প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরে আসলেন, দেখলেন, লাখো মানুষের মন জয় করলেন। এই হলো জাতিরজনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রংপুর শহরের জনসভামাঠ ছাপিয়ে চারিপাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার বিস্তৃতি লাভ করেছে। শুধু মাত্র রংপুর জেলা স্কুল মাঠ ও তার চারপাশে প্রায় ১০ লাখ সাধারণ মানুষের সমাগম হয়েছে।
এযাবৎ কালের স্মরণীয় জনসমাবেশ ছিল রংপুরের জনসমাবেশ। ১১ সালের ৮ জানুয়ারী তিনি একই মাঠে জনসভায় বলেছিলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় গিয়ে রংপুরের মঙ্গা দুরকরতে কাজ শুরু করি। সেটা শেষ করতে পারি নাই। এবার মঙ্গা যাদু ঘরে পাঠিয়ে দিব।
প্রায় ১৪ বছর পর ঐতিহাসিক ভাবে ঘটনার প্রতিফলন ঘটেছে। সত্যই মঙ্গা রংপুর এখন নেই। তাই শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় মঙ্গা যাদু ঘরে চলে গেছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে আর কখনো উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা আসতে পারবেনা। মঙ্গা চিরবিদায় নিয়েছে। ‘আজকের বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমাতে পেরেছি। আওয়ামী লীগ সরকার যতবার ক্ষমতায় এসেছে এই রংপুরে কখনও মঙ্গা হয়নি। এই রংপুরে কখনও খাদ্যের অভাব ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ও নৌকার মার্কা ভোট পেলে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’ বাংলাদেশ সারা বিশ্বে এখন উন্নয়নের রোলমডেল। বিশ্ব হতবাক। ইউক্রেণ যুদ্ধের অর্থনৈতিক ধস সারা পৃথিবীকে ছুঁতে পেরেছে। আমরাও মুক্তি পাইনি তবুও অর্থনীতির সূচক গুলো ধরে রেখেছি।
গতকাল বুধবার (২ আগস্ট) রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। কয়লার দাম ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে কয়েকদিন কষ্ট হয়েছে। এরপর এখন ঠিক হয়ে গেছে। বিদ্যুতের আর কোনও সমস্যা থাকবে না। তিনি বলেন, ‘আমি খালি হাতে আসিনি। আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। যাতে প্রত্যেকটা উন্নয়ন তরান্বিত হয় তার ব্যবস্থা করেছি।’আজকে ২৭টি প্রকল্প উদ্বোধন করে গেলাম।
আগষ্ট মাস দুখের মাস এই মাসে আমি আমার পরিবারের সকলকে হারিয়েছি। তবুও দেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে রংপুরে এসেছি। রংপুর আমার প্রিয় জায়গা। ১৯৮১ সালে দেশে এসে প্রথম আমি রংপুরের প্রতিটি জেলায় উপজেলায় ছুটে বেড়িয়েছি। এমন কোন ইউনিয়ন নেই আমি যাইনি। ১৯৯৬ সালে মঙ্গা দুরকরতে পদক্ষেপ নেই। মঙ্গাকে বিদায় জানাই কিন্তু ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে লুটপাট করে পুনরায় দেশে দূর্ভিক্ষ নিয়ে আসে। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় দুই কোটি ৩৫ লাখ যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। রংপুরকে বিভাগ করেছি। ১৯৯৬ সালে যমুনা সেতু করায় রংপুরের উন্নয়ন দ্রুত হয়েছে। দেশের প্রতিটি কমুনিটি ক্লিনিকে ৩০ প্রকার ঔষদ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করে নদী খননের কাজ চলছে। বেশ কিছু নদী খননের কাজ শেষ হয়েছে। বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, স্বামীপরিত্যাক্ত ভাতা, প্রতিবন্ধীভাতা আওয়ামীলীগ সরকার চালু করেছে। