সিলেট অফিস:
সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরবাসীর জন্য পাইপলাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। ফলে এখানকার ৯২.৭৫% পরিবার খাবার ও অন্যান্য কাজে এখনো নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে ব্যবহার করছে। ক্রমাগত নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় বিয়ানীবাজার পৌর এলাকায় পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে।
এদিকে পৌরসভার নাগরিকদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে বিয়ানীবাজার পৌরসভায় গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। অথচ নানা জটিলতার কারণে এখনও প্ল্যান্টটির সুফল পাচ্ছেনা পৌর এলাকার জনগণ। ফলে ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্ল্যান্টটি অনেকটা অকেজো পড়ে আছে, ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, বিয়ানীবাজারসহ দেশের ৪০টি পৌরসভায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয় জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের আওতায় বিয়ানীবাজার পৌরসভায়ও গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৮ সালের জুন মাসে ফতেহপুর এলাকার লোলাখালের কাছে পানি শোধানাগার স্থাপন কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। একাধিকবার মেয়াদ বাড়িয়ে গত বছর এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন ও বিশুদ্ধকরণের পর ৪৫০ ঘনমিটার ধারণক্ষমতার সুরিসর ওভারহেড ট্যাংকে (রিজারভয়ার) সংরক্ষণ করে পাইপলাইনের মাধ্যমে পৌরবাসীদের আবাসিক স্থাপনায় আয়রণমুক্ত বিশুদ্ধ পানি সরবারহের লক্ষ্যেই এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লানটি বুঝিয়ে দিলেও কার্যত: প্রায় ৪৫ হাজার পৌরবাসীর কোনো কাজেই আসছে না এ প্লান্টটি। তবে এক্ষেত্রে পৌরবাসীর অনাগ্রহকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পৌর কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, পানি শোধনের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি অত্যাধুনিকভাবে নির্মিত। এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পানি পরিশোধন করা হবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পানিতে থাকা আয়রন ও আর্সেনিকের পরিমাণ জানা যাবে। সেই সঙ্গে জানা যাবে কত লিটার পানি সরবরাহ হয়েছে আর কত লিটার জমা আছে। এখানে মূলত তিনটি পাম্পের মাধ্যমে ভু-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের পর পরিশোধন করা হবে। এরপর সেখান থেকে পৌঁছে দেয়া হবে গ্রাহকের কাছে।
অভিযোগ উঠেছে, ব্যবহার না হওয়ায় এবং অপরিকল্পিতভাবে স্থাপন করায় বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব পাইপলাইন।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার নকশাকার আশরাফুল ইসলাম বলেন, পৌর এলাকায় ২শত কিলোমিটার মূল রাস্তা রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে পৌরশহর ও শহরতলী এলাকার ২২ কিলোমিটার এলাকায় পানি সরবরাহ পাইপ স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো পৌরসভায় আমরা পাইপ লাইন স্থাপন করবো। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি আমরা ভর্তুকি দিয়ে চালু রেখেছি। কারণ পাইপলাইনে পানি ব্যবহার করলে গ্রাহকদের বিল দিতে হয়। তাই সংযোগ নিতে অনাগ্রহী এখানকার গ্রাহকরা। এ পর্যন্ত আমরা মাত্র ২শ’টি সংযোগ প্রদান করতে পেরেছি বলেও জানান তিনি।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র মো: ফারুকুল হক বলেন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে শোধানাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পৌরবাসী সংযোগ নিতে আগ্রহী নয়। আমরা পানির পাম্প এবং যন্ত্রাংশ যাতে বিকল না হয়, তার জন্য চালু দিয়ে রাখি। তিনি বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারে পাইপলাইন দিয়ে সরবরাহ করা পানি ব্যবহারের অনুরোধ জানান।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জানুয়ারী১৮,২০২৪//

Discussion about this post