পিত্তথলির পাথর অপারেশন করাতে গিয়ে ৫ জুন মিলি বেগম (৪৮) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। ডাক্তার বলছেন অপারেশনের সময় হার্ট এ্যাটাকে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আবার রোগীর লোকজন বলছেন ডাক্তার ভূল করে রোগীর নাড়ীভূড়ি কেটে ফেলায় তার মৃত্যু হয়েছে।
এই ঘটনার পর ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যান ডাঃ আব্দুল বারী খন্দকার। এরপর ক্লিনিকের পরিচালক এনামুল হক বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করলে স্থানীয়রা ক্লিনিকটি ঘেরাও করেন। পরে রাত ১১টার দিকে ক্লিনিক থেকে এনামুল হককে উদ্ধার করে সরিয়ে নেয় পুলিশ।
সোমবার (০৫ জুন) রাত ১২টার দিকে শহরের চকদেব ডাক্তারপাড়া মহল্লায় মায়ের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে মিলি বেগমের ছোট ছেলে ঢাকার তেঁজগাও কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তায়েব হাসান বলেন, মাকে বিকেলে ভর্তি করিয়েছিলাম। সাড়ে ৫টায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। মনিটরে অপারেশনের দৃশ্য দেখেছি। অপারেশনের পর বেডে নেয়ার ৫০ মিনিটের মধ্যেই মা মারা যান। ওরা ভুল অপারেশন করে পেটের নাড়ি কেটে আমার মা’কে মেরে ফেলেছে। আমি ওই ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকের নায্য বিচার চাই।
বিকেল সাড়ে ৫টায় শহরের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার বলাকা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে শহরের চকদেক ডাক্তারপড়া মহল্লার সিরাজুল ইসলাম বাবুর স্ত্রী মিলি বেগম (৪৮) এর পিত্তথলির অপারেশন করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল বারী খন্দকার।
নিহতের পরিবারে সদস্যদের অভিযোগ, মিলি বেগম সবল ছিলেন। তার ডায়াবেটিকসহ অন্যান্য জটিল রোগ কখনোই ছিলো না। দীর্ঘ ১ মাস আগে থেকে শারিরিক অসুস্থতাবোধ থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল বারী খন্দকারের কাছে যান তিনি। ওই সময় পরীক্ষা নীরিক্ষায় মিলি বেগমের পিত্তথলিতে পাথর আছে বলে জানানো হয়।
পাথর অপারেশনের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে বলাকা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ২০৩ নম্বর বেডে সোমবার (০৫ জুন) বিকেল ৫টার দিকে ভর্তি হোন মিলি বেগম। এরপর সাড়ে ৫টায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে চিকিৎসক তার পেটের বেশ কয়েকটি নাড়ি কেটে ফেলেন। এতে মিলির শারিরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং মৃত্যু হয়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল বারী খন্দকার বলেন, অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার আগে রোগীর সবকিছুই স্বাভাবিক ছিলো। অপারেশন শুরুর পর শুরু থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া ডিসপ্লেতে দেখানো হয়েছে। এরপর তাকে বেডে নেয়া হলে সম্ভবত হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে। ভুল অপারেশনে মৃত্যুর অভিযোগটি মিথ্যা ও ভিত্তীহীন।
বলাকা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পরিচালক এনামুল হক বলেন, মিলি বেগমের অপারেশন অভিজ্ঞ সার্জন দিয়েই করানো হয়েছে। রোগীর মৃত্যুটি স্বাভাবিক ছিলো। মৃত্যুর পর সমঝোতার চেষ্টার অভিযোগটি সঠিক নয়।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, বলাকা ক্লিনিকে রাতে একটা হট্টগোল সৃষ্টি হয়েছিলো। পরে সেখানে গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
নওগাঁর সিভিল সার্জন আবু হেনা রায়হানুজ্জামান সরকার বলেন, শহরের কোন ক্লিনিকে অপারেশনের সময় রোগীর মৃত্যু হয়েছে এমনটি জানা ছিলো না। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ০৭,২০২৩//

Discussion about this post