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে ২০১০ সালে ১০ টাকায় ব্যাংক এ্যাকউন্ট খুলার ব্যবস্থা আওয়ামীলীগ সরকার করেছে। দশ কোটি ১০ লাখ কৃষক কে কৃষি উপকরণ উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে কৃষি কার্ডের মাধ্যমে। ঘরে ঘরে বিদ্যূত দিয়েছি। গাইবান্ধায় ২০০ মেঃওয়ার্ড সৌরবিদ্যূত কেন্দ্র চালু হচ্ছে। রংপুর পল্লী উন্নয়ন একাডেমী হয়েছে। রংপুরে পুলিশ হাসপাতাল, রংপুর মা ও শিশু ১০০ শস্যার হাসপাতাল চালু হয়েছে। রংপুর বগুড়া গ্যাস সরবরাহ লাইন চালু হয়েছে। আসাম হতে সরাসরি পাইপ লাইনের মাধ্যমে সৈয়দপুরে ডিজেল আসছে এখন। সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়ার্ড বিদ্যূত উৎপাদন হচ্ছে। কুড়িগ্রামের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় , নীলফামারীতে মেডিকেল কলেজ, লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়, সৈয়দপুর বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এখন ভারত, নেপাল, ভুটান সরাসরি সৈয়দপুর হতে বিমান চলবে। সৈদয়পুর বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলওয়ে কারখানাটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। চিলাহাটি টু ভারত রেলযোগাযোগ চালু হয়েছে। এই রেলপথটি ১৯৬৫ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পঞ্চগড়, রংপুর , চিলাহাটি আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা হয়েছে। সৈয়দপুরে উত্তরা ইপিজেট চালু হয়েছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ড. ওয়াজেদ মিয়া মেরিন একাডেমি তৈরি করা হয়েছে। সেখান হতে প্রশিক্ষন নিয়ে দেশে বিদেশে কর্ম সংস্থানের সুযোগ হবে।

আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে উন্নয়ন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে লুটপাট। আন্দোলনের নামে বিএনপি আগুন সন্ত্রাস করছে। শুধু জ্বালাওপোড়াও করছে। এবার দেশের মানুষ তাদের ছাড়বে না। শেখ হাসিনা বলেন, এই মূহুতে জনসভা স্থলে এসে শুনতে পেলাম দূর্নীতির বরপুত্র তারেক জিয়ার ৯ বছর ও তার স্ত্রী‘র দুইটি মামলায় ৩ বছর জেল হয়েছে। এদেশে দূর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হবে। এসব মামলা তাদের পছন্দের মঈনুদ্দিন, ইয়াজউদ্দিন ও ফকরুদ্দিন করেছে। আওয়ামীলীগ করেনি। ওরা তো তাদের প্রিয় লোক ছিল। তাদের করা মামলায় শাস্তি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গানের সুরে বলেন, ”হাকাও গাড়িয়াল মুই চিলমারীর বন্দরে যাইম” পরক্ষনেরই বলেন, এবার গরুর গাড়িতে নয়, ট্রেনে চেপে চিলমারী বন্দরে সকলে যাবে। চিলমারীর নদী বন্দরটি পুনরায় আধুনিকায়ন করে চালু করে দেয়া হবে। রংপুরের বন্ধ চিনি কল বেসরকারী খ্যাতে পুনরপায় চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে করে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দেন বাংলাদেশের কোন মানুষ ভুমিহীন থাকবেনা।
ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলার ২১১টি ইউনিয়ন ভুমিহীন মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মঙ্গা চলছে তার মধ্যে বর্তমান সরকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষনা করেছে। বিএনপি সরকার সর্বোচ্চ বাজেট ঘোষনা করেছিল ৬১ হাজার কোটি টাকার।
দেশের মানুষের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, কথা দেন প্রতিজনে ৩টি করে বৃক্ষরোপন করবেন। দেশের আবাদ যোগ্য ইঞ্চিও মাটি অনাবাদি রাখবেন না। সরকার দেশের উবৃত্ত খাবার সংরক্ষনে বিশেষায়িত হিমায়িত শস্য গোডাউন নির্মাণ করোর উদ্যোগ নিয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের সান্তাহারে বিশাল সায়লো নির্মাণ করা হয়েছে। এমন সায়লো প্রতিটি জেলায় ১টি করে নির্মাণ করা হবে। শিক্ষা বিকাশে প্রাক প্রাথমিক হতে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় ২ টি করে সরকারী কলেজ ও একটি করে সরকারি স্কুল করে দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো এখন ৪ তলা করে করা হচ্ছে। শেখ রাসেল একাডেমি করা হবে। ড.ওয়াজেদ মিয়া আইটিপার্ক করা হয়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলায় জেলা ১টি করে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//আগস্ট ০২,২০২৩//

Discussion about this post