টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার অবহেলিত পাহাড়ি অঞ্চলের চার ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের খুবই বেহাল ও করুন অবস্থা।
এই চার ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট কাঁচা এবং কাঁদামাক্ত হওয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে দুই লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাকা রাস্তার অভাবে যুগ যুগ ধরে এলাকাবাসি সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বলে ভুক্তভোগি এলাকাবাসি অভিযোগ করেছেন।
আজ শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে রাস্তাঘাটের করুন ও বেহাল অবস্থার চিত্র।
অনুসন্ধা জানা গেছে, অবহেলিত পাহাড়ি এলাকা হচ্ছে মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর, তরফপুর, আজগানা এবং বাঁশতৈল ইউনিয়ন। লতিফপুর ইউনিয়ন ১২ টি, তরফফুর ইউনিয়নে ১৫ টি, আজগানা ইউনিয়নে ১৭ টি এবং বাঁশতৈল ইউনিয়নে ২০ টি রাস্তার খুবই করুন অবস্থা। এই চার ইউনিয়ন মুলত পাহাড়ি অঞ্চল এবং জেলা শহর টাঙ্গাইল ও উপজেলা সদর মির্জাপুর থেকে দুর্গম এলাকা হওয়ায় রাস্তাঘাটের উন্নয়নের তেমন ছোয়া পড়েনি বলে ভুক্তভোগি এলাকাবাসির অভিযোগ। দেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও এই চার ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের করুন অবস্থা। আজগানা ইউনিয়নের তেলিনা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আনোয়ার হোসেন (৪৫) ও আজগানা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ছানোয়ার হোসেন (৪৪) অভিযোগ করেন, আজগানা ইউনিয়ন বৃহৎ পাহাড়ি এলাকা। প্রতিটি গ্রামের মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। রাস্তাঘাট পাকা না হওয়ায় ভাল যোগাযোগের অভাবে তারা ফসলের নায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জেলা শহর টাঙ্গাইল এবং উপজেলা সদর মির্জাপুরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে তাদের গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার উপর দিয়ে ৩০-৪০ মাইল ঘুরে যোগাযোগ করতে হয়। এতে করে এক দিকে যেমন সময় অবচয় হচ্ছে তেমনি অর্থের দিক দিয়েও তাদের অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে। তাদের অভিযোগ স্থানীয় নির্বাচন এলে চেয়ারম্যান-মেম্বার প্রার্থী, উপজেলা পরিষদের নির্বাচন এলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলে এমপি প্রার্থীরা এলাকার উন্নয়ন ওরাস্তাঘাটের পাকা করনের জন্য ফুলঝুঁড়ি নানা আশ^াস দিয়ে তাদের ভোটে নির্বাচিত হন। ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর তারা এলাকায় তেমন আসেন না এবং রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেন না। এভাবেই কেটে গেছে ৫৩ বছর। কিন্ত তাদের যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়নি। ভাগ্যেরও কোন পরিবর্তন হয়নি।
বাঁশতৈল ইউনিয়নের অভিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ পারভেজ (৩৫) পেকুয়া গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক মোতালেব হোসেন অভিযোগ করেন, মির্জাপুর উপজেলার মধ্যে বাঁশতৈল ইউনিয়নবাসি সবচেয়ে বেশী অবহেলিত। এই ইউনিয়নে ৬-৭ টি গ্রামে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্টি উপজাতির বসবাস রয়েছে। যুগ যুগ ধরে তানা নানা ভাবে অবহেলিত। বিশেষ করে রাস্তাঘাটের খুবই বেহাল ও করুন অবস্থা। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই প্রতিটি রাস্তার উপর জমে হাটু পানি। যানবাহন চলাচল তো দুরের কথা, পায়ে হেটে চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। রাস্তার উপর বাঁশের চাঁলি ফেলে পায়ে হাটার চেষ্টা করেন। তাদের অভিযোগ সংসদ সদস্য, উপজেরা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাস্তাঘাট পাকা করনের জন্য একের পর এক আশ^াস দিয়ে যান। তাদের সে প্রতিশ্রুতিগুলো আলোর মুখ দেখছে না। এ নিয়ে এলাকাবাসির মধ্যে ক্ষোভের শেষ নেই। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে নেতা তাদের এরাকার পাস্তা পাকা করে দেবেন তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে জানিয়েছেন। একই অবস্থা লতিফপুর ইউনিয়ন এবং তরফপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট বলে ঐ এলাকার ভুক্তভোগি অন্তত ২০ জন এলাকাবাসি অভিযোগ করেছেন।
বাঁশতৈল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেলাল দেওয়ান এবং লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হোসেন রনি বলেন, তাদের এরাকার রাস্তাঘাটগুলো অধিকাংশ কাঁচা ও কাঁমাক্ত হওয়ায় চলাচল কষ্টসাধ্য। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং এমপির সঙ্গে সমন্ময় করে কাঁচা রাস্তা উন্নয়নের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে খান আহমেদ শুভ এমপি বলেন, প্রায় দেড় বছর হলো উপ নির্বাচনে আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছি। জনগন আমাকে অনেক আশা নিয়ে তাদের ভোটে এমপি বানিয়েছেন। আমি দিন রাত চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রতিটি এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সুষম উন্নয়নের জন্য। ইতিমধ্যে অনেক রাস্তাঘাট পাকা করে দিয়েছি। যেগুলো কাঁচা রয়েছে এগুলোর তালিকা তৈরী করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে অল্প দিনের মধ্যে ঐ রাস্তাগুলো পাকা হবে। আগামীতে এমপি নির্বাচিত হলে কোন এরাকার রাস্তাঘাট আর কাঁচা থাকবে না।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফুর বলেন, প্রতিটি এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ্য ও কাঁচা রাস্তার তালিকা করে এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে অর্থ বরাদ্ধ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অনেক রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে এবং যে রাস্তা গুলোর কাজ এখনো শুরু হয়নি অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে এগুলোর কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে হবে বলে আশা করা হচ্ছে ।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ/

Discussion about this post