পলাশ কুমার ঘোষ:
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা জলাবদ্ধ থাকায় প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেনা। বুধবার জলাবদ্ধতা নিরসনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন। দয়ারামপুর ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার রাশিদুল ইসলাম ও দয়ারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামছুল জানান, প্রতিবছর প্রায় ৩/৪ মাস বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটি জলাবদ্ধ থাকে।
যে কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হয়। এ বছর অতি বৃষ্টিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পানি প্রবেশ করায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেননা। হাঁটু সমান পানি অতিক্রম করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে অনেকেরই চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। মাদ্রাসার অফিস কক্ষে পানি প্রবেশ করায় আপাতত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের আবেদন জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মিকাইল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেবার পাশাপাশি স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলো বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার এসএম জামাল,কুষ্টিয়া: পদ্মা নদীর সর্বগ্রাসী ভাঙনে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি ও বসতি ঘরবাড়ি পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে চলতি বন্যায় চরম ঝুঁকির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একটি টাওয়ার সম্পূর্ণভাবে নদীগর্ভে ভেঙে পড়ে। মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া উপজেলার সাহেব নগর গ্রামে আরও অন্তত ছয়টি টাওয়ার ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সাহেবনগর ও বারুইপাড়া ইউনিয়নের মির্জানগর এলাকায় পদ্মা নদীর তীরে কয়েক শ মানুষ বসে আছেন। তারা পানির তোড় দেখছেন। টাওয়ার ভেঙে পড়া জায়গায় অনেক লোকজন বসে ছিলেন।
কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, গত বছরও নদীতে চর ছিল। গত এক মাসে ৫০০ মিটার ভেঙে গ্রামের দিকে চলে আসছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য তাঁরা এক মাস ধরে আন্দোলন করছেন। কয়েক দিন আগে মানববন্ধন, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যালয় ঘেরাও, স্মারকলিপি প্রদান ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। পাউবোর কর্মকর্তারা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে যায়। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয় না।
এদিকে টাওয়ার ভাঙার পরপরই কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন গ্রামবাসী। এতে সড়কের উভয় পাশে প্রায় এক কিলোমিটার যানবাহন আটকা পড়ে। প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বেলা তিনটা পর্যন্ত অবরোধ ছিল বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিবছরের মতো এবারও পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়েছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন। চরম আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকার হাজারো মানুষের। গত এক মাসে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক শ হেক্টর ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে বসতবাড়ি, সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পোর্ট নির্মাণে প্রায় ৫’শ মিটার গ্রোয়েন বাঁধ পদ্মা নদীর মূল প্রবাহ চ্যানেলের মধ্যে নির্মিত হওয়ায় নদী তার গতিপথ হারিয়েছে। এতে নতুন গতিপথের সন্ধানেই পদ্মা আগ্রাসী হয়ে উঠেছে।
ভয়াবহ ভাঙনে কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার শত শত হেক্টর ফসলি জমিসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ঘরবাড়ি ও সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো। এছাড়া কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী জাতীয় মহাসড়ক, দেশের বৃহৎ সেচ প্রকল্প ও ৪১০ মেগা কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
অবিলম্বে পদ্মা নদীর এই সর্বগ্রাসী ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আক্রান্ত এলাকার জনগণ তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় রক্ষায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
এদিকে পদ্মার ভাঙনে জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার বিষয়ে কুষ্টিয়ার বটতৈল গ্রিডের প্রকৌশলী আবু তালেব বলেন, ভেঙে পড়া টাওয়ারে কয়েক দিন আগে থেকেই বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ ছিল। এই লাইন দিয়ে ভেড়ামারা থেকে ফরিদপুরে বিদ্যুৎ আনা-নেওয়া হয়। ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ সঞ্চালনে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। বিকল্প লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাহেব নগর গ্রামে আরও অন্তত ছয়টি টাওয়ার ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পাউবো) পাউবোর কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, কয়েক বছর আগে থেকেই পদ্মা নদীর ডান তীরে ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ভাঙন চলছে। ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে এক হাজার চারশ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছেন তারা।
তিনি আরও বলেন, টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদীতে ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে নদীর ডান তীরে কুষ্টিয়ার অংশে ভাঙন বাড়ছে। ভাঙনকবলিত কয়েকটি স্থান শনাক্ত করা হয়েছে। সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। নদীতে এখন পানি বেশি। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সব প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, “প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বানসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যচুক্তি প্রক্রিয়াধীন। পদ্মার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনরোধে স্থায়ীভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।”
কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আখতার বলেন, নদীভাঙন হচ্ছে এটা সত্য। প্রায় দিনই সেখানে আন্দোলন হচ্ছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//সেপ্টম্বর ১৯,২০২৪//

Discussion about this post