এনামুল হক : প্রকল্প তহবিলের টাকা অপচয় ও আত্মসাতের লক্ষ্যে সরকারী ক্রয় বিধি লঙ্ঘন করে মনগড়া পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান এবং কার্যাদেশ প্রদানের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে।
কোন প্রকার ক্রয় কমিটি না করেই যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষিসম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক রবিউল ইসলাম একক সিদ্ধান্তেই এসব করেছেন বলে অভিযোগ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।
সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়ার প্রারম্ভিক ধাপে দরপত্র
আহ্বানে ত্রুটির কথা স্বীকার করেই প্রকল্প পরিচালকের দাবি পূর্বে নেয়া ক্রয় প্রক্রিয়া স্থগিত করে পূনরায় দরপত্র নোটিশ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তবেপ্রায় ২২ লক্ষ টাকার গাড়ী ক্রয়ে ইস্যুকৃত কার্যাদেশ বাতিলের বিষয়ে কোন
সদুত্তোর দিতে পারেন নি তিনি।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, যানবাহন, প্রশিক্ষন সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সরঞ্জাম (কম্পিউটারসহ প্রাসঙ্গিক সরঞ্জাম) এই তিনটি খাতে সেবা ক্রয় বা সরঞ্জামাদি ক্রয়ের জন্য পৃথক ভাবে
তিনটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। এসব সেবাক্রয়ে যথাক্রমে প্যাকেজ নং জিডি/ডিএই/জিএএসএইসওআরই- ০৫ এর মাধ্যমে যানবাহন/গাড়ীক্রয়ে শর্তানুযায়ী ৬৬ হাজার টাকার নিরাপত্তা জামানসহ দরদাতাকে দরপত্র দাখিলের আহ্বান
করা হয়। গত ১৯ মার্চ প্রকল্প পরিচালক স্বাক্ষরিত ও অনুমোদিত নোটিশটি একই
দিনে দেশের কণ্ঠ নামের আন্ডার গ্রাউন্ড মানের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এতে
দরপত্র সিডিউল সংগ্রহের শেষ দিন ধার্য করা হয় ০২ এপ্রিল এবং দরপত্র জমাদান ও
উন্মুক্তকরণ দিন ধার্য করা হয় ০৩ এপ্রিল। এই দরপত্রে কেবলমাত্র ‘মেসার্স প্রত্যাশা
এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করেন এবং তিনিই গাড়ী
সরবরাহের কার্যদেশ প্রাপ্ত হন।
অভিযোগ আছে, ১৯ মার্চ থেকে ০৩ এপ্রিল, ২০২৫ সময়ের মধ্যে অফিসিয়াল
কার্যদিবস ছিলো মাত্র ৫দিন। এছাড়া দরপত্র দাখিল ও উন্মুক্তকরনে নির্ধারিত ০২ ও ০৩
এপ্রিল,২০২৫ ছিলো ছুটির দিন যেখানে সরকারী বিধি অনুযায়ী যে কোন ধরনের
সরকারী সেবা ক্রয়ে দরপত্র আহ্বান করলে নোটিশ প্রকাশিত হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী
নুন্যতম ১৪ কার্যদিবস সময় দেয়ার বাধ্যবাদকতা থাকলেও এক্ষেত্রে সরকারী
ক্রয়নীতিমালার সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন করে এই দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন প্রকল্প পরিচালক।
একই ভাবে প্যাকেজ নং জিডি/ডিএই/জিএএসএইসওআরই- ৩২ এর মাধ্যমে
২৩মার্চ প্রকাশিত ‘দেশের কণ্ঠ’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে প্রশিক্ষন সরঞ্জামাদি
ক্রয়ে শর্তানুযায়ী ৮৪ হাজার টাকার নিরাপত্তা জামানত সহ দরপত্র দাখিল ও উন্মুক্তকরণ
দিন ধার্য করা হয় যথাক্রমে ০৫ ও ০৬ এপ্রিল,২০২৫ যার মধ্যে ০৫এপ্রিল ছুটির দিন
এবং অফিসিয়াল কার্যদিবস ছিলো মাত্র ৪দিন যা ক্রয়নীতির ষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
এছাড়া গত ২৬ মার্চ সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত প্যাকেজ নং ১০৯২৩৮৭ ও ১০৫৭৭১৭
এর মাধ্যমে একটি ইজিপি দরপত্র বিজ্ঞাপনে সৌর আলোক ফাঁদ ও প্রযুক্তি সরঞ্জাম
