অপরাধ ও শাস্তির ক্ষেত্রে আইনের স্পষ্ট ব্যাখা আছে। সাধারণের চোখে দেখা অপরাধ আর আইনের চোখে দেখা অপরাধের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। পরীমনি সাকলাইন পিয়াসা মৌ হেলেনাদের নিয়ে কত রটনা ও ঘটনাই যে ঘটছে তা বলে বুঝানো দুরহ। তারপরও এসব ঘটনা গুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যা বলা হচ্ছে আইনে তার তেমন গুরুত্ব নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে পরীমনি পিয়াসা মৌরা কী সমাজের অচ্যুত কেউ ? যে তাদের সঙ্গে মেশা যেতো না? তাদের সঙ্গে কথা বলা নিষেধ ? না, তা নিশ্চয়ই নয়। তবে তাদের অনেকেই সেলিব্রেটি একথা অস্বীকার করার অবকাশ নেই। অনেকেই তাদের সঙ্গে সেলফি তুলে ধন্য হয়েছেন একথাও সঠিক। ক্ষমতাশালীরা তাদের আস্তানায় গেছেন সেটাও বুঝা যাচ্ছে।
আইনত তাদের সঙ্গে ছবি তোলা, টেলিফোনে কথা বলা, তাদেরকে গাড়ি বাড়ি উপহার দেয়া, তাদের নিয়ে বিদেশ যাওয়া এর কোনটিই তো দেশের প্রচলিত আইনে অপরাধ নয়। আইনে অপরাধের যে ব্যাখা আছে এসব ঘটনা তাঁর মধ্যেও পড়েনা।
তাদের বাসায় যে মদ পাওয়া গেছে সেটার লাইসেন্স ছিল কী না, অবৈধ মাদকদ্রব্য ছিল কী না, তারা গাড়ি বাড়ির যথাযথ ট্যাক্স দেন কী না এগুলো এখনো প্রকাশ করানো হয়নি। মদ খাওয়ার লাইসেন্স না থাকলে, ট্যাক্স না দিলে কি শাস্তি হতে পারে তা তো আইনে স্পষ্ট আছে।
এসব এখনো জানানো হয়নি। তবে তারা ব্লাকমেইল করেছে এটা চাউর অবস্থানে আছে। তাদের দ্বারা কেউ যদি ব্লাকমেইলের শিকার হন তাহলে তাকে তো অভিযোগ আনতে হবে। এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্লাকমেইলের অভিযোগ কেউ তো আনেনি। সুতরাং বাদি না থাকায় এ অভিযোগ নাজিল হওয়ার সুযোগতো আইনের দৃষ্টিতে দেখছি না।
এখানে হেলেনা জাহাঙ্গীর আর পরীমনির অপরাধের ধরন কিন্তু এক না। হেলেনা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। অনুমোদনহীন টিভি স্টেশন খুলে দেশের প্রচলিত আইনে অপরাধ করেছেন। চাঁদাবাজি করেছেন, রাজনৈতিক দল খুলে প্রতারণা করেছেন।
একটা কথা জানতে হবে বাংলাদেশে মদ খাওয়া, পতিতাবৃত্তি করা কিন্তু অবৈধ না। কেউ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে দুটো কাজই করতে পারেন। হাইকোর্ট ২০০০ সালে এক রিট মামলায় রায়ে, পেশাদার যৌনকর্মকে বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া যে কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক নারী নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে যৌন পেশার লাইসেন্স নিতে পারেন। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে যথাযথ বিধি মেনে মদ পানের পারমিট নিতে পারেন।
আলোচিত ব্যক্তিদের এসব লাইসেন্স আছে কী না, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দেশবাসীকে তা না জানিয়ে, শুধু বলছে তারা ব্লাকমেইল করছে। কিন্তু কি ব্লাকমেইল করছে তা আর বলছে না। এটাই সন্দেহজনক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম একজন শিল্পপতি ও ব্যাংকের মালিকের উলঙ্গ ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো কোনো নারীকে চুম্বনরত অবস্থায়ও দেখা যাচ্ছে তাকে। আমি মনে করি এটাও তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। উনি উনার ঘরের মধ্যে ন্যাংটা থাকতেই পারেন। নিজ ঘরে নানা ভঙ্গিমায় উনার ঝুনঝুনিটা নাড়াতেও পারেন। কিন্তু তার একান্ত ব্যক্তিগত অন্দরমহলের ছবি বাইরে প্রকাশ করা আইন বিরোধী। এগুলো বাইরে আসলোই বা কেমনে এটাই প্রশ্ন।
ডিবি কর্মকর্তা সাকলাইনের সঙ্গে পরীমনির ঘনিষ্টতাও ফৌজদারী অপরাধে পড়ে না। এটা ডিবি কর্মকর্তার পেশাদারীত্বের ক্ষেত্রে মিসকনডাকট হতে পারে। এজন্য তাকে তার ডিপার্টমেন্ট শাস্তি দেবে, না কি করবে সেটা তাদের বিষয়। এই ডিবি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যায়, পরীমণির মামলা তদারকি করতে গিয়ে তিনি পেশাদারী আচরণ করতে পারেন নি। মোহাচ্ছন্ন হয়ে তার প্রেমে পড়ে গেছেন। পরীমনি এখন তাকে বিয়ে করতে বলতে পারেন। কিন্তু এসব ঘটনা রস লাগিয়ে যেভাবে প্রচার হচ্ছে তা আইন বিরুদ্ধ তো বটেই।
মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় মুনিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এই আসামি হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন চেয়েও পান নি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে নি। তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। পুলিশ তাকে অব্যাহতি দিয়ে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছে।
ব্যাপকভাবে আলোচিত এসব ঘটনার কোনটা নৈতিক না অনৈতিক সে প্রশ্ন তো সার্বজনিন। পরীমনি পিয়াসা মৌ হেলেনা জাহাঙ্গীর এর মধ্যে কার অপরাধ কত বড় তা কেবল আইন ও সময়ই বলতে পারে।
লেখক আইন বিটের সাংবাদিক। লেখাটি সম্পাদনা করেছে দৈনিক দেশতথ্যের ঢাকা ডেস্ক।
এবি/দৈনিক দেশতথ্য/১০ আগস্ট/২০২১

Discussion about this post