গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল ইউনিয়নের একটি গ্রাম শৌলদাহ মুশুরিয়া। এই গ্রামটির মাঝদিয়ে বয়ে গিয়েছে কুমার নদী। গ্রামটিতে প্রায় ৬হাজার লোকের বসবাস। নদীর পূর্ব পাড়ে রয়েছে ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়াও রয়েছে একাধিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। পশ্চিম পাড়ের শিক্ষার্থী ও জনগণের পূর্ব পাড়ে যেতে হলে নদী পার হয়ে যেতে হয়। পূর্বে পাড়ে বসবাসকারী জনগণের একই অবস্থা।
দু’পাড়ের জনগণের একমাত্র ভরসা ছোট্ট একটি ডিঙ্গি নৌকা। এই নৌকা দিয়েই দু’পাড়ের জনগণের যাতায়েত করতে হয়। নদীটি পার হতে গিয়ে একাধিক বার নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। নৌকা ডুবিতে গত ২বছরে ৮জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে এলাকাবাসি জানিয়েছেন।
শুধু শৌলদাহ মুশুরিয়াই নয়, এই স্থানের ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে আশপাশের কাফুলাবাড়ি, ভূতেরবাড়ি, জহরেরকান্দি, চলবল, নবগ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের জনগণ যাতায়েত করেন বলে জানিয়েছেন সাবেক ইউপি সদস্য ফান্সীস বৈদ্য।
তিনি বলেন, এই ছোট্ট খেয়া নৌকা দিয়ে আমাদের প্রতিদিন যাতায়েত করতে হয়। এই নৌকা ছাড়া আমাদের বিকল্প কোন পথ নেই। শৌলদাহ মুশুরিয়া গ্রামের উত্তর দিকে ৩কিলোমিটার দূরে পিড়ারবাড়ি সেতু। দক্ষিণে ৪কিলোমিটার দূরে রামশীল সেতু। এই ২টি সেতু পার হয়ে যেতে আমাদের অনেক সময় ব্যয় হয়। তাই আমরা এই খেয়া নৌকা দিয়ে এ পাড়, ও পাড় পারাপার হই। এই নদী পার হতে গিয়ে নৌকা ডুবিতে আমার স্কুল পড়–য়া মেয়ে লিথা বৈদ্য নিহত হয়েছে। আমরা এই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
স্বপন মধু বলেন, ২বছর আগে এই স্থানে নৌকা ডুবিতে আমার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে কবিতা মধু মারা যায়। এ ছাড়াও নৌকা ডুবিতে স্কুল ছাত্রী লিথা বৈদ্য, বৃদ্ধ সুরেশ হালদার, বিশ্বনাথ বাড়ৈ, প্রতিবন্ধী মিনী মুন্সীসহ গত ২বছরে ৮জন নিহত হয়েছেন। তাই দ্রুত একটি সেতু নির্মাণ এখন আমাদের সময়ের দাবি।
খেয়ার মাঝি শাওন গাইন বলেন, আমার এই খেয়া নৌকা দিয়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪শত লোক যাতায়েত করে। সকাল ৯টা থেকে ১০পর্যন্ত ও বিকেল ৪ থেকে ৫টা পর্যন্ত খেয়া নৌকায় লোক যাতায়েতের জন্য প্রচুর ভিড় হয়। এ সময়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা এই নৌকায় পার হন। অনেক সময় অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে।
২২নং শৌলদাহ মুশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাত্রী বিশ্বাস বলেন, পিড়ারবাড়ি ও রামশীল সেতু পার হয়ে আমাদের স্কুলে যেতে এবং আসতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা এই খেয়া নৌকা পার হয়ে স্কুলে যাই এবং আসি।
অভিভাবক মমতা জয়ধর বলেন, গত কয়েক বছরে এই নদীতে একাধিক নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এই নৌকা ডুবিতে অনেক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। তাই আমাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে তারা বাড়িতে না আসা পর্যন্ত চিন্তায় থাকি।
রামশীল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শ্যামল কান্তি বিশ্বাস বলেন, এলাকাবাসি দীর্ঘদিন ধরে শৌলদাহ মুশুরিয়া খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। এ বিষয়ে আমি একাধিক বার উপজেলার সমন্বয় সভায় দাবি উত্থাবন করেছি। এখন পর্যন্ত কতর্ৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। আমি এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে উক্ত স্থানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, আমি ইতোমধ্যে ওই স্থানে সেতুর নির্মাণের ব্যাপারে সমীক্ষা করার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশ দিয়েছি। আমরা দ্রুত উক্ত স্থানে সেতু নির্মানের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
জা// দৈনিক দেশতথ্য// 3 নভেম্বর, ২০২২//

Discussion about this post