সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া নায়িকা পরিমনি ও অন্যান্যদের নিয়ে চলছে বিভিন্ন আলোচনা ও সমালোচনা। এসব বিষয় নিয়ে পরিবেশিত খবরগুলো খাবার হলে বলতাম মুখোরোচক। বিনোদন হলে বলতাম উপভোগ্য। সাহসিকতাপূর্ণণ কাজ হলে বলতাম দু:সাহসিক। বেদনা দায়ক হলে বলতাম দু:খজনক। সাহিত্য হলে বলতাম নান্দনিক।
বিষয় গুলো এর কোনটির মধ্যেই পড়েনা। তবে এটা সাংবাদিকতার মধ্যে পড়ে বৈকি! সাংবাদিক হয়ে আরেকজন সাংবাদিক লেখক কিংবা সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে বলা আর কাকের মাংশ খাওয়া প্রচলিতমতের মধ্যে। তারপরও কিছু না বললে সাংবাদিকতার ইথিক্স মাথায় বাড়ি দেয়। তাই আমি বলি, কলম আছে বলে যা ইচ্ছা তাই লিখে ফেলা যায়? পত্রিকা আছে বলেই তা প্রকাশ করা যায়?
লেখার বিষয় জনপ্রিয় হলেই লেখক জনপ্রিয় হবেন এমনটা নয়। যদি হতো তা হলে চটি লেখক রসময় গুপ্ত এ দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হতেন। ওই সব চটি বইয়ের লেখক জনপ্রিয় না হলেও চটি কিন্তু খুবই জনপ্রিয়। যত জনপ্রীয়ই হোকনা কেন, রসময় গুপ্তের সেইসব চটি বই গুলো কিন্তু পেপার স্টলে লুকিয়ে বিক্রি করা হয়। জীবনে রসময়ের দু’একটা চটি বই পড়েনি এমন লোকের সংখ্যা নেহায়েৎ কমও নয়। ওই চটি পড়ে কল্পনার জগতে কতো যে সুন্দরীর মুখ আঁকা হয়েছে তা ওই বইয়ের পাঠকরাই ভালো জানেন।
আমার মনে আছে তখন কয়েকজন মিলে মেস করে থাকতাম। এক বড় ভাই ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা। একসময় আবিষ্কার করলাম তার রসময়গুপ্তের চটির ব্যাপক কালেকশন। আর এ কালেকশন থেকে লুকিয়ে ছাপিয়ে আমরাও মাঝে মাঝে এনে পড়তাম। বিষয়টি টের পেয়ে পরে তিনি তার বিশাল সংগ্রহ তালাবদ্ধ করে রাখতেন। তবে বুঝতে পেরেছিলাম, তিনি চটির নেশাসক্ত ছিলেন। যাক গা! সেসব পুরনো এবং যৌবনারম্ভের দিনের কথা।
তবে এই জামানায় এসে এক বড় ভাইয়ের লেখা পড়ে বিষ্মিত হয়েছি। একজন লেখার লিঙ্কটি পাঠিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলেন। এসব লেখা এমনিতেই পড়ি না। নিজের পেশার কাজ আর পৃথিবীর ভালো বইগুলোই পড়ে কূল পাচ্ছি না। আর এসব তৃতীয় স্তরের লেখা পড়ার সময় কোথায়?
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকজন নারীর বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়ে মদসহ বিভিন্ন মাদক আটক করেছে। এই প্রসঙ্গে ভদ্রলোক পত্রিকার কলামে এইসব নারীদের নিয়ে যে রগরগে মন্তব্য করেছেন এটা শুধু একপেশেই নয়, অনৈতিক ও অশ্লীলও বটে। এমন লেখা যে কেবল উনিই লিখেছেন তা নয়। আরও অনেকেই এইসব নারীদের কাহিনীতে রঙ মেরে লাল করে দিচ্ছেন কিছু পাঠকের মন।
তাদের বাড়িতে বিপুল পরিমান মদ উদ্ধার হওয়া দেখে বলছেন, ওগুলো মিনি বার। প্রশ্ন, এইসব মদ কী শুধু ওই নারীরাই খেতো? বা অন্য নারীরা এসে এখানে আড্ডা জমাতো? এটা কী নারীদের আড্ডাখানা ছিল? কোনো পুরুষ যেতো না? যদি যায় তা হলে শুধু এই নারীদের নিয়ে কেন গাত্রের উত্তাপ বাড়ানো চটির গল্প বানাচ্ছেন?
শুনলাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, সমাজের প্রভাবশালী উচ্চবিত্ত শ্রেণির লোকজন, তাদের সন্তানরা এসব আড্ডায় যেতেন। তা হলে তারা কী দায়ী হবে না? যদি বলি এই ক্ষমতাবান লোকগুলো তাদের ভোগবিলাসের জন্য এই নারীদের জিম্মি করে ব্ল্যাকমেল করে অনৈতিক কাজ করাতে বাধ্য করেছেন। সেটা ভুল প্রমাণ করবেন কি ভাবে? সেখানে যারা যেতো পারবেন কি তাদের তালিকা প্রকাশ করতে। তাদের নিয়ে কি কলাম লিখতে পারবেন? লেখার পরে কি চাকরি বাঁচাতে পারবেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে তাদের কি ধরাতে পারবেন? পারবেন কি “অপহরণ “ নামক ভারতীয় হিন্দি সিনেমার শুখরঞ্জণ সেজে প্রেস কনফারেন্স করতে। উত্তর হবে নিশ্চয়ই “না”।
তিনি লিখেছেন , “নানা সোসাইটিতে বিচরণ করা এই উচ্চভিলাষী চরিত্রহীনেরা উঁচু দরের কলগার্লই নয়,নারী ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কেউ কেউ কারো রক্ষিতা”। এটা সত্য কথা। এই নারীরা উঁচু দরের কলগার্ল হলেও হতে পারে। তাদের কল দিতে হলে কত খরচ করতে হয় তা জানেন কি? আমি শুনেছি ওই খরচের টাকার পরিমান আমার মতো কম্পিউটার টিপা সাংবাদিকের কয়েকমাসের সংসার খরচের চেয়েও বেশি। এতেই বুঝা যায় কারা তাদের কল দিতে পারতেন। আর প্রচুর বিনিয়োগ ছাড়া মাদকের ব্যবসা করা যায় না। এই বিনিয়োগ কারা করতে পারবে সেটাও না বুঝার কারণ নেই। এরা কারো কারো নাকি রক্ষিতা। কিন্তু কাদের রক্ষিতা ? কোন শ্রেণির লোকজন রক্ষিতা রাখে এবং রক্ষিতা বানায় এটা নতুন কিছু না।
কিন্তু তাই বলে একপেশে শুধু রক্ষিতারই চরিত্রহনন করবেন আর রক্ষকের পা চাটবেন তাতে তো কারো বীরত্ব কিংবা সাহসের পরিচয় হতে পারেনা। এসব না করে ওইসব লেখকরা বরং চরম সুবিধাবাদির পরিচয় দিয়েছেন। সাহস থাকলে রক্ষকদের নিয়েও লিখুন। তাদের তালিকাও প্রকাশ করুন। তা হলেই না বুঝবো আপনি সাহসী সাংবাদিক, কলামিস্ট কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহসী কর্মকর্তা।
এসব যদি করতে না পারেন তাহলে ঘটনায় রঙ না চড়িয়ে আইনে যা আছে তাই করুন। কপালে যা আছে তাই গলাধকরণ করুন।
—দৈনিক দেশতথ্যের এই সংবাদ সমালোচনাটি লিখেছেন সিনিয়র সাংবাদিক শংকর মৈত্র। লেখাটি সম্পাদনা করেছে দৈনিক দেশতথ্যের ঢাকা ডেস্ক।

Discussion about this post