শেষ পর্যন্ত রত্নাই নদীর ওপর সেতু নির্মানের কাজ শুরু হয়েছে। এই সেতুটি নির্মাণ হলে কয়েক শত কোটি টাকা ব্যয়ে ধরলা নদীর ওপর শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সেতুর সুফল পাবেন লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ।
জানা গেছে, লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্বাবোধানে জেলার কুলাঘাট ইউনিয়নে ষ্ট্রীল সেতুর পাশ দিয়ে রত্নাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এই সেতুটি নির্মাণ হলে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর, শিমুলবাড়ী, বালারহাট, গঙ্গারহাট এলাকায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ প্রকৃত অর্থে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় ধরলা সেতু নির্মাণের শতভাগ সুফল পেতে যাচ্ছে। সেনারহাট স্থলবন্দর হতে ছেড়ে আসা ট্রাকা গুলো ২৫ কিলোমিটার ঘুরে কুড়িগ্রাম সদর দিয়ে লালমনিরহাট তিস্তা সেতু দিয়ে ঢাকা সহ দেশের অন্য স্থানে যেতে হবে না। তখন সরাসরি শেখ হাসিনা দ্বিতীয় ধরলা সেতুর ওপর দিয়ে লালমনিরহাট তিস্তা সেতু হয়ে ট্রাক গুলো চলাচল করতে পারবে। ধরলা শেখ হাসিনা দ্বিতীয় সেতু উদ্বোধনের পর দীর্ঘ পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়েছে। এতে করে শুধুমাত্র পিকাপ, রিকসা, বাইসাইকেল, মোটর সাইকেল ও পায়ে হেঁটে ধরলা নদী পাড় হওয়া যায়। এতে করে আংশিক সুফল পেলে এখন সেতুর পুরোপুরি সুফল পেতে যাচ্ছে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট জেলাবাসী।
চলতি বছর ৮ মার্চ পাশের লালমনিরহাট সদরের কুলাহাট এলাকার প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে রত্নাই নদীর উপর ১৩০.৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে ব্রিজের কাজ শুরু হয়েছে। এই ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী লালমনিরহাটের লাখো মানুষ শেখ হাসিনা দ্বিতীয় ধরলা সেতুর শতভাগ সুফল পেতে যাচ্ছে। নতুন ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে ধরলা সেতু দিয়ে মালবাহী ভারী যানবাহন, ফুলবাড়ী থেকে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুরসহ ঢাকাগামী বাস চলাচল শুরু হলে ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামরী উপজেলা, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থনৈতিক সফলতার দ্বার দ্বিগুণভাবে উম্মোচন হবে বলে প্রত্যাশা জেলার মানুষের।
লালমনিরহাট চেম্বার অফ কমার্স এনইড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি শেখ আব্দুল হামিদ বাবু জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে রত্নাই ব্রিজটির মাধ্যমে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে শতভাগ অবদান রাখবে। এর পাশাপাশি উত্তর ধরলার মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। যার ফলে সোনাহাট স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ধরলা সেতুটি উদ্বোধন করেন। সেই দিন থেকে মানুষের চলাচলসহ ছোট ছোট হালকা যানবাহন চলাচল শুরু হলেও পণ্য পরিবহনের জন্য ভারী যানবাহন ও ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসসহ কোনো যানবাহন আজও চলাচল করতে পারছে না। ফলে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে শতভাগ সুফল পেতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেতু থেকে দেড় এক কিলোমিটার দূরে লালমনিরহাটে কুলাঘাট এলাকায় রত্নাই নদীর ওপর জরাজীর্ণ বেইলি ব্রিজটি। ছোট আকারের বেইলি ব্রিজটির ভগ্নদশা হওয়ায় শুধু মাত্র হালকা যানবাহন ছাড়া পণ্য পরিবহনে ভারী যানবাহনসহ ঢাকাগামী কোনো বাস চলাচল করতে পারেনি।
কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইদ্রিস আলী জানান, কুলাঘাটে রত্নাই নদীর ওপর জরাজীর্ণ বেইলি ব্রিজের কারণে প্রায় ৭০ কিলোমিটার ঘুরে ঢাকা, রংপুর ও লালমনিরহাটসহ কুড়িগ্রাম শহর থেকে পণ্য আনতে হয়। এতে গাড়ি ভাড়া দ্বিগুণের পাশাপাশি সময়ও অনেক বেশি লাগে। তবে ব্রিজের কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুবই খুশি। ব্রিজটি নির্মাণ শেষ হওয়া মাত্রই ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং লাভবান হবে এ অঞ্চলের সামাজিক অর্থনীতিও।
লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালিদ সাইফুল্লা সর্দার জানান, প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩০.৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি কনক্রিট অ্যান্ড স্টিল টেকনোলজি লিমিটেড নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগও কাজের দেখাশুনা করবে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হবে। ২০১৮ সালের ৩ জুন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডির) তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থ ও প্রযুক্তিতে ১৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৫০ মিটার দীর্ঘ সড়ক গার্ডার সেতুটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সবার চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//এপ্রিল ১৩,২০২৩//

Discussion about this post