নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার সুনামধন্য ধর্মপুর গোয়ালভিটা হোসেনিয়া আলিম মাদ্রাসা সিনিয়র মৌলভী শিক্ষক আব্দুল মোত্তালেবকে বুকে চাকু ধরে জোরপূর্বক পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নিয়ে মাদ্রাসা থেকে বের করে দিয়েছেন মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি আব্দুল বারেক মন্টু, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন ও সভাপতির জামাতা শিক্ষক উজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যপারে বিচার চেয়ে ভূক্তভোগী শিক্ষক বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায় বিগত ০১/০৯/১৯৮০ইং তারিখে ধর্মপুর গোয়ালভিটা হোসেনিয়া আলিম মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠালঘ্নে যোগদান করিয়া দক্ষতার সহিত অর্পিত দায়িত্ব পালন করিয়া আসছিলেন এবং ২০২০সালের দিকে আমার চাকির মেয়াদকাল ৬০ (ষাট) বছর পূর্ণ হতো এবং আমি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক ছিলাম। বর্তমান অধ্যক্ষ যোগদানের পর থেকে আমাকেসহ অধীনস্থ শিক্ষক কর্মচারীগণকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করতে থাকেন। আমি তার অন্যায়ের বিরোধিতা করায় সে আমার চাকুরীর দূর্বলতা খুঁজতে থাকে।
এমতাবস্থায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের এনটিআরসিএ অধীনে যাচ্ছে মর্মে খবর প্রকাশিত হলে নিয়োগ বাণিজ্য করার লক্ষে বিভিন্নভাবে আমাকে চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। আমি সম্মত না হলে ১০/১০/২০১৫ইং তারিখে অধ্যক্ষ সাহেব নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে আমাকে জোর পূর্বক ইস্তফা পত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। আমার জন্ম তারিখ: ০১/০১/১৯৬০ইং। ইনডেক্স নং- ০৮১৯৮৭, ব্যাংক হিসাব নং- ৩৮৯২/৪।
জোরপূর্বক ও ভয়ভীতি দেখিয়ে পদত্যাগের পর আমি নিরুপাই হয়ে মহামান্য হাইকোর্টে অভিযোগ দাখিল করি যাহার স্মারক নং- ১১৯১৩। মহামান্য হাইকোর্টে জোরপূর্বক ইস্তফা গ্রহণ করেছে কিনা এই মর্মে বিষয়টি সতত্যা যাচাইয়ের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করেন। অত্র মাদ্রাসার শিক্ষকগণকে অধ্যক্ষ ও সাবেক সভাপতি ও সভাপতির জামাই শিক্ষক প্রতিনিধি সহকারী কৃষি শিক্ষক ও ষড়যন্ত্রের মূল হোতা উজাউল ইসলাম বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখায় ফলে অনান্য শিক্ষকগণ মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে বাধ্য হয়।
সঠিক বিচার না পেয়ে বাধ্য হয়ে অবসর ও কল্যানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। অধ্যক্ষের নিকট প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রের জন্য সবিনয় অনুরোধ করি। তিনি বাধ্যতামূলক ভাবে আমার নিকট হইতে তিন লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা গ্রহণ করে আমার কাজে পত্র অগ্রায়ন করেন।
জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে পদত্যাগ করায় আমার মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমান বোনাস সহ সাড়ে এগারো লক্ষ টাকা, আমি আমার ঐ ক্ষতির প্রতিকার ও সুষ্ঠু বিচারের আবেদন করছি।
