মেহেরপুর প্রতিনিধি : দুই বছর আগেও ভাবাই যেত না—মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার যোগিন্দা গ্রামের জমিতে থোকা থোকা আঙ্গুর ঝুলবে। আর সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন গ্রামেরই একজন সাধারণ কৃষক—দেলোয়ার হোসেন।
ভারতের করিমপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে প্রথমবার আঙ্গুর চাষ দেখেন তিনি। তখনই বুকের ভিতর জমে থাকা স্বপ্নটা মাথা চাড়া দেয়—এই আঙ্গুরই ফলাবেন নিজের মাটিতে, নিজের হাতে।
দেশে ফিরে একটুকরো ডাল নিয়ে ফিরে আসেন। ইউটিউব আর ফেসবুকের ভিডিও দেখে শিখতে শুরু করেন কীভাবে চারা রোপণ করতে হয়, কী কী যত্ন নিতে হয়, কোন ঋতুতে কোন ছাঁটাই করতে হবে। প্রথমে কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। বরং অনেকে ঠাট্টা করেছিল কিন্তু দেলোয়ার থেমে থাকেননি।
পরীক্ষামূলকভাবে নিজের ১০ কাঠা জমিতে চাষ শুরু করেন। খরচ হয় প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আজ সেই জমিতেই থোকা থোকা আঙ্গুর ঝুলছে। বাগানে এখন বাঁকুন ও রচনা জাতের দুটি উন্নত প্রজাতির আঙ্গুর ফলে।
দেলোয়ার বলেন, ভারতে দেখে মনে হয়েছিল, আমাদের দেশেও এটা সম্ভব। সাহস করে এগিয়ে গেছি। এখন ফলন দেখে নিজেই অবাক হই।
এখন সেই পাগল দেলোয়ারের বাগান দেখতে ভিড় করছেন এলাকার মানুষ। কৃষকরা পরামর্শ নিতে আসছেন, কেউ কেউ নিজেরাও শুরু করছেন চারা সংগ্রহের প্রস্তুতি।
বায়ার ক্রপ সায়েন্স-এর কানিজ ফাতেমা ওয়ারিন বলেন, দেলোয়ার হোসেনের এই সফলতা দেখে আমরা মুগ্ধ। আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে মিরপুর ও চুয়াডাঙ্গা এলাকায় এই চাষ ছড়িয়ে দিতে চাই।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান, দেলোয়ার হোসেনের এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ সাফল্য আরও কৃষককে অনুপ্রাণিত করবে।
আজ দেলোয়ার হোসেনের চোখেমুখে সাফল্যের উজ্জ্বল দীপ্তি। প্রথমবারের মতো প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার আঙ্গুর বিক্রির আশা করছেন তিনি। তার স্বপ্ন এখন শুধু তার নিজের নয়—এটি হয়ে উঠেছে পুরো এলাকার সম্ভাবনার প্রতীক।
মেহেরপুরের মাটিতে আঙ্গুর চাষ আজ শুধুই ফলন নয়—এ এক সাহস, স্বপ্ন আর অধ্যবসায়ের গল্প।

Discussion about this post