চলেছিলাম আমঝুপি থেকে মেহেরপুরের দিকে। হঠাৎ কাজলা নদীর উপরে ব্রিজ পার হওয়ার পূর্বেই গাড়ির গতি থেমে যায়। মনে পড়ে যায়, মাইলমারী গ্রামের টিনের ছাউনির সেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের কৃষ্ণচূড়া গাছটির কথা। মনে পড়ে যায় সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম মাস্টারের কথা। এখানের কৃষ্ণচূড়া গাছটিই মনে করিয়ে দেয় সেই অতীতের কথা। এমনি মেহেরপুরের প্রতিটা সড়কেই কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলো মনে করিয়ে দেবে অতীতের কথা।
মেহেরপুরে চলছে আগুন ঝরা গ্রীষ্ম। সকাল থেকে দুপুর অবধি সবখানে প্রচন্ড তাপদাহ আর গরম। আর বিকেলের দিকে মেঘের ঘনঘটা, কোথাও কোথাও দমকা বাতাস, মেঘের গর্জন ও হালকা বৃষ্টি। এরই মাঝ চলছে শহর থেকে গ্রামের প্রতিটা সড়ক দাপিয়ে কাঁপিয়ে যান্ত্রিক যানবাহনগুলো। এ যেন এক অস্বস্তির জেলা হয়ে পড়েছে মেহেরপুর। এরই মাঝে ভিন্ন রূপ দেখা গেছে প্রকৃতির। প্রকৃতির এই শোভিতো রূপ এক মুহূর্তের জন্য হলেও শীতল করে ক্লান্ত মানুষের মন। দিগন্ত জুড়ে সবুজ শ্যামল আর বাগান জুড়ে আম, কাঁঠাল এবং লিচুর সমাহারের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সড়কে কিছুদিনের অতিথি হয়ে এসেছে কৃষ্ণচূড়া।
মেহেরপুর জেলা শহর ছাড়াও সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার প্রায় প্রতিটা সড়কেই দেখা মিলেছে লাল হয়ে ফুটে থাকা থোকায় থোকায় কৃষ্ণচূড়ার। এ ফুলের শোভায় সড়ক কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাউন্ডারির নতুন রূপ দেখতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে যুবক-যুবতীসহ সকল ধরনের মানুষ। কোথাও কোথাও প্রেয়সীর কৃষ্ণ চুল সরিয়ে সেখানে কৃষ্ণচূড়া পরিয়ে দিচ্ছে প্রেমিক এমন দৃশ্যও চোখে মেলে। কোথাও কোথাও ফুল হাতে ঝরা ফুলের গালিচায় হাঁটছে শুভ্র পায়ের প্রেয়সী। কেউ বা ঝরা ফুলগুলো কুড়িয়ে সমর্পণ করছে প্রেমিকের হাতে। কেউ কেউ ক্যামেরায় বন্দি করছেন এসব দৃশ্য। কোন কোন কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে তীব্র গরমে একটু প্রশান্তি খুঁজতে ক্ষণিকের জন্য আশ্রয় নিচ্ছেন সড়কে চলাচলকারী পাখি ভ্যান, রিকশা চালক ও মোটরসাইকেল আরোহীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষগুলো।
হিজলবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে অবস্থান করা মোটরসাইকেল আরোহী মিশুক জানান, জৈষ্ঠ্যমাসের দুপুরের তাপদাহে একটু শান্তির বাতাস পেতে কৃষ্ণচূড়ার গাছটি সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। ঝিরিঝিরি বাতাসে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে।
আমঝুপি গ্রামের ব্যবসায়ী রুহুল আমীন জানান, কৃষ্ণচূড়া গাছ পূর্বের মতো তেমন একটা চোখে পড়েনা। অতীতের গাছগুলো নিধন করে এখন নিত্য নতুন জাতের গাছ রোপন করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন সড়কের পাশে কিছু গাছের দেখা মেলে যার শোভা সত্যিই মুগ্ধ করে।
বামনপাড়ার ব্যবসায়ী আশা জানান, মেহেরপুর শহরে এখনও কিছু কৃষ্ণচূড়ার গাছ রয়েছে, যা শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। তিনি গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে যুগ যুগের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বনবিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
যে গাছগুলোর নিচে ছোটখাটো যানবাহন চালক ও সাধারণ মানুষগুলো বসে কিংবা দাঁড়িয়ে এ মৌসুমে শহরের যন্ত্র আর যন্ত্রণা ভোলার একখণ্ড অবসর পেয়েছেন।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ২১ মে ২০২৩

Discussion about this post