জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা এলাকায় সিডিএ’র জায়গার উপর গড়ে ওঠে ‘ব্রিজঘাট কাচাবাজার’।
সম্প্রতি, উপজেলা থেকে বাজারটির ইজারা দরপত্র ঘোষণা করলে তা বাতিলে নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (সিডিএ)। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নির্দেশ উপেক্ষা করে বাজারটি ইজারা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ।
এমনকি এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সিডিএ’র চিঠির জবাব দিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) গত ২৩ ও ২৬ জানুয়ারি এবং ১লা মার্চ পর পর তিনটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত বাজারটি ইজারা হয়নি। অপরিকল্পিত ভাবে সড়কের দু’পাশে বাজার বসায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘ ৪৭ বছর যাবত সিডিএ ওই জমির উন্নয়ন কর পরিশোধ করেননি।’
পাশাপাশি তিনি সিডিএ’কে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়ালের ১৯৯০ সালের ২২৫ অনুচ্ছেদের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। যদিও সিডিও বলছেন, ‘ব্রিজঘাট বাজারটির তাঁদের অধিগ্রহণকৃত জমিতে পড়েছে। তাঁরা যে কোন মুহুর্তে এটি উচ্ছেদ করতে পারেন। সুতরাং ইজারা তালিকা থেকে বাদ দেয়ার কথা জানিয়ে দু’বার চিঠি দিয়েছেন।’
এস্টেট শাখার দাবি, কর্ণফুলী ইউএনও সুকৌশলে চিঠির জবাব না দিয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর মাধ্যমে পূনরায় সিডিএ সচিব বরাবরে চিঠি প্রেরণ করেছেন। ওই চিঠিতে ভূমি অফিস লিখেছেন, জনস্বার্থে অধিগ্রহণকৃত জমির সঠিক ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে ইজারা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার।’
একই চিঠিতে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি দাশ বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন, ‘বাজারটি উপজেলা হতে প্রতি বছর ইজারা প্রদান করা হলে ইজারার আয় হতে সুপরিকল্পিতভাবে শেড-ঘর, তোহা বাজার, ড্রেনেজ নির্মাণ বর্জ্যব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’
চিঠিতে তিনি আরও লিখেন, চরপাথরঘাটা মৌজার ৩ নং খতিয়ানে চউক/সিডিএ এর ১৫ দশমিক ৩৮ একর জমি রয়েছে। যার অধিকাংশই বেদখল। বিধি অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ হাট-বাজার ইজারা দেয়ার এখতিয়ার রাখেন। ওদিকে, সিডিএ বিষয়টি মানতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, ‘তাঁদের কোন জমি বেদখল নেই। ক্ষণস্থায়ী কেউ সড়কে বসলে তাকে বেদখল বলা যাবে না, রাস্তা সম্প্রসারণ করা হলে সবকিছু উচ্ছেদ করে সিডিএ।’
ওদিকে, হাট বাজারের নতুন নীতিমালায় রয়েছে, উপজেলার হাট-বাজারগুলোর মধ্যে অন্তত একটি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের জন্য রাখতে হবে। উপজেলা পরিষদ থেকেই একটি হাট-বাজার ইউনিয়ন পরিষদের জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। কিন্তু সে নিয়ম মানছে না উপজেলা পরিষদ। যদিও চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন চাইলে ব্রিজঘাট কাচাবাজারটি তাঁদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। ব্রিজঘাট বাজারটি এবারেই প্রথম ইজারা দাম ওঠে ১৫ লাখ টাকা। যা শোনে বাজারের ব্যবসায়িরাও বিব্রত।
এসিল্যান্ড পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘গত ২৩ জানুয়ারি উপজেলা মাসিক উন্নয়ন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উক্ত বাজারের রাজস্ব আদায় করতে ইজারা প্রদানের বিষয়ে সবার সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’
সিডিএ ইজারা না দিতে চিঠি দেওয়ার পরও কেন ইজারা বাতিল হচ্ছে না জানতে একাধিকবার কল করলেও ইউএনও মো. মামুনুর রশীদ ফোন রিসিভ করেননি।
সিডিএ এস্টেট অফিসার (বিল্ডিং) মোঃ আলমগীর খান বলেন, ‘ব্রিজঘাট বাজারের জমি চউকের অধিগ্রহণকৃত। এ জমি উপজেলা ইজারা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না।
এ ব্যাপারে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আমাদের সচিব স্যার চিঠি দিয়ে বাজার ইজারা না দিতে অনুরোধ করেছেন। এরমধ্যে আমরা এসিল্যান্ড অফিস থেকে তিনটি চিঠি পেয়েছি। ইউএনও অফিস থেকে কোন চিঠি এখনো পাইনি।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এর ভারপ্রাপ্ত সচিব অমল গুহ বলেন, ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষের এস্টেট শাখাকে আমি ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি আরেকটি চিঠি দিতে। এরপরেও যদি সন্তোষজনক জবাব না আসে তাহলে এস্টেট শাখা নিয়ম মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।’
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post