মোঃ ফয়সাল আলম রাজশাহী প্রতিনিধি: পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই। এমন পরিস্থিতিতে জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সাড়ে ৪ হাজার মানুষ।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) পদ্মা নদীর রাজশাহী পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১৭ দশমিক ৪৯ মিটার। ফলে এক ধরনের আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটছে চরবাসীর। রাজশাহীতে বিপদসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- প্লাবিত এলাকায় খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। ইতোমধ্যে সঙ্কটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), জনপ্রতিনিধির নম্বর দেওয়া হয়েছে। ফলে ভোক্তভোগিরা যোগাযোগ করে দ্রুত সেবা নিতে পারবেন। এছাড়া সরকারিভাবে দুই উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। একটি ইউনিয়নের জন্য ত্রাণ বিতরণ প্রস্তুতি সম্পন্ন রাখা হয়েছে।
পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে রাজশাহী জেলার পবা, গোদাগাড়ী ও বাঘা উপজেলার কিছু অংশজুড়ে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঘা উপজেলার চরকরাজাপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়ের ৩৫০ এবং গড়গড়ি ইউনিয়নের ২০০ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে চররাজাপুর ইউনিয়নের পাঁচটি ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডগুলো নদীভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী আক্তার বলেন, চররাজাপুর ইউনিয়ের ৩৫০ ও গড়গড়ি ইউনিয়নের ২০০ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। অনেকের বাড়িতে পানি উঠে গেছে। কারও কারও উঠতে বাকি। ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। চরবাসীদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র ও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
অপরদিকে, পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের চরখিদিরপুর, চর তারানগর ও চর নবীনগরের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়েছেন। এই চরগুলোতে তিন হাজার মানুষের বসবাস হলেও এখনও ১৫০০ মানুষ সেখানে রয়েছে। বাকি মানুষ নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে লোকালয়ে চলে এসেছেন। এখানে শামপুর গ্রামের শ্যামপুর দাখিল মাদ্রাসায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
চর খিদিরপুরের বাসিন্দা মাসুদ বলেন, পদ্মার পানি বেড়েছে। জেগে উঠা চরগুলো ডুবে গেছে। ফলে চরের বেশিরভাগ মানুষ লোকালয়ে চলে এসেছে। এছাড়া গবাদি পশু লোকালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। ফলে এক ধরনের গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ বলেন, হরিয়ান উপজেলার এই চরে তেমন মানুষ বসবাস করে না। মূলত গবাদিপশুর চারণভূমি। চরগুলোতে ৩ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই লোকালয়ে ফিরেছে। এখনও ১৫০০ মানুষ ফিরেনি। তাদের গবাদিপশু রয়েছে চরে। তাদের সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) চরে শুকনা খাবার বিতরণ করা হবে।
এদিকে, গোদাগাড়ী ইউনিয়নে আষাড়িয়াদাহ ইউনিয়ন পদ্মার চরে। এই ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। এক ধারনের আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটছে চরবাসীর।এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ বলেন, এই চরে আড়াই হাজার মানুষ পানিবন্দি। ত্রাণ বিতরণ করা হবে। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), জনপ্রতিনিধির নম্বর দেওয়া হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে পারবেন।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক বলেন- বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ছয়টায় পদ্মা নদীর রাজশাহী পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৪৯ মিটার। বুধবার (১৩ আগস্ট) একই সময়ে পানির উচ্চতা এটাই ছিল। পানি বৃদ্ধি ও কমার বিষয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না।

Discussion about this post