কুড়িগ্রামে অভাব অনটনের সাথে যুদ্ধ করে এইচএসসি পরিক্ষা দিচ্ছে ফুলতিরানী। শারিরীক প্রতিবন্ধকতা দমিয়ে রাখতে না পারা এই ৩২ ইঞ্চির ফুলতি রানী(২০) এর বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের শোভনদহ গ্রামে।সে ওই গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মহেশ চন্দ্র ও পারুল বালা দম্পত্তির মেয়ে। কুড়িগ্রামের ভোগডাঙা মডেল কলেজের ছাত্রী সে।
এ বছর সদ্য অনুষ্ঠিতব্য এইচ এস সি পরিক্ষায় কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কেন্দ্রে মানবিক বিভাগে পরিক্ষা দিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুলতিরানীর অভাবের সংসার। ফুলতি রানীর বাবাও শ্রবন প্রতিবন্ধি। সংসারে উপার্জন করার মত কেউ নেই। ছোট ভাই পড়ে দশম শ্রেণিতে। মা অন্যের বাড়িতে ঝি’য়ের কাজ করে সংসার চালায়। একদিকে অভাব অন্য দিকে লেখাপড়া করতে গিয়ে শারিরিক প্রতিবন্ধি হওয়ার কারনে সমাজের নানান উপহাস ও তাচ্ছিল্য সহ্য করতে হয় তাকে। পা দুটো একেবারে ছোট আকৃতির, হাত দুটোও ছোট।এক পা তো বাঁকা হয়ে গেছে। কোন রকম একপায়ে ভর করে চলতে হয় তাকে। শারীরিক উচ্চতা ৩২ ইঞ্চি। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া পথ চলতে না পারলেও পড়াশোনায় তার প্রচুর আগ্রহ। এমন আগ্রহের কারনে ফুলতীরানীকে পড়াশোনা করাতে পিছপা হয় নাই মা পারুল বালা। ফুলতিরানী ২০২১ সালের এসএসসি পরিক্ষায় মানবিক বিভাগে জিপিএ ২.৭১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এ বছর চলমান এইচ এস সি পরিক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা করছে ফুলতিরানী। তার ইচ্ছে সমাজের বোঝা না হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। অর্থনৈতিক সহযোগীতা পেলে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়তে চায় ফুলতিরানী। তার ইচ্ছে শিক্ষক হওয়ার।
ফুলতিরানী মা পারুল বালা বলেন,অনেক মানুষ বলে প্রতিবন্ধি মেয়েকে কষ্ট করে লেখাপড়া করে কি লাভ। চাকরি করতে পারবে না, বিয়ে দিতেও পারবে না। আমার তখন কান্না আসে।মেয়ে শারিরীক প্রতিবন্ধি তাই বলে তো ফেলে দিতে পারি না।মেয়ের যতদুর ইচ্ছে পড়াশোনা করার আমার কষ্ট হলেও তাকে পড়াবো।
তিনি আরো বলেন,আমার খুব অভাবের সংসার। নাই থাকার ঘর।সরকারের কাছে একটা দাবি মেয়েটার জন্য যদি একটা থাকার ঘরের ব্যবস্থা করে দিত। খুবই উপকার হতো।
সহপাঠী সামিয়া রহমান বলেন, ফুলতিরানী খুবই হাসোজ্জল।সংসারে অভাব থাকলেও সে কাউকে বুঝতে দেয় না। আমরা ওকে আমাদের সহপাঠী ভাবি কখনো অন্য চোখে দেখি না।
প্রতিবেশী রবিদাশ বলেন, ফুলতির বাবা থেকেও নেই। সংসারের সকল বোঝা ওর মা পারুলের ওপর। খুব কষ্ট করে মেয়েটাকে পড়াচ্ছে। মেট্রিক পাশ করে এখন আইয়ে পরিক্ষা দিচ্ছে। আমি চাই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বিত্তবান বা সরকার ফুলতিরানীকে সহযোগিতা করুক।
ফুলতিরানী বলেন, আমি প্রতিবন্ধি হলেও এটা আমার কখনও মনে হয় না। তবে সংসারের অভাব অনটন আমার ইচ্ছেকে ভীষণ আহত করে। বাবা মা ভাইসহ এ বয়সে একটা ভাঙা ঘরে থাকি। বৃষ্টি বাদলের দিনে আমাদের খুব কষ্ট হয়। একটা ঘরের ব্যবস্থা করতে পারলে খুব উপকার হতে। আমি পড়াশোনা শেষ করে একজন শিক্ষক হতে চাই। জ্ঞানের আলো সমাজে ছড়িয়ে দিয়ে প্রমান করতে চাই প্রতিবন্ধিরা সমাজের বোঝা না।
ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, ফুলতিরানীর জন্য প্রতিবন্ধি ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সরকারি কোন সহযোগিতার ব্যবস্থা হলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, আমার কলেজের এইচ এস সি পরিক্ষা কেন্দ্রে ফুলতিরানী পরিক্ষা দিচ্ছে। শুনেছি তার সংসারের অবস্থা মোটেই ভালো না। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে তার পড়াশোনার খরচ যোগাচ্ছেন।আমি ফুলতিরানী জন্য দোয়া করি সে যেন এইচ এস সি পরিক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারে।এছাড়া ফুলতিরানীকে উচ্চ শিক্ষায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বিত্তবান ও সরকারি সহযোগিতা করা উচিত।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ/

Discussion about this post