নিজস্ব প্রতিবেদক : কুষ্টিয়ায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে গুম করার অভিযোগ এনে নিঁখোঁজ সবুজের ছোট ভাই বাদি হয়ে আদালতে করা মামলায় এজাহার নামীয় আ’লীগ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আদেশ দিয়েছে আদালত।
সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমালী আদালতের বিচারক মাহমুদা সুলতানার এজলাশে বাদির পক্ষে এজাহার দাখিল করেন এ্যাড. মাহফুজুর রহমান। আদালত শুনানী শেষে মামলাটি সরাসরি এফআইআর ভুক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের আদেশ দিয়ে আদেশের কপি কুস্টিয়া মডেল থানায় প্রেরণের আদেশ দেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৫ আগষ্ট শেখ মুজিব কে হত্যা দিবস পালনকে কেন্দ্র কুষ্টিয়া মজমপুর গেইটে শেখ মুজিব ম্যুরালে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দের জেরে সেখানে এজাহার নামীয় নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় জনৈক সবুজ নামের এক যুবক ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এঘটনার দায় চাপিয়ে কুষ্টিয় জেলা স্বেচ্চাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে দায়ি করে। এঘটনার জের ধরে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের নেতৃত্বে ও আসামীদের পরষ্পর যোগসাজসে সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ঢাকার গাজীপুরে একটি রিসোর্টে থাকার বন্দোবস্ত করে দেন।
সেখান ৪দিন অবস্থান করার পর ২১ আগষ্ট ভোরে ওই রিসোর্ট থেকে ১০/১২জন সাদা পোশাকধারী লোক সবুজকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন সবুজের আর কোন সন্ধান পায়নি পরিবার। নিঁখোজ সবুজের পরিবার সম্ভাব্য সকল স্থান ও ব্যক্তির দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন খোঁজ পায়নি। এমনকি সবুজের সন্ধান বের করার আবেদন নিয়ে প্রধানন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়েও কোন ফল পাওয়া যায়নি। একই ভাবে অজ্ঞাত সাদা পোশাকধারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলেও থানায় মামলাটি গ্রহন করা হয়নি। এতে নিখোজ সবুজের পরিবারের বদ্ধমুল ধারনা ও সন্দেহ যে মাহবুবুল আলম হানিফের নেতৃত্বে আসামীদের যোগসাজসে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সবুজকে গুম করা হয়েছে। আজকে বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে গুম হওয়া সবুজের সন্ধানসহ এঘটনায় জড়িত সকল আসামীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির আবেদন করেন গুম হওয়া সবুজের ছোট ভাই কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা শেখ কাইজার হোসেনের ছেলে আরিফুল হোসেন সজিব বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
আদালতের দাখিল করা এই মামলাটির আইনজীবি এ্যাড. মাহফুজুর রহমান সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে গুমের অভিযোগে করা মামলায় যাদের বিবাদী করা হয়েছে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সরাসরি এফআইআর ভুক্ত করে পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়েছেন। বিবাদিরা হলেন- স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহামন মোমিজ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩এর সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবুল আলম হানিফ, জেলা আ’লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সহভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক হওয়া (হানিফের ভাই) আতাউর রহমান আতা, আতার ছোট ভাই আতিকুর রহমান আতিক, মোমিজের ছোট ভাই হাফিজুর রহমান হাফিজ, জগতি মিনাপাড়ার বাসিন্দা হালিমুজ্জামান হালিম, শহরের কুঠিপাড়ার বাসিন্দা নিখোজ সবুজের প্রতিবেশী আবু বক্কর সিদ্দিক, শহরের পিয়ারাতলার বাসিন্দা রমজান হোসেন, খোকসা উপজেলার চক হরিপুরের বাসিন্দা রবিউল হোসেনসহ অজ্ঞাত আরও বেশ কয়েকজন।
‘
কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুল হক চৌধুরী জানান, ‘বিষয়টি শুনেছি তবে এবিষয়ে আদালতের আদেশের নথি এখনও থানায় আসেনি। নথি পেলে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Discussion about this post