চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক চৌধুরী, মহানগর কৃষকলীগ নেতা মোঃ মাহাবুব আলম ও চরলক্ষ্যার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতোমধ্যে তাঁদের স্ব স্ব মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন।
যদিও স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করছেন না। তবুও রাজনৈতিক ও স্বতন্ত্র দলের তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁদের মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। এর সাথে প্রার্থীদের হলফনামা ও পরিসম্পদ-দায় বিবরণী জেলা নির্বাচন অফিসে জমা দেয়ার কথা জানালেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল শুক্কুর।
এতে দেখা যায়, প্রার্থী হিসেবে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী স্ত্রীর চেয়ে স্বর্ণ বেশি ফারুকের, বাড়ি দেখালেও গাড়ি নেই আলীর, সম্পদ থাকলেও ব্যাংক ঋণ নেই মাহাবুবের।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ফারুক চৌধুরী’র হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনি একজন ব্যবসায়ি। ঢাকা নিউ এ্যালিপেন্ট রোডের এ্যালগেয়ী কম্পিউটারের সত্ত্বাধিকারী তিনি। যাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর (যা মাস্টার্স ডিগ্রী নামেও পরিচিত)। আয়ের উৎস হিসেবে কৃষিখাত থেকে তাঁর বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। অন্যান্য ব্যবসা থেকে আয় ৬ লক্ষ ৮০ হাজার ২০০ টাকা।
অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নগদ রয়েছে তাঁর ৩ লক্ষ টাকা। ব্যাংকে জমা রয়েছে ৮ লক্ষ টাকা। রয়েছে একটি মোটর কার যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১২ লক্ষ টাকা। নিজ নামে স্বর্ণ রয়েছে ১০ ভরি, স্ত্রী মেহেরুন্নেছার নামে রয়েছে স্বর্ণ রয়েছে ৫ ভরি। টিভি ১টি, ফ্রিজ ১টি, এসি ১টি, ফ্যান ৮ টি, সোফা ১ সেট, আলমারী ২টি, টেবিল ১টি, আলনা ১টি, খাট ৩টি।
ফারুক চৌধুরী’র স্থাবর সম্পদে রয়েছে ৫০ শতক কৃষি জমি। যার মূল্য দেখিয়েছেন ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। অকৃষি জমি ১০ শতক, যার মূল্য ৯ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা। যৌথ মালিকানায় যা পাঁচ ভাগের এক অংশ। রয়েছে একটি বাড়ি ও ১টি এপার্টমেন্ট। যার মূল্য দেখিয়েছেন ৩০ লক্ষ টাকা।
দায় ও দেনায় বর্ণনা করেছেন আল আরাফা ইসলামি ব্যাংক লিমিটেডে সিসি ঋণ রয়েছে ৩৩ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা। আর ইউসিবিএল ব্যাংকে যৌথ ঋণ রয়েছে ৭ কোটি ১৪ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯০৭ টাকা। তবে হলফনামাযর কোথাও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে গত ৫ বছরে তিনি যে সম্মানী/ভাতা পেয়েছেন ২৪ লক্ষ টাকা। তা কোথাও উল্লেখ করতে দেখা যায়নি।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলীর সম্পদের উৎস ও হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনি একজন মাছ ব্যবসায়ি। মেসার্স আলী এন্ড ব্রাদারস এবং ফিশ গার্ডেন লিমিটেড এর সত্ত্বাধিকারী। শিক্ষাগত যোগ্যতা যার দশম শ্রেণি। ব্যবসা থেকে তাঁর বাৎসরিক আয় ৬ লক্ষ টাকা।
অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে নগদ রয়েছে ৪ লক্ষ টাকা। ইলেকট্রনিকস সামগ্রির মধ্যে রয়েছে টিভি, ফ্রিজ, এসি। আসবাবে খাট, আলনা, সোফাসেট। তবে সংখ্যা উল্লেখ করেননি। স্থাবর সম্পদে রয়েছে ৮০ শতক কৃষি জমি। যৌথ মালিকানা ৩০০ শতক। যা চার ভাগের এক অংশ। ১টি বাড়ি রয়েছে। পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী দাখিলে দেখা যায় তাঁর কোন ব্যাংকে দায় দেনা নেই।
অপরপ্রার্থী, মহানগর কৃষকলীগ নেতা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ মাহাবুব আলমের হলফনামা সূত্রে জানা যায়, তিনিও একজন ব্যবসায়ি। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। ব্যবসা থেকে তাঁর বাৎসরিক আয় হয় ৪ লক্ষ টাকা।
অস্থাবর সম্পদে নগদ রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৪ লক্ষ টাকা। নিজ নামে স্বর্ণ রয়েছে ৫০ হাজার টাকার। আর স্ত্রী মিলির নামে রয়েছে ১০ ভরি স্বর্ণ। ইলেকট্রনিকস সামগ্রী রয়েছে ২০ হাজার, আসবাবপত্র ৩০ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পদে অকৃষি জমি রয়েছে শূণ্য দশমিক এক তিন পাঁচ শূণ্য শতক। রয়েছে তিন তলা বিশিষ্ট যৌথ বসত বাড়ি। পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী দাখিলে দেখা যায় তাঁর কোন ব্যাংকে দায় দেনা নেই।
হলফনামা বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র এক কর্মকর্তা নাম অপ্রকাশে বলেন, ‘একজন প্রার্থী স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব এফিডেভিট করে দেন হলফনামা আকারে। সাথে প্রতিবছর তার আয়ের বিপরীতে যে আয়কর দেন, সেটির রিটার্ন সার্টিফিকেটও দিয়ে থাকেন। তবে প্রার্থীর হলফনামায় উল্লেখ করা সম্পদের পরিমাণের সাথে তার প্রকৃত সম্পদের হিসাব সাধারণত নির্বাচন কমিশন যাচাই করে না।”
চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সাধারণত হলফনামায় উল্লেখিত সম্পদের পরিমাণের সাথে প্রার্থীর আসল সম্পদের হিসাব না মিলিয়ে দেখলেও দুর্নীতি দমন কমিশন বা কর বিভাগ যদি অনুসন্ধান করতে চান তাহলে তারা এটি মিলিয়ে দেখতে পারেন।’
প্রসঙ্গত, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২রা নভেম্বর ইভিএম পদ্ধতিতে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
জা//দেশতথ্য// ১২ অক্টোবর ২০২২//

Discussion about this post