যুগের পর যুগ ধরে হানাদার ইসরাইলিদের ট্র্যাংক – কামানের গোলার প্রতিরোধ ছিলো ফিলিস্তিনিদের তরুণদের একমাত্র অস্ত্র ছিল পাথর বা ইটের টুকরো। কিন্তু গত ৭ অক্টোবর তারা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে যে অভিযান চালিয়েছে, সেখানে দেখা গেল ভিন্ন এক রূপ। অভিযানে রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ও আধুনিক সব অস্ত্র ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিরা। যাতে তাসের ঘরের মতোই ভেঙে পড়ে ইসরায়েলের অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে, প্রশ্ন ওঠে- পাথরের টুকরোর পরিবর্তে কে তাদের হাতে রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমরাস্ত্র তুলে দিল৷
৭ অক্টোবরের হামলায় মাত্র ২০ মিনিটে ইসরায়েলে ৫ হাজার রকেট ছোঁড়ে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। যার একেকটি বানাতে খরচ হয়েছে মাত্র কয়েকশ ডলার। অথচ আইরন ডোম দিয়ে সেগুলোর একেকটি ধ্বংস করতে ইসরায়েলের খরচ ৫০ হাজার ডলার করে।
এতদিন বলা হতো ইসরায়েলের আকাশ অজেয়। যুদ্ধে তারা কেবল মারতে শিখেছে। ফিলিস্তিনিরা নয়, এই মিথ্যা অহংকার ধ্বংস করেছেন একজন ইরানি শিল্প প্রকৌশলী। যিনি মোটর অপারেটর হিসেবে শুরু করেছিলেন দেশসেবা। যাকে বলা হয় ইরানের ‘মিসাইল প্রযুক্তির জনক’। হ্যাঁ ‘ তিনি- ইরানের হাসান তেহরানি।
এই তেহরানির জন্যই ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের নাগরিকরা বুঝতে পেরেছে- আগের মতো আর তারা নিরাপদ নন। ইরানের একজন প্রযুক্তিবিদ তাদের নিরাপত্তা ছিনতাই করে নিয়েছেন।
তেহরানি কখনো ইসরায়েলে হামলা চালাননি। তার কৌশল ছিল ভিন্ন। দুটো কাজ করেছেন তিনি- মিসাইল প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন এবং সেই জ্ঞান ইসরায়েলবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা গাজায় যেসব অস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলকে ঘায়েল করেছেন, তার চেয়ে বেশি কার্যকর অস্ত্র রয়েছে লেবানের ইসরায়েলবিরোধী হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর হাতে।
২০১১ সালের ১২ নভেম্বর তেহরানের কাছে এক রহস্যময় বিস্ফোরণে হাসান তেহরানি মারা যান। মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন, তার কবরের ফলকে যেন লেখা থাকে- এখানে এমন একজন শুয়ে আছেন, যিনি ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে চাইতেন।
তেহরানির একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে- জ্ঞানকে বোমা মেরে ধ্বংস করা যাবে না। যার মাধ্যমে তিনি বুঝিয়েছেন, ইসরায়েলবিরোধী ইরানি-মিত্রদের অস্ত্র দেওয়ার চেয়ে, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রশিক্ষণ দেওয়া ভালো। তাতে খরচ কম, ঝুঁকি কম, সফলতা বেশি। ঠিক সেই কাজটিই করে দেখিয়েছেন ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা।
লেবানন, গাজা ও ইয়েমেনকে হাসান তেহরানির মিসাইল প্রযুক্তির তিন পরীক্ষাগার বলা হয়। তেহরান সরাসরি যুদ্ধ ময়দানে না থেকেও, ওই তিন জায়গা থেকে ওয়াশিংটন ও তেলআবিবকে চরম ভাবে শায়েস্তা করে যাচ্ছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post