কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকালে সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের কদমতলা এলাকায় তিন দিনের এই লাঠি খেলার উদ্বোধন করা হয়।
কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের কবুরহাট গ্রামের ‘আপডেট কুষ্টিয়া’ ফেসবুক পেজ ও ‘সাপ্তাহিক পথিকৃৎ’ পত্রিকা ব্যানারে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী অর্পণ মাহমুদের উদ্যোগে ষষ্ঠবারের মতো তিন দিনব্যাপী এই লাঠিখেলা শুরু হয়।
লাঠিখেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। ঢোলের তালে তালে, লাঠিয়ালদের অঙ্গভঙ্গি ও নানা কসরতের মাধ্যমে দর্শকদের মন মাতানো এ খেলায় বিভিন্ন এলাকার শতাধিক লাঠিয়াল অংশগ্রহণ করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাদ্যের তালে তালে ঘুরছে লাঠি। লাঠিয়ালদের কলা-কৌশলও নজরকাড়া। শক্ত হাতে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে নানা কৌশলে লাঠি চালিয়ে যাচ্ছেন। পঞ্চাশ জনের এই দলে খণ্ড খণ্ড আকার হয়ে বাজনার তালে তালে লাঠির কলাকৌশল প্রদর্শন করছেন।
লাঠিয়াল মো. সাদেক আলী জানান, পারিবারিকভাবেই আমরা লাঠিখেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাপ-দাদা থেকে পাওয়া শিক্ষা এটি। ঐতিহ্যবাহী এ খেলায় যেমন দর্শকরা আনন্দ পায় তেমনি এ খেলার মাধ্যমে আত্মরক্ষার নানা দিক তুলে ধরা হয়। এ থেকে নিজের আত্মরক্ষাও শেখা যায়। তবে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এখনও টিকিয়ে রেখেছি। এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি ব্যবস্থাপনা জরুরি বলেও জানান তিনি।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা থেকে লাঠি খেলা দেখতে এসেছিলেন আবু ওবাইদা আল মাহদী। তিনি বলেন, শুনেছি এক সময় আউশ ধান কাটার মৌসুম শেষ হলে লাঠি খেলায় মেতে উঠতেন গ্রামের মানুষ। বাড়ির উঠোন কিংবা ধানের খোলায় আসর বসত এই লাঠি খেলার। আগে কুষ্টিয়ার আশপাশের জেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি লাঠিয়াল দল ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই খেলাটি আজ প্রায় বিলুপ্ত। অনেকদিন বাদে কুষ্টিয়ায় তিনদিনের লাঠি খেলা উৎসবের খবর শুনে তাই তিনি ছুটে এসেছি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাবেক বিপ্লবী সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাড. শামীম উল হাসান অপুু বলেন, ‘লাঠি খেলা দেখে আমি মুগ্ধ। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এই খেলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। তিনি বলেন, লাঠিখেলা চর্চা করলে আত্মরক্ষায় ভালো কাজ দিতে পারে। এই লাঠিখেলা যেন চালু থাকে আমরা তার ব্যবস্থা করব।
খেলার আয়োজক কমিটির আরেক সদস্য শাহরিয়ার ইমন জানান, কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত প্রায় এ লাঠিখেলা টিকিয়ে রাখতে হলে লাঠিয়ালদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। প্রতিবছর এই উৎসবের আয়োজন করি। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন লাঠিয়ালদের উৎসাহ দেওয়া হয়, অন্যদিকে গ্রামবাসীদের আনন্দ দেওয়া হয়। এছাড়া নতুন প্রজন্ম এ খেলাটি সম্পর্কে জানতে পারে। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
আয়োজক কমিটির আহবায়ক গণমাধ্যমকর্মী অর্পন মাহমুদ বলেন, কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় আবহমানকাল ধরে বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে এই লাঠিখেলা। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত নতুন প্রজন্ম গড়তে এ ধরনের খেলা টিকিয়ে রাখা দরকার বলেও জানান তিনি।
খেলায় অংশ নেওয়া জাহান আলী সর্দারসহ প্রবীণ লাঠিয়ালরা জানান, তারা প্রায় দুই যুগ ধরে বিভিন্ন এলাকায় লাঠি খেলা করে থাকেন। তবে এই খেলার সঙ্গে জড়িতরা প্রায় সবাই গরিব। তারা দুঃখ-দৈন্যে জীবনযাপন করেন। তাদের জন্য সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নেই। তেমন কোনো ব্যবস্থা হলে নিয়মিত চর্চা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা এই খেলাকে আরও বড় পরিসরে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারবেন বলে আশাবাদী।
প্রসঙ্গত, লাঠিখেলা বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য। ওস্তাদ ভাই সিরাজুল হক চৌধুরী গোল্ডেন সোর্ড ১৯৩৩ সালে বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করেন। ওস্তাদ ভাই সিরাজুল হক চৌধুরী প্রথমে নিখিল বাংলা লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন। পরে এর নাম হয় বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী।
এহ/22/10/24/ দেশ তথ্য

Discussion about this post