মোঃ খায়রুল ইসলাম, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে হিসাব মিলছে না নিম্নবিত্ত মানুষের। দিনে যে টাকা রোজগার করছেন চাল, ডাল ও তেল কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। রয়েছে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচও। মাসে দুই একবার খাদ্য তালিকায় মাংস রাখাও দায় হয়ে পড়েছে। ব্রয়লার মুরগির মাংস দিয়ে সে চাহিদা কিছুটা পূরণ করতে পারলেও এখন তাও সম্ভব হচ্ছে না। ধাপে ধাপে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দামও।
উপজেলার রতন বরিশষ গ্রামের দিনমজুর মোঃ বাদশা বলেন, ‘আমি মাইনষের বাড়িত কাম করি খাই। সারাদিন কাম কইরা সাড়ে ৩০০ টাকা পাই। বাড়িত বউ ও দুটা নাতি আছে। মেয়েটি বিয়ে দিয়েছিলাম মেয়ের জামাই সড়ক দূড়ঘটনায় মারা গেছে। তাই মেয়ে আমার কাছেই থাকে। আমার ২টা নাতি লেখাপড়া করে। ওদের পড়ালেখার খচর চালাতে হয় আবার বলছে নানা গোসত খামু। আইজ এনে এসেছি ব্রয়লারের গোস্তের হাটে। ওরা যে দাম চাইছে আমার মাথা ঘুরি গেইছে। কাটা ব্রয়লার গোস্তের কেজি চাওছে ৩০০ টাকা, আর গোটা ব্রয়লার গোস্তের কেজি চাওছে ২৫০ টাকা। দাম শুনি আমার গোস্ত খোয়ার হাউস (সাধ) মিটি গেছে। আমার মতন গরিবের গোস্ত খাওয়া হইবে না ।’
ঘাটাইল বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মোঃ জুয়েল বলেন, ধাপে ধাপে বেড়েছে ব্রয়লারের খাদ্যের দাম। সম্প্রতি কয়েক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে বিদ্যুতের দামও। মুরগির খাদ্যের দাম বেশি থাকলে মুরগির দামও বেশি থাকবে। অনেক ব্যবসায়ী যারা বাড়িতে মুরগির বড় বড় খামার গড়তো তারা এখন অতিরিক্ত লোকসানের কারণে খামার বাদ দিয়েছে। এখন থেকে এক বছর আগে খামার প্রতি যে ব্যয় হতো এখন তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতি বস্তা খাদ্যে দাম বেড়ে দ্বিগুণ। কয়েক দফা বেড়েছে বিদ্যুতের দামও।
ঘাটাইল বাজারের খুচরা মুরগি ব্যবসায়ী মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, মুরগী উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ ও ফিড। ফিড ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে অনেক। এসবের দাম বেড়ে যাওয়ায় মুরগির দামও পাইকারি ও খুচরায় বেড়েছে। আগে প্রতি হাটে যে বিক্রি করতাম এখন অর্ধেকেরও কম হয় বিক্রি। কম বিক্রি হওয়ার কারণে লোকসান গুণতে হচ্ছে আমাদের।
এভাবে লোকসান গুণতে থাকলে ব্যবসা পরিচালনা করা আমাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। করোনাকালে অনেক লোকসান গুণেছি। তার ওপরে এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় অধিক পুঁজি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। কিন্তু লাভের পরিমাণ কমে গেছে। আগে হাটের দিন বিক্রির জন্য দম ফেলতে পারতাম না। এখন ক্রেতার জন্য সারাদিন চেয়ে থাকতে হয়।
খামারি মোঃ আবু তালেব বলেন, নিজের পুঁজি যা ছিল দীর্ঘদিন লোকসান গুণতে গুণতে শেষ। এখন ব্যবসা প্রায় নেই বললেই চলে। এভাবে যদি আর কিছু দিন চলে তাহলে আমাদের মত কম পুঁজির ব্যবসায়ীরা আর টিকে থাকতে পারবে না।
ঘাটাইল বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মোঃ ফজলু তালুকদার বলেন, মুরগি উৎপাদনে যে জিনিষগুলো ব্যবহৃত হয় সেগুলোর দাম বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেড়েছে দাম। এ কারণে বিক্রি কমে গেছে। এতে ব্যবসায়ীরাও লোকসানের মুখে পড়ছেন।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post