রাশেদুজ্জামান,নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁর পত্নীতলায় মাদক বিরোধী অভিযানে উদ্ধারকৃত
ফেন্সিডিল কম দেখানোসহ আটকের পর মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত সিএনজিসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু সাইদ এর বিরুদ্ধে।
গত বুধবার (০৮ মার্চ) দুপুরে ৪ জনকে আটকের পর রফাদফার মাধ্যমে অভিযানের সময়, জব্দ তালিকা এবং আটক
মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা পাল্টে ফেলেন তিনি। পুলিশের এমন গ্রেফতার বাণিজ্যে জেলায় মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পাবার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সুধীজনরা।
পত্নীতলা থানায় দায়েরকৃত এজাহার অনুযায়ী, বুধবার (০৮ মার্চ) রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে উপজেলার আমাইড় ইউনিয়নের কান্তাকিসমত গ্রামের ঈদগাহ মাঠ এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। অভিযানে ওই এলাকা থেকে ২১ বোতল ফেয়ারডিল ও এমকেডিলসহ ফারুক হোসেন (২৬), জাহিদ হাসান (২১) এবং জিয়াউর রহমান (৩৬) নামে ৩জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। এরপর উদ্ধারকৃত ফেয়ারডিল ও এমকেডিল ডিবি
পুলিশের কাছে থাকা টর্চ লাইটের আলোতে দেখিয়ে জুয়েল আলম ও বেলাল হোসেন নামে স্থানীয় দুই ব্যক্তির থেকে জব্দ তালিকায় স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর নেয়া হয়। নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু সাইদ, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শাহাবুদ্দিন, কনস্টেবল রুবেল আলীসহ ডিবি পুলিশের সঙ্গীয় ফোর্স মাদক বিরোধী এই অভিযান পরিচালনা করেন।
পরে ৩ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে রাত ১২টা ১০ মিনিটে পত্নীতলা থানায় বাদী হয়ে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণির ১৪(খ)/৪১ ধারায় মামলা করেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু সাইদ।
অনুসন্ধানে ডিবি পুলিশের দায়েরকৃত এই মামলার বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এজাহারে পত্নীতলা উপজেলার আমাইড় ইউনিয়নের কান্তাকিসমত গ্রামে অভিযান পরিচালনার সময় রাতে উল্লেখ করলেও ডিবি পুলিশের এই অভিযান পরিচালনা করা হয় বুধবার (০৮ মার্চ) দুপুরে কান্তাকিসমত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
এলাকায়। ওই মুহুর্তে পার্শ্ববর্তী কান্তাকিসমত ঈদগাহ মাঠে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন ওই গ্রামের জুয়েল আলম, বেলাল হোসেন এবং আড়াইল গ্রামের রশিদ।
আকস্মিক কয়েকটি মোটরসাইকেল এবং ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা নিয়ে স্কুলের মাঠে এসে ফারুক হোসেন ও জাহিদ হাসানকে আটক দেখিয়ে জুয়েল আলম এবং বেলাল হোসেন এর থেকে জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর নেয় ডিবি পুলিশের সদস্যরা। তবে
স্বাক্ষীদের সামনে ফেন্সিডিলের বোতল গুনে দেখানো হয়নি। ডিবি পুলিশ আটক দুইজনকে সাথে নিয়ে ওই এলাকায় ছিলো রাত পর্যন্ত। আটক দুজনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন বিকেলে মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত সিএনজি, বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিলসহ মাসুদ ও জিয়াউর নামে আরো দুইজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তবে এদের মধ্যে সিএনজিসহ আটক মাসুদকে ছেড়ে দেয়া এবং উদ্ধারকৃত ফেন্সিডিল জব্দ তালিকায় না দেখিয়ে মোটা অংকের টাকায় রফা দফা করা হয়। রাতে
বিষয়টি নিয়ে রফাদফা সম্পন্ন করা হলে এদের মধ্যে জিয়াউরকে পূর্বের অভিযানে আটক দেখিয়ে মোট তিনজনের নামে মামলা রেকর্ড করা হয়।
মামলার স্বাক্ষী জুয়েল আলম বলেন, ওইদিন দুপুরে ঈদগাহ মাঠে দাঁড়িয়েছিলাম।
মোটরসাইকেল এবং অটোরিক্সা নিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি মাঠে এসে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিলো। এই গ্রামের ফারুক ও জাহিদকে আটক দেখিয়ে আমার থেকে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিলো।
আরেক স্বাক্ষী বেলাল হোসেন বলেন, দুইজনকে আটক দেখিয়ে আমার থেকে জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। তালিকায় কত বোতল ফেন্সিডিল জব্দ হয়েছে তা উল্লেখ ছিলো না।
ফারুক ও জাহিদ ছাড়া তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে আটক অবস্থায় আমাকে দেখানো হয়নি।
এ মামলায় রফাদফার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু সাইদ বলেন, রাতে অভিযান চালিয়ে ২১ বোতল ফেন্সিডিলসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জব্দকৃত ফেন্সিডিল সাক্ষীদের গুনে দেখানো সম্ভব হয়নি। আটক মাসুদকে ছেড়ে দেয়াসহ আমার বিরুদ্ধে আনা রফাদফার অভিযোগটি সঠিক নয়।
নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক (ওসি ডিবি) হাসমত আলী বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অসংখ্য ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে একটি পক্ষ। জব্দকৃত আলামত সাক্ষীদের সামনে গুনে দেখিয়ে তারপরই স্বাক্ষর নেওয়ার নিয়ম। মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত সিএনজি আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার নিয়ম নেই। অভিযোগগুলো ক্ষতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post