ময়মনসিংহের নান্দাইলে গত আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিলের সামনের দিকে এক ব্যক্তিকে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করতে দেখা গেছে।
এতে নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে এবং প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
রবিবার (১২ নভেম্বর) বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের ডাকা ওই বিক্ষোভ মিছিলের সামনের দিকে ছিলেন ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল আব্দুস সালামের (অব.) মেয়ে ওয়াহিদা হোসেন রূপা ও তাঁর স্বামী জাহিদ হাসান প্রীতম।
আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, আগ্নেয়াস্ত্রধারী ওই ব্যক্তির নাম মো. কামরুজ্জামান। তিনি আব্দুস সালামের জামাতা প্রীতমের দেহরক্ষী। কাউকে ভয় দেখাতে ওই অস্ত্রটি প্রদর্শন করা হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন স্থানীয় সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজ মাঠে।
পরে সেখান থেকে দুই ভাগে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পুরুষদের মিছিলটির নেতৃত্ব দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম। তা ছাড়া সামনে নারীদের মিছিলের নেতৃত্ব দেন তাঁর মেয়ে ওয়াহিদা হোসেন রূপা। পাশেই ছিলেন রূপার স্বামী জাহিদ হাসান প্রীতম।
আর প্রীতমের পাশাপাশি হাঁটছিলেন আগ্নেয়াস্ত্রধারী সেই ব্যক্তি। মিছিলে অংশ নেওয়া অনেকের হাতে দেখা যায় সাংবাদিকবিরোধী কথা লেখা প্ল্যাকার্ড। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি গিয়ে জড়ো হয় উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে। সেখানে এক সমাবেশে নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন। তাঁরা হরতাল ও অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াতের গাড়ি পোড়ানো, পুলিশের ওপর হামলাসহ নৈরাজ্যের প্রতিবাদ করেন।
এ ছাড়া সাবেক এমপি আব্দুস সালামকে নিয়ে সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘নেতিবাচক’ সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে ক্ষোভ জানানো হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি আব্দুস সালাম আগামী নির্বাচনে নৌকাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের কাজ করার নির্দেশ দেন। তিনি আরো বলেন, ‘২০০৮ সালে আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সেই ষড়যন্ত্র এখনো বহাল রাখছে। আমার চরিত্র হননে নেমেছে একটি চক্র।’
এদিকে মিছিলে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগ্নেয়াস্ত্রটি কামরুজ্জামানের নামে লাইসেন্স করা। অস্ত্রটির নাম ১২ বোর শর্টগান। সাবেক এমপি আব্দুস সালামের জামাতা প্রীতমের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত তিনি। পরে আমরা কামরুজ্জামানকে দ্রুত সরিয়ে নিই।’
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, “২০০৬ সালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় ২৫ ‘ক’তে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি তাঁর নামে লাইসেন্স করা অস্ত্র আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে নিজে বহন বা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে অন্যের হয়ে ভীতি বা বিরক্তি উদ্রেক করতে পারে এমনভাবে অস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না। ‘গ’তে বলা আছে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সধারী কোনো ব্যক্তি নিজে ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা সম্পত্তি রক্ষার জন্য অস্ত্রধারী প্রহরী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে তাঁর অস্ত্রের লাইসেন্স তাত্ক্ষণিকভাবে বাতিলযোগ্য হবে।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন মিয়া বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছি। ওই লোকের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
জেলা পুলিশ সুপার মো. মাছুম আহম্মেদ ভুইয়া বলেন, ‘এভাবে একটি মিছিলের অগ্রভাগে অস্ত্র নিয়ে থাকা প্রাথমিকভাবে বেআইনি বলে মনে হচ্ছে।’
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post