সুনামগঞ্জে বিএডিসির মালামাল চুরির প্রতিবাদ করে চাকরি হারালেন বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হাসনা বেগম। তবে তিনি দমে থাকার পাত্র নন।
বিষয়টি জেলা প্রশাসন,সাংবাদিক ও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দকে অবগত করে আইনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি।
সুনামগঞ্জ শহরের হাজীপাড়া আবাসিক এলাকাধীন বিএডিসি জেলা অফিসের পুরাতন যন্ত্রপাতি কালোবাজারে বিক্রয় করে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এর দায়ে জুলুমবাজ কর্মকর্তা ও কর্মজারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন ঐ মুক্তিযোদ্ধার কন্যা।
৮ আগস্ট সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগটি দায়ের করেন তিনি।
সুনামগঞ্জ বিএডিসির হাজিপাড়া কার্যালয়স্থিত সহকারী প্রকৌশলী হোসনে আর রাফি,উপ সহকারী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ,দাড়োয়ান আল আমিন,অবসরপ্রাপ্ত ওয়েলডার তোফায়েল আহমদ ও মাহমদা বেগম এর বিরুদ্ধে ঐ অভিযোগটি দায়ের করা হয়।
অভিযোগে প্রকাশ, গত ২৭/০৯/২০২২ইং তারিখে ৪৫৬ নং স্মারকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ এনে বিএডিসির পুরাতন বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ২২/১২/২০২২ইং তারিখে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৫/৬ লাখ টাকা দরে নিলাম দেখিয়ে বিক্রয় করেন সহকারী প্রকৌশলী হোসনে আর রাফি ও উপ সহকারী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদগং। এর এক সপ্তাহ পরে তারা একে অপরের যোগসাজসে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে সুনামগঞ্জ বিএডিসি অফিস প্রাঙ্গণে ও গোডাউনে থাকা অবশিষ্ট প্রায় ১০ হাজার ফিট পুরাতন তামার তার,পুরাতন লঞ্চের ইঞ্জিনসহ মালামাল,রাষ্ট্রন ও কবোতা ইঞ্জিন,ডয়েল ইঞ্জিন,পাইপ,পাম্প,জানালা গ্রীল ইত্যাদি বিক্রয় করে প্রাপ্ত টাকা সরকারী কোষাগারে জমা না দিয়ে বক্তিগতভাবে কয়েক লক্ষ টাকা পকেটস্থ করেন। সুনামগঞ্জ শহরের ওয়েজখালীস্থ বিসিক শিল্পনগরীর ভিতরে গোপন স্থানে রেখে একে অপরের যোগসাজশে কালোবাজারে বিএডিসির পুরাতন যন্ত্রপাতি বিক্রয় করে ঐ চক্রটি। চোরাইকৃত মালামাল পাচার ও বিক্রয়কালে সাবেক গার্ড তেঘরিয়া নিবাসী জয়নাল আবেদীন ও মুক্তিযোদ্ধার জামাতা হাসান তালুকদারসহ স্থানীয় লোকজন দেখতে পান বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
ওয়েজখালীস্থ বিসিক শিল্পনগরীর ওয়ার্কসপে পিকআপ দ্বারা সরকারী মালামাল লুটতরাজের ঘটনা অবগত আছেন উল্লেখ করে অফিসের সাবেক গার্ড জয়নাল আবেদীন ও মুক্তিযোদ্ধার জামাতা হাসান তালুকদার বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমাকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতির ঘটনার ব্যাপারে আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল হুদা মুকুট মহোদয় জানতে চেয়ে কল করলে হোসনে আর রাফি উত্তেজিত হয়ে চাকরি নেই বলে হাসনা বেগম কে অন্যান্য সকল কর্মচারীদর দ্বারা অপমান করে অফিস থেকে বের করে দেন।
তারা অভিযোগের তদন্ত হলে সুনামগঞ্জ বিএডিসির কর্মকর্তা কর্মজারীদের আরো অপরাধ প্রমাণিত হবে বলে চ্যালেঞ্জ করেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে সুনামগঞ্জ বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী হোসনে আর রাফির মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন, আমি জানি হাসনা বেগম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা। তবে অফিসের কাজে ফাকি দেওয়ার কারণে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট সাহেব তদবীর করার পরও সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে আমি তাকে সাসপেন্ড করেছি। তথ্য অধিকার আইনে আবেদনকৃত তথ্য যথাসময়ে প্রদান করবেন বলে তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হাসনা বেগম বলেন,আমি অফিসের ঝাড়–দার হিসেবে অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীগন কর্তৃক সরকারী অফিসের মালামাল প্রকাশ্য দিবালোকে চুরি করে অন্যত্রে গোপনে সরিয়ে বিক্রয় করাসহ তাদের এহেন অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করি এবং চুরির ঘটনার কথা সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল হুদা মুকুটসহ এলাকাবাসীকে জানালে সহকারী প্রকৌশলী হোসনে আর রাফি,উপ সহকারী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ ও দাড়োয়ান আল আমিনগং একে অপরের যোগসাজশে আমাকে চাকরি থেকে মৌখিকভাবে অব্যাহতি দিয়ে তাদের চুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপর রয়েছে।
জানা যায়,গত ৩০/০৬/২০০৯ইং তারিখে ২৯৪ নং স্মারকাদেশ মোতাবেক বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সুনামগঞ্জ জোনের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী (সওকা/ভূপাউব্যপ্র) প্রনজিত কুমার দেব, দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে অফিসের ঝাড়ুদার পদে বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হাসনা বেগম কে নিয়োগ দেন। দীর্ঘ ১৩টি বছর
ধরে অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর দিন কাটানোর মধ্যে দিয়ে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চুরির
ঘটনার প্রতিবাদ করে চাকরি হারান মুক্তিযোদ্ধার কন্যা।
অভিযোগের ব্যাপারে বিএডিসির সিলেট ও সুনামগঞ্জ জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু আহমেদ মাহমুদুল হাসান বলেন,যেহেতু আমার অধস্তন কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সেহেতু অভিযোগটি পেলে এ ব্যাপারে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তিনি বলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যাকে চাকরিচ্যুতির ঘটনাটি অমানবিক। এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। তবে মুক্তিযোদ্ধার কন্যা আমার কাছে আবেদন করলে আমি ঐ বিষয়টিও ফায়সালা করবো।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post