব বেড়ে যেত। শুধুই প্রয়োজন বাংলাদেশ, ভারত ও চীনে সাথে স্থল করিডোর চুক্তি। ভারত কে উদার মানসিকতা নিয়ে মাত্র অর্ধ কিলোমিটার রাস্তা ব্যবহার করতে দিতে হবে।
এছাড়াও মাত্র দুই হাজার মিটার রেললাইন সংযোগ দিলে ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরের সাথে বুড়িমারী স্থলবন্দরে রেলওয়ে যোগাযোগ স্থাপন হয়ে যাবে। এতে করে স্বল্পমূল্যে অপচনশীল দ্রব্য পরিবহন ব্যয় হ্রাস সম্ভব। বাংলাদেশ রেলওয়ের আয় কয়েক গুণ বেড়ে যেত। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো কয়েক হাজার মানুষের। চীনের সাথে এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি চালু হলে পাল্টে যাবে গোটা উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র। বুড়িমারী দিয়ে ২শ’ থেকে আড়াইশ’ কিলোমিটার দূরত্ব চীন। এ বন্দর দিয়ে চীনের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হলে ফিরে আসবে বন্দরের চিরাচরিত রূপ। উন্নত হবে লালমনিরহাট, রংপুর, নিলফামারী, দিনাজপুর, ঠাঁকুরগাছও, পঞ্চগড় সহ গোটা উত্তরাঞ্চলের চিত্র। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, চীনের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে বানিজ্যমন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের সমাধানের পত্র প্রেরণ করেছে। ত্রিপাক্ষীক আলোচনা চলছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে প্রতিদিন ৮শ’ থেকে ৯শ’ পণ্য বোঝাই ট্রাক চলাচল করে। লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী ১ শত কিলোমিটার মহাসড়কে পণ্য বোঝাই ট্রাক চলাচল করে। বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক আমদানি-রপ্তানি করার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব ১শ’ কিলোমিটার মহাসড়ক। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের একমাত্র পথ। এ চলাচলের একমাত্র পথ মহাসড়কটি খানা খন্দরে ভরপুর। বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক বের হলেই কখনো পথে হয়ে পড়ছে বিকল আবার কখনো হয়ে যাচ্ছে উল্টে। লোকসানে পড়ছে ব্যবসায়ীরা। সঠিক সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাচ্ছে না পণ্য বোঝাই ট্রাক। পণ্য পরিবহনে লোকসানের কারণে ক্ষতির মুখে আমদানিকারকরা। লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক দ্রুত সংস্কার করা জরুরী। এতে বন্দরে জমে উঠবে। ব্যবসা-বাণিজ্য হতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। পুরো দমে বন্দর ব্যবসা-বাণিজ্য চালু থাকাকালীন সময়ে একেক জন শ্রমিক ৫শ’ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা আয় করে চালাতো পরিবারগুলোর সংসার। এমনকি পরিবারের মহিলারাও কাজ করতো শ্রমিকের। বন্দরে কাজ করতো ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার মহিলা কাজ করতো শ্রমিকের শ্রমিকদের দাবি বুড়িমারী স্থলবন্দর ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভবনাময় বন্দর।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//সেপ্টম্বর ২৮,২০২২//

Discussion about this post