এগিয়ে নৌকার মাঝি আনোয়ারুজ্জামান পিছিয়ে বাবুল
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামী ২১ জুন (বুধবার) অনুষ্ঠিত হবে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে এরিমধ্যে নগরীর ওয়ার্ডগুলোতে প্রচার-প্রচারণা করছেন প্রার্থীরা। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ২০২৩ এ আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় যদিও নির্বাচনী উত্তাপ অনেকাংশেই কমে গেছে। তবু পুরোদমে চলছে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। কাগজে কলমে ৭ জন মেয়র প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় আছেন মাত্র দু’জন। আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রচার ও ভোটের মাঠে এগিয়ে থাকলেও জাপার মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী বরিশাল নির্বাচনের পর সিলেট সিটি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলন সমর্থকদের ভোট জাপার প্রার্থী নজরুল ইসলামের পক্ষে যাওয়ার কথা থাকলেও তাদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা ও গণসংযোগ এখনো এদের ধারে কাছে পৌছতে পারেনি। নামমাত্র দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে রুটিন ওয়ার্ক চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র প্রার্থী বাবুল। অথচ সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভোটাররা নজরুল ইসলাম বাবুলের মার্কা লাঙ্গলে ভোট দিতে উদগ্রীব। জাপার নির্বাচনী কলাকৌশল এখনো এসব সাধারণ ভোটারদের কাছে পৌছতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে আওয়ামীলীগের সুশৃঙ্খল কর্মী বাহিনী, সংঘবদ্ধ প্রচার বিভাগ, প্রবাসীদের নিরবিচ্ছিন্ন গণসংযোগ এবং ভোট সংগ্রহের নিত্য নতুন কৌশলের কাছে জাপার নজরুল ইসলাম বাবুলের নির্বাচনী কার্যক্রম অনেকটা অসহায়।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মেয়র প্রার্থী থেকে শুরু করে কাউন্সিলর প্রার্থী সবাই। সকলেই নির্বাচনে ভোট নিজেদের দিকে টানতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছেন ভোটারদের কাছে। নির্বাচন হতে বাকি আর তিন দিন। প্রচার, প্রচারণার শেষ সময়ে এসে মেয়র প্রার্থীরা এখন গণসংযোগের পাশাপাশি মতবিনিময় সভা আর উঠান বৈঠক করে ভোটারদের কাছে নানা পরিকল্পনার কথা বলছেন। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে এলাকার সমস্যাগুলো শুনে সেসব সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। মেয়র প্রার্থীদের সমর্থনে তাঁদের কর্মীরাও পৃথকভাবে পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন।
মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রতিশ্রুতিতে ভোটারদের বলেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন থেকে শুরু করে জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয় পানির সংকট দূর, শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, সুরমা নদী খনন ও নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করবেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর দেশে এসে সিসিক নির্বাচনে লড়ছেন তিনি। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অসত্য তথ্য দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তির অভিযোগ, নৌকার প্রার্থী হলফনামায় জন্মতারিখ ও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি অসত্যভাবে উপস্থাপন করেছেন। এর ফলে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা হোক বলে দাবী করেছেন। কিন্তু সেটার এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আনোয়ারুজ্জামান গভীর রাত অবধি প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ১৭ জুন শনিবার দুপুরে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে তার ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ও সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুল শনিবার দুপুর ২টায় নগরীর দক্ষিণ সুরমার ক্বীন ব্রীজের মোড় থেকে লাউয়াই পর্যন্ত এলাকায় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সাথে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আমি প্রথম থেকেই করে আসছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের আচরণ আমাকে ব্যথিত করেছে। দেখা যাক আল্লাহ আমার জন্য কি রেখেছেন। তবে নগরবাসী কোন ধরনের ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, ইভিএম এ ভোটের শংকা থাকলেও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হলে লাঙ্গলের বিজয় নিশ্চিত। দক্ষিণ সুরমা এলাকার সন্তান হিসেবে আমি আগামী ২১ জুনের নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছি। আমার বিশ্বাস দক্ষিণ সুরমার নাগরিক সহ নগরবাসী আমাকে তাদের পবিত্র আমানত দিয়ে মেয়র পদে নির্বাচিত করবেন। গণসংযোগকালে নজরুল ইসলাম বাবুল এর সাথে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আব্দুলাহ সিদ্দিকী, সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আব্দুস শহিদ লস্কর বশির সহ জাতীয় পার্টির স্থানীয় ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রিটার্নিং অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০২৩ এ মেয়র পদে ১১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে মোট ২৭৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৮৯ জন প্রার্থী।
সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতায় ৬৯ জন ‘স্বশিক্ষিত’ ও একজন ‘স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন’। ৫১ জন প্রার্থী মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। ৫০ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। ইসির তথ্যমতে, মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার হলেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩ জন, আর ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন হলেন নারী ভোটার।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হন বদর উদ্দিন কামরান; ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও তিনি মেয়র নির্বাচিত হন কারাগার থেকে। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। তবে এবার তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হননি।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ১৭,২০২৩//

Discussion about this post