ভুক্তভোগী শিক্ষক মোতালেব হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সাবেক সভাপতি আব্দুল বারেক মন্টু,তার জামাই উজাউল ও অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন মিলে কয়েকজন শিক্ষকের সামনে আমাকে বুকে চাকু ধরে জোর করে ইস্তফা পত্রে সই করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, আমি হাইকোর্টে মামলা করলে হুমকি ধামকি দিয়ে মামলাটি তুলে নিতে বাধ্য করে। এরপর অবসর ও কল্যাণের টাকা উত্তোলনের জন্য সভাপতি ও অধ্যক্ষের কাছে কাগজপত্র নিতে গেলে শিক্ষক প্রতিনিধি উজাউলের নেতৃত্বে সভাপতি আব্দুল বারেক মন্টু ও অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন আমার কাছে থেকে ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা নেয়।আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন, সাবেক সভাপতি ও অধ্যক্ষের কথামতো না চললে চাকরি নিয়ে ঝামেলা পড়তে হয়। মাদ্রাসার শিক্ষকরা ভয়ে কোন কথা বলে না। মাদ্রাসার শিক্ষার মান ও পরিবেশ কোনটিই ভালো নয়। বিগত ১৫বছর ধরে মাদ্রাসার কোন উন্নয়ন হয় নি। সহকর্মী আব্দুল মোত্তালেবের চাকরির মেয়াদ থাকার পরেও সভাপতি আব্দুল বারেক, অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন এবং সভাপতির জামাতা উজাউল জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। আমরা প্রায় সকল শিক্ষকই অসহায়ের মতো এখানে চাকুরী করছি।
স্থানীয় একাধিক গ্রামবাসীরা জানান, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল বারেক মন্টু বেপরোয়া হয়ে উঠেন ও সাবেক এমপি সেলিম উদ্দিন তরফদারের ছত্রছায়ায় নিয়োগ বানিজ্য, জোরপূর্বক মোত্তালেব মাষ্টারের পদত্যাগ, অর্থের বিনিময়ে অনিয়ম করে শিক্ষকের হাজিরায় স্বাক্ষর, বরাদ্দের অর্থ লুটপাট করে। শুধু তাই নয় ম্যানেজিং কমিটির প্রত্যেক সদস্য তারই আত্মীয় স্বজন। সেজন্য তার মতামতের বাহিরে কেউ যায় না। মাদ্রাসায় তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য বিভিন্ন পদে কর্মরত রয়েছে। মাদ্রাসার উন্নয়ন না করে শুধু নিজেদের পকেট ভড়েছেন বলে গ্রামবাসী জানান।
এ ব্যপারে ধর্মপুর গোয়ালভিটা হোসেনিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সরাসরি ষড়যন্ত্র মূলক মিথ্যা অভিযোগ এটি ভিত্তিহীন। আব্দুল মোত্তালেব স্বেচ্ছায় ২০১৫ সালে পদত্যাগ করেন। ভুলবুঝাবুঝির কারনে আব্দুল মোত্তালেব হাইকোর্টে রিট করলে সেখানেই তার পরিসমাপ্তি হয়। টাকা লেনদেনের বিষয়টি মিথ্যা বলেও জানান তিনি।
এ ব্যপারে সাবেক সভাপতি আব্দুল বারেক মন্টুর মোবাইল যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কোন জোরপূর্বক কিছু করেনি। আগে থেকেই গন্ডগল ছিলো। ঢাকা সচিবালয়ে একটা অভিযোগ দিয়েছিলো এটি মিমাংসা হয়ে আসছে। তার কাগজের ডিসটার্ব ছিলো এর রিপোর্ট দিয়েছিলো অধ্যক্ষ বেতন বন্ধ হয়েছিলো।পরে অভিযোগ করলে ওই ঘটনা মিমাংসা হয়েছে।
অবসর ও কল্যান ভাতার জন্য ৩লক্ষ টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যপারে আমি জানিনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব হাসান মুঠোফোনে জানান, গত ২৯শে আগষ্ট বৃহস্পতিবার অভিযোগের ব্যপারে আমাকে একজন গনমাধ্যম কর্মী ফোন দিয়েছিলো। আমি ছুটিতে ছিলাম আমি আগামীকাল রবিবার অফিসে এসে অভিযোগটি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Discussion about this post