তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৪/১০/১৯৩৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর 24 পরগনা জেলার বারাসাতের দেগঙ্গা থানার অন্তর্ভুক্ত রাজুকবেড় গ্রামে। তার বাবা মোঃ নামদার আলী ব্রিটিশ আমলে ওই অঞ্চলের জমিদার ছিলেন।
তিনি ১৯৫৫ সালে স্কুল ফাইনাল, ১৯৫৮ সালে বারাসাত সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৬০সালে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি থেকে বি এ,এবং ১৯৬২ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে এমএ কমপ্লিট করেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার সাথে সাথে তিনি চৌরাশি স্কুলে হেডমাস্টার হিসেবে যোগদান করেন। টানা দুই বছর তিনি ছিলেন এই স্কুলে।
কিন্তু ১৯৪৬ সালে মার্চের ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে শিক্ষা ,চাকুরী সহ সকল ক্ষেত্রে প্রচন্ড বাধার সম্মুখীন হন। সাম্প্রদায়িকতার কাছে শিক্ষার এই পরাজয়ে, তিনি একরাশ অভিমান বুকে নিয়ে, ১৯৪৬ সালে তাঁর বংশের একজন অত্যন্ত নামকরা আধ্যাত্মিক পুরুষ ,’বাদশা মন্ডলের ‘পরামর্শে দেশত্যাগ করে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ১৯৬৪ সালের ৫ ই এপ্রিল যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি কখনোই সাম্প্রদায়িকতার বিষয়গুলো মনে স্থান দেননি।
তিনি সারা জীবন সততা এবং একনিষ্ঠতার সাথে শিক্ষা দান করে গেছেন । বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার অগণিত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে, যারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে অত্যন্ত উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি একজন শিক্ষাবিদ হিসাবে অসংখ্যবার মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছেন। তাঁর প্রকাশিত দুটি বই ‘বাংলা ছন্দ ‘এবং ‘বাংলা অলংকার’ যা বাংলা অনার্সের এবং মাস্টার্সের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়।

১৯৬৪ সাল থেকেই তিনি দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা তে অনেক প্রবন্ধ রচনা করেছেন। বাংলা ভাষার উপরে তার ছিল অসাধারণ ছিল অধিকার, অতুলনীয় বাককৌশলী।
১৯৮০ সাল থেকে খুলনা রেডিও তে ‘পাচুর পাঁচালী’ নামে একটি রম্য রচনা তিনি করতেন, যা অত্যন্ত জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল। তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে প্রায় দশ হাজারের মত বই রয়েছে।
চাকুরী জীবনে তিনি সরকারি বি এল কলেজ, আযম খান কমার্স কলেজ, মহিলা কলেজ খুলনা পিসি কলেজ সহ যশোর মহিলা কলেজ, মাইকেল মধুসূদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ১৯৯৬ অবসর গ্রহণ করেন।
আবার এই জীবন সাফল্যে সবথেকে বিশেষ ঘটনা হলো,’ শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী ‘র জন্মস্থান বিতর্কের অবসান নিয়ে। তাঁর পাশের গ্রামের নাম ছিল চাকলা। সেখানে প্রতিষ্ঠিত’ শ্রী শ্রী লোকনাথ সেবা সংঘ ‘থেকে তৎকালীন সভাপতি ‘মানিক হাজরা তাকে শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর’ জন্মস্থান বিতর্কের অবসান এর জন্য একটি বই প্রকাশের দায়িত্ব দেন।

তিনি প্রায় সাত-আট বছর ধরে অনেক তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে বাংলা ৯ই আষাড়১৩৯৭ সালে একটি বই, চাকলার লোকনাথ আশ্রম থেকে প্রকাশ করেন। বইটির নাম’ লোক গুরু লোকনাথ’,যার সর্বস্বত্ব আশ্রমের।
‘লোক গুরু লোকনাথ’, বইটি অনেক তথ্য প্রমাণ সমৃদ্ধ হওয়ায়, বইটির উপর ভিত্তি করে আশ্রম কর্তৃপক্ষ কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন এবং ‘শ্রী শ্রী লোকনাথের’ জন্মস্থান নিয়ে যে বিতর্ক ছিল হাইকোর্টের রায়ে সেই বিতর্কের অবসান হয়।
চাকলাতে যে ‘শ্রী লোকনাথের ‘জন্মস্থান ,এটি প্রমাণিত হয়। যার ফলে বইটি ভারতবর্ষে একটি বিরাট দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বইটির সর্বস্বত্ব আশ্রমের। আশ্রম কর্তৃপক্ষ বইটির সর্বস্বত্ব দিতে চাইলেও তিনি তা নেননি।
বর্তমানে চাকলা হিন্দু ধর্মের একটি বিরাট তীর্থস্থান হিসেবে সমগ্র ভারতবর্ষে পরিচিত। অসাধারণ একটি আশ্রম এটি। অনেকেই এই বইটি বাংলাদেশ থেকে প্রকাশের দাবি রাখেন।
আজ ছিল মহান এই শিক্ষা ব্যাক্তিত্বের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি অত্যন্ত শিক্ষিত, সৎ এবং সজ্জন মানুষ ছিলেন। সবাই দোয়া করবেন উনি যেন জান্নাতবাসি হোন।
এবি/দৈনিক দেশতথ্য/অক্টোবর ৩০/ ২০২১
বিঃদ্রঃ দৈনিক দেশতথ্য এইসব মহান ব্যক্তিদের স্মরণ দিবস শ্রদ্ধার সাথে প্রকাশ করে। তথ্য পাঠিয়ে একটি কল দেওয়ার নিবেদন রইলো।

Discussion about this post