Tag: পাইকগাছায় ধানের নেক ব্লাস্টে রোগে

পাইকগাছায় ধানের নেক ব্লাস্টে রোগে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা দাবি

পাইকগাছায় ধানের নেক ব্লাস্টে রোগে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা দাবি

 পাইকগাছায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনেও হাঁসি নেই কৃষকের মুখে। কোন কোন এলাকায় শেষ সময়ে নেক ব্লাস্টের আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। প্রস্তুতি না থাকায় কৃষি বিভাগের পরামর্শেও কাজ হয়নি আক্রান্ত ক্ষেতে। ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় কর্তন শুরু হলেও শীষে ধান নাথাকায় শ্রমিকের মজুরী উসুল হচ্ছেনা। এমন পরিস্থিতিতে প্রণোদনা দাবি করেছেন তারা। কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি বোরো আবাদ মৌসুমে ৪ হাজার ৯ শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও প্রথম থেকে লবণ পানির উত্তোলনে বিধি নিষেধ থাকায় শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ শ’ হেক্টর বেশি জমিতে অর্থাৎ ৫ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে বোরা আবাদ হয়। এর কারণ হিসেবে গত বার উৎপাদনের পাশাপাশি দাম ভাল থাকার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কৃষকরা সর্বস্ব বিনিয়োগ, কেউ বা ঋণ নিয়ে, স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে অধিক লাভের আশায় বোরোর আবাদ করেন। তবে আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশে বাম্পার ফলনের আশায় প্রথমে কৃষকের মুখে হাঁসি ফুটলেও মাঝামাঝি সময়ে ধানের শীষ ভারী হওয়ার সাথে সাথে দেখা দেয় ঘাতক ছত্রাক নেক ব্লাস্টের আগ্রাসন। প্রস্তুতি না থাকায় কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই আকষ্মিক মাঠের পর মাঠ ব্লাস্ট শেষ করে দেয় কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। মাঠ পর্যায়ে কাজ করা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শেও কার্যত কোন কাজ হয়নি বলেও অভিযোগ কৃষকদের। কোন কোন এলাকায় প্রান্তর জুড়ে পাকা ধানের ক্ষেত দেখা গেলেও মূলত মাঠের সব ধানই চিটে হয়ে গেছে। কৃষকরা জানান, আক্রান্ত ক্ষেতের অধিকাংশই ব্রি-২৮ জাতের ধান। আকষ্মিক জাতবিশেষ ধানের ক্ষতির মুখে আগামীতে ব্রি-২৮ আবাদ নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। এব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘নেক ব্লাস্ট থেকে রক্ষা পেতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষক পর্যায়ে সভা-সমাবেশ, মাইকিং, লিফলেট বিতরণপূর্বক ও কৃষকদের করণীয় তুলে ধরেছেন। ক্ষেত্রে তারা ছত্রাক থেকে রক্ষা পেতে নাটিভো, ব্লস্টিন, ফিলিয়া, টাটাভোজাতীয় ছত্রাকনাশক ধান ক্ষেতে ছিটানোর পরামর্শ দিয়েছেন বলেও দাবি করে তিনি আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশে কৃষি বিভাগের সার্বিক তদারকি ও কৃষকের নিবিড় পরিচর্যায় রোগ-বালাইয়ের প্রকোপ কম থাকায় চলতি মৌসুমে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে বলেও দাবি করেন। কৃষি বিভাগ আরো জানায়, ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা উফশি জাতের ধান কাটা শুরু করেছেন। বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তবে কোন এলাকার কৃষকরা বলছেন ভিন্ন কথা, তাদের দাবি, প্রস্তুতি না থাকায় তারা ধানের পরিবর্তে চিটাসহ গাছ কর্তন করছেন। এজন্য তারা কৃষি বিভাগের আগাম সতর্কতা কিংবা