শেখ সুদীপ্ত শাহীন, লালমনিরহাট: ঘুঘু পাখির ডাকে এখন জেলার প্রতিটি গ্রামে সাধারণ মানুসের ঘুম ভাঙ্গে। হঠাৎ করে প্রকৃতিতে গৃহপালিত কবুতরের চেয়ে বন্য ঘুঘুর সংখ্যা বেড়ে গেছে।
ইংল্যান্ডের রাস্তা ঘাটে যেমন, প্রাকৃতিক পরিবেশে অসংখ্য কবিতর দেখতে পাবেন। তেমনি উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত জেলা লালমনিরহাটের প্রতিটি গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশে অসংখ্য ঘুঘু পাখি দেখতে পাবেন।
গাছের ডালে, বৈদ্যূতিক তারে, খেত খামারে প্রথম দেখাতে মনে হতে পারে গৃহপালিত পালিত কোন কবুতর পাখির ঝাঁক বসেছে। একটু ভাল করে দেখলে মনে হবে বন্য ঘুঘুর ঝাঁক। আজ ১২ এপ্রিল বুধবার ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে ছিলাম প্রাকৃতিক কিছু দৃশ্য উপভোগ করব ও ছবি তুলব। ছবি তোলা আমার এক রকম নেশা। এই ছবি তুলতে গিয়ে গ্রামের পথে পথে নির্জন জলাশয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়েছি। মূলত দেখেছি পাখি ও প্রকৃতিকে। এসব করতে গিয়ে নিন্দুরে কাছে পেয়েছি নানা অপবাদ। আমাকে সীমান্তে যেতে নিষেধ করা হয়। আমার শ্বশুর বাড়ি জাওরানি, দৈইখাওয়া ও ভেলা গুড়ি সীমান্তে। জন্মস্থান লালমনিরহাট শহর এই শহর হতে মাত্র ৫ কিলোমিটারের মধ্যে মোগলহাট ও কুলাঘাট সীমান্ত। জেলা শহরটি সীমমান্ত শহর। তাহলে কেন করে সীমান্তে না গিয়ে জীবন জীবিকা চলবে আমার জানা নেই। যাক নিন্দুকেরা যাই বলে বলুক, সীমান্ত, প্রকৃতি ও বন্য পাখি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। সীমান্ত জেলা লালমনিরহাট ভারতের বুক চিরে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে উত্তরাঞ্চলের প্রধান দুইটি নদী তিস্তা ও ধরলা নদী। এছাড়াও সানিয়াজান, বুড়িতিস্তা, গিদারিয়া, মালদা, সতী, রতœাই নদী প্রবাহিত। প্রায় ২৮৫ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তে প্রায় উন্মুক্ত স্থান রয়েছে তিস্তা ও ধরলা নদীসহ প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। সীমান্ত কাঁটারাতের বেড়া এলাকা কিছুটা নির্জন। সীমান্তের নোম্যান্সে ল্যান্ডে বেশকিছু অশ্বক গাছ রয়েছে। গাছ গুলি শতবছরের অধীক বয়সের। নির্জন গ্রাম সীমান্ত গ্রাম গুলো। গ্রামের প্রতিটি ঝোপঝাড়, গাছ পালায় বসতি গেড়েছে বন্য ঘুঘু পাখি। ঘুঘু পাখি বছরে ৩/৪ বার ডিম পাড়ে। ২৮ দিন ডিম তা দেয়। বাচ্চা ফুটে বেড় হরে না উড়া পর্যন্ত বাবা মার তত্বাবোধানে পালা করে খাবার খাওয়ায়। একদম গৃহপালিত কবুতরের জীবন চক্রের সাথে হুবহু মিল পাওয়া যায়। কবুতুর ও ঘুঘু পাখি একই প্রজাতির পাখি বলে পাখি প্রেমিকরা মনে করে। কবুতর খুব সহজে পোষমানে কিন্তু ঘুঘু পোষ মানে না। ঘুঘু স্বাধীন প্রকৃতিতে বসবাস করতে বেশী পছন্দ। ঘুঘু পাখি লাজুক প্রকৃতির পাখি। কোলাহল মুক্ত পরিবেশে এরা দলবদ্ধ বসবাস করে। আহারের ফাঁকে ফাঁকে ঘুউ ঘুউ করে ডাক দেয়। ঘুঘু কে প্রকৃতির সৌন্দর্য বলা হয়ে থাকে।
এক সময় গ্রাম ও শহরে প্রকৃতিতে বন্য পরিবেশে দাপিয়ে বেড়াত কাক, চড়–ই, দোয়েল, শ্যামা, শালিক, বুলবুলি, টুনটুনি, প্যাচা, ফিরিংগী, মাছ রাঙ্গা, সাদা বক,কানি বক প্রচুর দেখা যেত। এখন সেসব দেখা যায়না। প্রকৃতি হতে প্রায় হারাতে বসেছে বন্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকা নানান পাখি। এই পাখি হ্রাসের প্রধান প্রতিবন্ধকতা, চাষাবাদে বিষ প্রয়োগ, ইন্ট্রারনেট ও মোবাইল টাওয়ারের উন্মুক্ত ফ্রিকুয়েন্সি রে প্রভুতি। তাছাড়াও বড় বড় গাছ পালা কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। এখন আর আগের মত শতবছরের পুরনো কোন গাছ তেমন দেখতে পাওয়া যায় না। গাছ নিধনের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশে পাকির আবাস স্থল হ্রাস পেয়েছে। এমন বৈরী পরিবেশে ঘুঘু পাকির বংশবৃদ্ধি সত্যই প্রকৃতিতে আর্শীবাদ স্বরুপ দেখা দিয়েছে। এখন গ্রামীণ লোকালয়ের একটু আড়ালে নির্জন পরিবেশে ঘুঘু পাখি কে সর্বাধিক সংখ্যায় দেখা যায়।
গৃহীনি মোছাঃ জয়গুন নেছা (৬০) জানান, ঘুঘু পাখি এক সময় বাড়ির আশেপাশে ঝোপঝাড়ে, শিম, লাউয়ের ঝাংলির আড়ালে বাসা বেঁদে ডিম ফুটাতে দেকা যেত। ঘুঘু সারা বছরে কবুতরের মত ডিম দেয় ও বাচ্চা ফুটায়। হঠাৎ ঘুঘুর সংখ্যা হ্রাস পেয়ে গিয়ে ছিল কিন্তু করোনাকালীণ দুই বছরে প্রকৃতিতে ঘুঘু পাখি পুনরায় আদিপত্য নিয়ে ফিরে এসেছে। ঘুঘু কবুতরের মত সুখের পাখি। ঘুঘু বেড়ে যাওয়ায় মনে করতে পারি বাংলার মানুষের সুখ সমৃদ্ধি বেড়েছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post