মুক্তিপণের টাকা বাংলাদেশে থাকা চক্রের নাম্বারে বিকাশ করতে বলা হয়েছে। চার পরিবারে ঈদের আনন্দ নেই। স্বজনদের কান্না গ্রামের পরিবেশ ভারী হয়ে গেছে
শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট, ৭ এপ্রিল \
আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে ছেলে ও জামাতা। অপহরণের শিকার হয়ে স্বপ্ন বিষাদে পরিণত হয়েছে। তাই বিলাপ করে কাঁদছেন মা আলেয়া বেগম। রবিবার লালমনিরহাট জেলা সদরের প গ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামে গিয়ে এ চিত্র দেখাগেছে।
ক’দিন পরে ঈদুল ফিতর ধর্মীয় উৎসব। সবকিছু ভাল চলছিল। চার টি পরিবারের চারজন সদস্য কর্মের সন্ধানে লিবিয়ায় গিয়েছে। বিধিবাম সেখানে গিয়ে অপহরণের শিকার হয়েছে চার জন। এরা সকলে লালমনিরহাট সদরের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামের ও কুড়িগ্রাম জেলার পাশাপাশি চার গ্রামের বাসিন্দা। জীবনে ও পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আনতে ধারদেনা, জমি বন্ধক, জমি বিক্রি করে তিন বছর আগে লিবিয়ায় গিয়ে ছিল।
এখন শুনছে তাদের লিবিয়ায় একটি চক্র অপহরণ করে জিম্মি করে রেখেছে। তাদের মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিবে। তা না হলে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। মুক্তিপণের টাকা বাংলাদেশে থাকা অপহরণকারী চক্রের বিকাশ নম্বরে পরিশোধ করতে হবে। এই টাকা তারা পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করতে বলছে। না দিলে ওই চার শ্রমিককে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
অপহরণের শিকার হতভাগ্য চার শ্রমিক হচ্ছে- লালমনিরহাট সদর উপজেলার প গ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদিনের ছেলে আল আমিন (২৩), জয়নাল আবেদিনের জামাতা ও পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙার ইদ্রিস আলীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম (৪০), রাজারহাটের ভীম শর্মা গ্রামের আবদুল মোতালেবের ছেলে আল আমিন (২২) এবং তাঁর খালাতো ভাই ও প গ্রামের রামরাম গ্রামের শাহিনুর ইসলামের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৪)।
তাঁরা লিবিয়ার বেনগাজিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে ছিলেন। সেখানে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে পেটেবাতে ভাল চলছিল। পরিবারের সাথে মাঝে মাঝে কথাবার্তও হয়ে ছিল। সিন্দুরিয়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক জয়নাল আবেদিন জানান, তিন বছর আগে জমিজমা বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে একমাত্র ছেলে আল আমিনকে লিবিয়ায় পাঠায়। তাঁর জামাতা হাফিজুল ইসলামও ছেলের সাথে লিবিয়ায় যায়। ভালই চলছিল সব কিছু । হঠাৎ চলতি বছরের ১১ মার্চ সকাল ৮টায় অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি তাঁর ইমো নম্বরে ফোন করে। এ সময় জানানো হয়, তাঁর ছেলে আল আমিন ও জামাতা হাফিজুল ইসলাম কে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তির জন্য এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। তা না হলে তাঁদের দু’জনকে হত্যা করা হবে । হুমকি দেয় হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হবে।
অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিটি পৃথক দু’টি বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার করে টাকা পাঠাতে বলে। এক লাখ টাকা দিলে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। এক লাখ টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে।
মা আলেয়া বেগম জানান, তাঁর ছেলে আল আমিন ও জামাতা গ্রামের আবদুল মোন্নাফের ছেলে লিবিয়া প্রবাসী মিজানুর রহমানের মাধ্যমে লিবিয়ায় গেছে। এই অপহরণের সঙ্গে মিজানুর জড়িত আছে বলে তাদের দাবী। মিজানুরের লোকেরা মুক্তিপণের নগদ টাকার লোভে এই অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ ব্যাপারে প গ্রামের সিন্দুরিয়া গ্রামের মৃত কাশেম আলীর ছেলে আবদুল মোন্নাফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, লিবিয়া প্রবাসী ছেলে মিজানুর রহমান সৎ ও পরিশ্রমী যুবক। তাঁদের আর্থিক উন্নতির কারণে ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। তিনিও শুনেছেন, গ্রামের কয়েকজন লিবিয়ায় অপহরণের শিকার হয়েছে।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ রুহুল আমিন জানান, লিবিয়ায় মুক্তিপণ আদায় করতে কয়েক জন শ্রমিক কে অপহরণের বিষয়ে দুটি পৃথক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অবহিত করা হয়েছে। ওসি স্যারের নির্দেশনার আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তথ্য প্রযুক্তি ও পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কে অবগত করা হবে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//০৭ এপ্রিল ২০২৪//

Discussion about this post