পরিকল্পনাহীনতাকেই দায়ী করছেন। কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে নেক ব্লাস্ট উপজেলায় বোরো ক্ষেতে খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনি। তাদের হিসাবমতে, উপজেলায় মাত্রা ৪০ হেক্টর জমিতে এ ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যার মধ্যে ২ হাজার ৪১২ হেক্টর ব্রি ধান-২৮, ১ হাজার ১৩৪ হেক্টর ব্রি ধান-৬৭, ১৯০ হেক্টর ব্রি ধান-৫৮, ৭৫ হেক্টর ব্রি ধান-৫০, ২৩ হেক্টর ব্রি ধান-৮৮, ৩০ হেক্টর ব্রি ধান-৭৪, ৫০ হেক্টর ব্রি ধান-৮১, ২১ হেক্টর ব্রি ধান-৭৭, ১২ হেক্টর ব্রি ধান-৭৮, ১০ হেক্টর ব্রি ধান-৯৯, ৩ হেক্টর ব্রি ধান-১০০, ৩০ হেক্টর ব্রি ধান-৬৩, ১৫ হেক্টর ব্রি ধান-৯২, ১৫ হেক্টর বিনাধান-১০, ১৫ হেক্টর বিনাধান-১৪, ১৫ হেক্টর বিনাধান-২৪। উন্নত জাতগুলোর মধ্যে হাইব্রিড হিরা ১৪১ হেক্টর, শক্তি-২-৮৬ হেক্টর, তেজগোল্ড ১৪৩ হেক্টর, সিনজেন্টা-১২০৩- ২২২ হেক্টর, এসএল ৮ এইচ ২৯৫ হেক্টর, এম এস-১- ৩২৫ হেক্টর ও এসিআই-১- ৩৬০ হেক্টর। তবে কোন এলাকায় লবণ পানির উত্তোলন বন্ধ থাকায় সেখানে বোরো আবাদ হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো প্রায় ৮ শ’ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। গদাইপুর চরমলই গ্রামের কৃষক আজিজুল হক জানান, ৪বিঘা জমিতে ভিত্তি-২৮ আবাদ করেন। তার মধ্যে দেড় বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েগেছে। জিন্নাত মোড়ল বলেন, তিনি ৩ বিঘা জমিতে আবাদ করেছিলেন। কৃষি অফিসের পরামর্শে শত চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত কোন ধান বাঁচাতে পারেননি তিনি। সরলের কৃষক নিখিল মন্ডল বলেন, তিনি ৯ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়ে ক্ষেতের প্রায় সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো ওষুধ দিয়েই লাভ হয়নি। একই প্রতিক্রিয়া মেলেকপুরাইকাটির শাহাজান, ভুট্টো, গদাইপুরের আমজাদ, মান্নান, রেজাউল, সালাম, হাকিম। কাশিমনগরের আব্দুল্লা মোড়লদের। তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, উপজেলার ব্রি ধান-২৮ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগ বেশি দেখা দিয়েছে। তবে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে পাইকগাছার অবস্থা অনেকটা ভাল। ভূক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বলছেন, ঋণের খড়গ কিছুতেই যেন পিছু ছাড়ছেনা তাদের। গতবার লবক্ততা ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর এবার ব্লাস্ট ক্ষতি করল তাদের। ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়েও আশংকা তাদের। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, কৃষি বিভাগের সার্বিক তদারকি ও কৃষকদের অতিরিক্ত সতর্কতায় নেক ব্লাস্ট খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনি। ব্লাস্ট ছাড়া অন্যান্য রোগ-জীবানুর প্রকোপ কম ছিল বলেও দাবি তার। সব মিলিয়ে সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। ইতোমধ্যে উফশি জাতের বোরো কর্তন শুরু হয়েছে। সেখানে হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৫ থেকে ৬ মেট্রিকটন ছাড়িয়ে গেছে। এসময় তিনি আগামীতে ২৮ এর পরিবর্তে ৬৭, ৮১, ৮৮, ৯২, ৯৯ ও ১০০ সহ অন্যান্য জাতের ধান আবাদে কৃষকদের পরামর্শ দেন তিনি। এবি//দৈনিক দেশতথ্য//এপ্রিল ১৭,২০২২//

সর্বশেষ সংবাদ

আর্কাইভ

May 2025
S M T W T F S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Add New Playlist