আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক : ইরান-ইসরায়েল। দুই দেশের আদ্যাক্ষরে মিল। এক সময় গলায় গলায় বন্ধুত্ব থাকলেও চার দশক ধরে দুই দেশের সম্পর্ককে বর্ণনা করা হয় চিরশত্রু ।
১৯৪৮ ও ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়, তখন তুরস্কের পর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া দ্বিতীয় মুসলিম দেশ ছিল ইরান।ইসরায়েলকে দেশটি এই স্বীকৃতি দেয় ১৯৫০ সালে। দুই দেশের মধ্যে গড়ে উঠে অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক। ১৯৫৭ সালে রাজতান্ত্রিক শাসক রেজা শাহ পেহলভীর আমলে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ‘সাভাক’ প্রতিষ্ঠিত হয়, এই বাহিনী গঠনে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ইরানকে সহায়তা দেয়।
১৯৭৯ সালে ক্ষমতায় আসা ইরানের বিপ্লবী সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নেওয়ার ঘোষণা দেয় এবং তেহরানে ইসরায়েলের দূতাবাসকে ফিলিস্তিনি দূতাবাসে পরিণত করে। তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মূলত ইরানের বিপ্লবী সরকার ফিলিস্তিনে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে।ইরান সরকার ফিলিস্তিনকে সমর্থন ও ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে অস্বীকারের নীতি নেয়। অন্যদিকে ইরানের এমন উত্থানকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে ইসরায়েল।’
ইরানের দূরপাল্লার মিসাইল তৈরির চেষ্টা,পরমাণু প্রকল্প গ্রহণে বৈরী হয়ে পড়া ইরানের এমন দুটি সামরিক প্রকল্পকে হুমকি হিসেবে দেখেছে ইসরায়েল। ফলে তারা ইরানের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিশেষত পরমাণু প্রকল্প ভেস্তে দিতে শুরু করে নানা অন্তর্ঘাতমূলক পদক্ষেপ। দেশটির একের পর এক বিজ্ঞানীকে ইসরায়েল হত্যা করেছে বলেই ইরানের অভিযোগ। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান তার প্রভাব বিস্তারে,হামাস, হুতি, ইরাকে মিলিশিয়া ,লেবাননে ইরানের প্রত্যক্ষ সহায়তায় গড়ে উঠেছে হিজবুল্লাহ।
নব্বইয়ের দশকে হামাস এবং ইসলামিক জিহাদকেও সহায়তা করতে শুরু করে ইসরায়েল। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান এবং ইসরায়েল এক ধরনের আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। যেটা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো খারাপের দিকেই নিয়ে যায় বলে মনে করেন ইসরায়েলের তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজের অধ্যাপক মেইর লিটভ্যাক।
ইসরায়েল ইরানের অস্ত্র কর্মসূচিকে সব সময়ই হুমকি হিসেবে দেখে এসেছে। এমনকি ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা করার হুমকিও দিয়েছে একাধিকবার। কিন্তু সামরিকভাবে ইরানের চেয়ে শক্তিশালী এবং আমেরিকাণ্ডইউরোপের সমর্থন সত্ত্বেও ইসরায়েল কেন ইরানকে হুমকি মনে করে? ইরান কি আসলেই ইসরায়েলের জন্য হুমকি? মেইর লিটভ্যাক তেমনটাই মনে করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি ইসরায়েলের ছোট আয়তনের কথা বলছেন।
ইরান যখন ইসরায়েলকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার ঘোষণা দেয় এবং সে দেশ যদি পরমাণু অস্ত্র বানিয়ে ফেলে, তাহলে এই ভয় থাকবেই যে, তেহরান তার পরমাণু অস্ত্র তেলআবিবের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে। এ আশঙ্কা থেকেই যায়।’
ইরানে ২০২২ সালে মাশা আমিনির মৃত্যুর পরে যে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি হয়েছিল, সেটা ইরানের সরকারকে যথেষ্ট টালমাটাল করে ফেলেছিল। সুতরাং ইরানের সরকার বিদেশের সামরিক প্রশ্নে জড়িয়ে অস্তিত্বের সংকটে পড়তে চাইবে না।
ইরান সব সময় ছায়া যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরাইলকে শায়েস্তা করতে চেয়েছে। কিন্তু সিরিয়া ইরানের দূতাবাসে হামলা, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসারুল্লাহ,আইআরজিসি কমান্ডার হত্যা প্রতিশোধ নিতে ১লা অক্টোবর ইরান হামলা চালায়, প্রতিশোধ নিতে ইসরাইল ২৫ অক্টোবর ইরানে বিমান হামলা চালায়। যদিও ইরান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নসাৎ করে ইসরাইলের নাকে খত দিয়ে ছেড়েছে।

Discussion about this post