(কম্পিউটারসহ প্রাসঙ্গিক সরঞ্জাম)র সেবা ক্রয়ের দরপত্র দাখিলের সময়সীমা ও উন্মুক্তকরণ
দিন ধার্য করা হয়েছে ০৮ এপ্রিল,২০২৫ পর্যন্ত যার মধ্যে কার্যদিবসের সংখ্যা মাত্র
০৩দিন। এছাড়া এসব নোটিশের কোন প্রকাশ্য অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি
এমনকি ওই প্রকল্প অফিসের নোটিশ বোর্ডেও দেখা যায়নি যা সরকারী ক্রয়নীতির
চরম লঙ্ঘন।
কুষ্টিয়ার কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ উঠেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএস এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকার হাজি গোলাম মহসিন
বলেন, ‘কোন মাধ্যমেই এসব সরকারী দরপত্রের তথ্য তারা জানতে পারেননি। যশোর অঞ্চলে
টেকসই কৃষিসম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক রবিউল ইসলাম সরকারী ক্রয়নীতির
তোয়াক্কা না করে একান্তই তার নিজ মনগড়া প্রক্রিয়ায় এধরণের অস্বচ্ছ দরপত্র ও
কার্যাদেশের মাধ্যমে কার্যত: নিজ স্বত্ত্বাধীন ঠিকাদারী ফার্মের মাধ্যমে প্রকল্প
তহবিলের টাকা আত্মসাতের মিশনে নেমেছেন’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সাথে আলাপকালে জানান,
‘প্রকল্প পরিচালক রবিউল ইসলাম এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের (সম্প্রসারণ অনুবিভাগ)র
একজন উর্দ্ধতন সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা একই গ্রামের নিকটজন হওয়ার
সুবাদেই পারস্পরিক যোগসাজসে এই প্রকল্পের পরিচালক পদ দখলসহ নানা অনিয়ম ও
অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আর্থিক সুবিধা লাভের জন্যই এসব করে যাচ্ছেন নির্বিঘেœ।
এছাড়া সরকারী চাকুরীর সুবাদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইতোমধ্যে এই প্রকল্প পরিচালক
নিজ পরিবার সংশ্লিষ্টদের নামে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। এসবের মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হলো- খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকাধীন নিরালা আবাসিক এলাকায়
লেক ব্রিজ নামক ১০ তলা ভবনের ৫ম তলায় অর্ধকোটি টাকার একটি এবং বয়রা
এলাকায় কৃষিবিদ টাওয়ার-১ নামক ১০তলা ভবনের ৫ম তলায় পৃথক আরও ১টি
অর্ধকোটি টাকার ফ্লাট রয়েছে যা চাকরী সূত্রে খুলনা অঞ্চলে থাকার কারণেই এসব
করতে পেরেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও খুলনা কৈয়া বাজার সড়ক সংলগ্ন
প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ৫কাঠার একটি প্লট রয়েছে। জ্ঞাত আয় বহির্ভুত এসব
সম্পদের অভিযোগ তদন্তে বিভাগীয় কমিটি গঠিত হয়।
এসব অভিযোগের আংশিক সত্যতা স্বীকার করে প্রতিবেদকের সাথে মুঠোফোনে
আলাপকালে প্রকল্প পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পিপিআর বা সরকারী ক্রয়নীতি
অনুযায়ী ইজিপি বা উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে নির্ধারিত কার্যদিবস সময়কালে
ত্রুটি হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসায় আমরা পূন:দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু
করেছি’। এছাড়া প্রকল্প তহবিলের টাকা আত্মসাত চেষ্টার অভিযোগ ভিত্তিহীন’।
এসময় জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে এই প্রকল্প পরিচালক
জানান, ‘যেসব প্লট এবং ফ্লাটের উল্লেখ করছেন সেগুলি আমি ব্যাংক থেকে বিশ লক্ষ
টাকা লোন নিয়ে কিনেছি’।

Discussion about this post