কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ছাত্র চাঞ্চল্যকর রুবেল হত্যা মামলায় অপরাধীদের ২২ দিনেও সনাক্ত করতে পারে নি পুলিশ। এমনকি ৩ দিনের রিমান্ডেও মুখ খোলে নি কেউ। এদিকে মেসের কাজের মেয়ে তার ভাড়া করা বাসা তালা দিয়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে ১৫ দিন ধরে লাপাত্তা রয়েছে।
মামলার এজাহার ও কুষ্টিয়া মডেল থানার এফআইআর সূত্রে জানা যায়, গত ১ অক্টোবর রাত সাড়ে দশটার দিকে শহরের বনফুড বেকারীর মোড়ে অবস্থিত জনৈক লিটুর চারতলা বাড়ির ৩য় তলার মেসের বাসিন্দা রুবেল হোসেন কে হাত,পা ও মুখ বেঁধে ছাদ থেকে নীচে ফেলে দেয়া হয়।
সে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাওয়ার টেকনোলজির ৬ ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র।সাথে সাথেই স্হানীয়রা রুবেল হোসেন কে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কতৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। রাজশাহী যাওয়ার পথে রাত দেড়টার সময় রুবেল হোসেন মৃত্যু বরণ করে।
ঐ রাতেই কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ নিহতের মেসের ৫ জন কে জিঞ্জাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয়। ঘটনার পরদিন নিহতের বাবা শহিদুল মন্ডল কুষ্টিয়া মডেল থানায় অঞ্জাত আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আটককৃত পাঁচ জন কে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েও সীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই অলোক রায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা হত্যার সাথে জড়িত বিভিন্ন মোটিভ নিয়ে কাজ করছি।
নিহত রুবেল হোসেন নীচে পড়ার পর প্রত্যক্ষদর্শী সাফিন বলেন, রুবেলের দুই হাত পিঠ মোড়া করে লাইনের দড়ি দিয়ে বাঁধা দিল। দুই পা লাইলনের দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। মুখ লাল গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। জিভ বেড়িয়ে গেছিল। সাথে সাথেই দড়ি কেটে অচেতন অবস্থায় রুবেল কে হাসপাতালে নেয়া হয়।
অপর একজন প্রত্যক্ষদর্শী জিল্লু বলেন,রুবেল ছাদ থেকে নীচে পড়ার পর পরই তিন তলায় রুবেলের রুমে রুমমেট হৃদয় কে রুমেই পাওয়া যায়। তাকে স্হানীয়রা জিঞ্জাসাবাদ করলে বলে,”আমি ঘটনার সময় ঘুমিয়ে ছিলাম”। হৃদয় এবং অপর একজন কে আটক করে পুলিশে খবর দেয়া হয়।
এরপর চারতলার ছাদে যেয়ে রুবেলের একজোড়া চামড়ার স্যল্ডেল পাওয়া যায়।
সেসময় লাগাতার বৃষ্টি চলার কারনে ছাদে শেওলা থাকলেও ছাদে কোন ধস্তাধস্তির চিহ্ন ছিল না। স্যন্ডেল দুটি পাশাপাশি রাখা ছিল। স্বাভাবিক ভাবে জোর করে হাত পা বাঁধলে পায়ের স্যান্ডেল এলোমেলো ভাবে পড়ে থাকার কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্হানীয় একজন বাসিন্দা জানান, মেসে সুমি(২৫) নামে একটি মহিলা রান্না করতো। সুমি ৭ মাস যাবত ঐ মেসে রান্নার দায়িত্ব পালন করে আসছিল। সে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক্যাল কলেজের উত্তর পাশে আড়ুয়া পাড়ায় একটি বাড়ীতে ভাড়া থাকতো।
২২ অক্টোবর সন্ধ্যায় সুমির খোঁজে তার ভাড়া বাসায় গেলে জানা যায় গত ১৫ দিন যাবত সে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে লাপাত্তা। তার কোন মোবাইল নম্বরও পাওয়া যায় নি। সুমির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে এলাকাবাসীর ধারনা।
ভবন মালিক সূত্রে জানা গেছে দীর্ঘদিন তৃতীয় তলার মেসের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর ছাত্র বর্তমান জেল হাজতে আটক আনিসুর রহমান অনিক। সে মেসের ভাড়া পরিশোধ করতো। তার কাছেই চারতলার ছাদের গেটের চাবি ছিল। যে কোন প্রয়োজনে ছাদে যেতে হলে ওর কাছ থেকেই চাবি নিতে হতো। গত মাসে ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহন করে হত্যাকান্ডের শিকার রুবেল হোসেন। সে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের শহিদুল মন্ডলের ছেলে।
এহ/26/10/24/ দেশ তথ্য

Discussion about this post