শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন,লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশী যুবক নিহত হয়েছে।রফিউল ইসলাম টুকলুর (৩৩) নামের নিহত যুবকের লাশ ঘটনাস্থল হতে ভারতীয় বিএসএফ লাশ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে ভারতে।
জানা গেছে, ৪৮ ঘন্টা আগে ভারতীয় প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ এই সীমান্তের তিন বিঘা করিডর পরিদর্শন করেছিলেন। ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে অমিত শাহ তিন বিঘা করিডরে আসায় বিএসএফ বিজিবির মধ্যে এই তিন বিঘা করিডর দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যের বন্ধন বলে অভিহিত করেন। তার কয়েক ঘন্টা পর এই হত্যাকান্ড দহগ্রাম ছিটমহলবাসীকে আতংকিত করে তুলেছে। দহগ্রাম আঙ্গরপোতা সীমান্ত ভারতের পেটের ভিতরে। এখানে তিন বিঘা করিডর ছাড়া কোথাও কাঁটাতারের বেড়া নেই। সীমান্তের ভৌগলিক জটিলতার কারণে ভারত সরকার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করেনি। এখানে সীমান্ত প্রায় উম্মুক্ত। দুই দেশের সীমান্তবর্তী নাগরিকদের অবাধে বিচার এখানে রয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে দহগ্রাম ছিটমহল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে হত্যা পুনরায় দুই দেশের কুটনৈতিক পর্যায়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে।
আজ রবিবার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম আঙ্গুরপোতা বিওপি সীমান্তের বিওপি ১নং মেইন পিলারের কাছে খুব কাছ হতে বিএসএফ প্রকাশ্য রফিকুল ইসলাম (৩৩) কে গুলি করে হত্যা করে। বিএসএফের গুলিতে নিহত রফিউল ইসলাম টুকলু উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেন ছেলে।
সীমান্তবর্তী গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, বিএসএফ তাকে সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ করায় গুলি করে হত্যা করেছে। সে ভারতীয় গরু পাচারের সাথে জড়িত সন্দেহে গুলি করে হত্যা করে। এদিকে প্রশ্ন উঠেছে দহগ্রাম আঙ্গরপোতা ছিটমহল হতে গরু পাচারের কোন সুয়োগ নেই। এই ছিটমহল হতে সপ্তাহে দুই দিন মাত্র ৬০ টি গরু বিএসএফ ও বিজিবির কাগজপত্র যাচাইবাচাই করে আনতে পারে। সীমান্তবাসীর অভিযোগ মদ্যপ অবস্থায় বিএসএফ গুলি বিদ্ধ করে রফিককে হত্যা করেছে। তাকে ভারতের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থানার ৬নং বিএসএফ ব্যাটালিয়ানের অর্জুন ক্যাম্পের টহল দল গুলি করে হত্যা করে। বিএসএফ জনরোষ এড়াতে তড়িঘড়ি করে টেনেহিঁচড়ে লাশ ভারতের মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ কে দিয়েছে। আত্নীয় স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, মরদেহ মেখলিগঞ্জ থানা চত্বরে পড়ে রয়েছে।
পাটগ্রাম থানা পুলিশরে ভারপ্রাপ্তকর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, নিহত বাংলাদেশীর লাশ ভারতীয় পুলিশের কাছে রয়েছে৷ সীমান্তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও দুই দেশের কুটনৈতিক পর্যায়ে সমঝোতা ও আলোচনার মাধ্যমে লাশ হস্তান্ত হয়। পুলিশ কর্মকর্তা গণকে বিজিবি অবহিত করলে লাশ হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা পুলিশ কর্মকর্তা গণ করে থাকেন।
জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, ভোরে বিএসএফের গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছে। ওই যুবকের মরদেহ ভারতীয় পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছেন। দহগ্রাম ছিটমহল সীমান্তে বিএসএফের এধরণের হঠকারী বর্বরতা দুঃখ জনক। এই সীমান্তে হরহামেশাই দুইদেশের অধিবাসীরা আসা যাওয়া করছে। ছিটমহলের চারিদিকে কোন কাঁটাতারের বেড়া নেই। তিন বিঘা করিডর দেখতে দুই দেশের মানুষ এখানে আসে। ভারতীয় আন্তঃ জেলা মহাসড়ক এই দহগ্রাম আঙ্গরপোতা ছিটমহলের পাশ ঘিরে, তিন বিঘা করিডরের ওপর দিয়ে। এই হত্যার তীব্র নিন্দা জানান।
তিনি আরও বলেন, ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ তিনবিঘা করিডরে এসে ছিলেন। সেই দিন শিষ্টাচার বহির্ভূত ভাবে পূর্বে অবহিত না করে তিনবিঘা করিডর কয়েক ঘন্টা বন্ধ করে রেখেছিল বিএসএফ। এই কয়েক ঘন্টা প্রায় অবরুদ্ধ ছিল দহগ্রাম আঙ্গরপোতা ছিটমহলের বাসিন্দা গণ।
৫১ বিজিবির পানবাড়ি ক্যাম্পের সুবাদার আমানুজ্জামান জানান, বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশী নাগরিকে গুলি করে হত্যায় বিএসএফ কে প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক
//এস//

Discussion about this post