শেখ নাদীর শাহ্, পাইকগাছা (খুলনা):
আজ ২৭ মার্চ চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিস্থ কপোতাক্ষ নদের কালীবাড়ী ঘাটে অনুষ্ঠিত হবে বারুণীর স্নানোৎসব।
ভোর ৫.২২ মিনিট থেকে শুরু হয়ে এ স্নানোৎসব চলবে সকাল ৯.২৬ মিনিট পর্যন্ত।
প্রায় ৪ শ’ বছর আগে থেকে জনপদের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে কপোতাক্ষের এই স্থানে বারুণী স্নানোৎসবে মিলিত হন।
তারা বিশ্বাস করেন, এই তিথিতে গঙ্গার জল এইস্থানে প্রবাহিত হয়। আর গঙ্গা জল শাস্ত্রমতে পবিত্র। তাই পুরনো পাপমোচন ও পূণ্যলাভের আশায় তারা গঙ্গা স্নান অর্থাৎ বারুণী স্নান করে থাকেন।
স্থানীয় কপিলেশ্বরী কালী মন্দিরের ভাপ্রাপ্ত সভাপতি চম্ক পাল জানান, এবছর পঞ্জিকামতে মহাবারুণী যোগ নেই তাই মহাবারুণী স্নান, শুধুমাত্র বারুণী স্নান নোৎসব মিলিত হবেন সনাতনীরা। তাছাড়া রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার-আচারণসহ বারুণী স্নানই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এক সময় বারুণী স্নান উপলক্ষে কপিলমুনিতে মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হতো মহা বারুণী মেলা। তবে গত আওয়ামী লীগ সরকারের শাষনামলে রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা সংকট দেখিয়ে বন্ধ রাখা হয় বারুণী মেলা। সেই থেকে সনাতনীদের স্নানোৎসবের মধ্যেই শুধুমাত্র নিহিত রয়েছে বারুণী মেলা।
মেলার ইতিহাস থেকে জানাযায়, প্রায় ৪শ’ বছরেরও বেশি সময় আগে কপিল দেব নামে এক মুনি কপোতাক্ষের সুন্দরবন উপকূলীয় উপজেলার কপিলমুনি কালী মন্দির সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের তীওে বটবৃক্ষ মূলে তপধ্যানে মগ্ন থেকে সিদ্ধিলাভ করেন। তার সিদ্ধিলাভের দিনেই সেই স্মরণাতীত কাল থেকে জনপদের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কালীবাড়ী ঘাটে বারুণী স্নান উৎসব পালন করে আসছেন। কথিত আছে, দ্বাপর যুগে কপিল দেবের এক ভাই জরাসন্ধ ১শ’ নৃপতিকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে নরমেধ যজ্ঞ শুরু করেন। এ লক্ষ্যে তিনি হত্যাকান্ড শুরু করলে তার বৈমাত্রেয় ভাই কপিল তাকে প্রশমনে ইশ্বরের সাহায্য প্রার্থনায় সিদ্ধিলাভের আশায় বিভিন্ন স্থানে তপধ্যান শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি কপিলমুনি কপিলেশ্বরী কালীবাড়ী স্নান ঘাট সংলগ্ন বটবৃক্ষের মূলে বসে তপধ্যান শুরু করেন এবং সিদ্ধি লাভ করেন। তিনি যে যে স্থানে তপধ্যান করেন সেই সকল স্থানে বারুণীস্নান অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে বারুণী স্নানে অংশ নিতে জনপদের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কপিলমুনি স্নান ঘাট এলাকায় বুধবার থেকে আসতে শুরু করেছে। রাতে তাদের অনেকে স্থানীয় আত্নীয়-স্বজন ও পার্শ্ববর্তী কপিললেশ্বরী কালী মন্দির প্রাঙ্গন, বেদ মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরে রাত্রি যাপন করবেন। এরপর প্রত্যুষে স্নান শেষে যার যার বাড়িতে ফিরবেন তারা।
এব্যাপারে কপিলমুনি ইউপির প্যানেল ও দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুস আলী মোড়ল জানান, যেহেতু কয়েক বছর ধরে বারুণী মেলা হচ্ছেনা তাই এবারো মেলা হচ্ছেনা। আর মন্দির কমিটির বরাদ দিয়ে তিনি জানান, রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় আয়োজকরা শুধুমাত্র ঐতিহ্য রক্ষায় বারুণী স্নানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছেন।

Discussion about this post