মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে ছোট হয়ে আসছে পর্যটন সম্ভবনাময় মনপুরার মানচিত্র। প্রতিদিন ভাঙ্গনের কারণে বিলীন হতে যাচ্ছে ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত দ্বীপ উপজেলাটি।
ভোলা জেলার মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চারপাশে মেঘনা নদী দ্বারা বেষ্টিত সবুজ সমারোহে ঘেরা মনপুরা। এখানে দেড় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে মানুষ। হাজার হাজার একর ফসলী জমি নদীর গর্ভে বিলীন। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার সাধারন মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে নতুন জেগে উঠা চর কিংবা বেড়ীর ঢালে।
মেঘনার ভাঙ্গন থেকে মনপুরাকে রক্ষা করতে হলে চারিদিক ব্লক বা ড্যামপিং ব্যাবস্থা করে স্থায়ীভাবে ভাবে ভাঙ্গন রোধের উদ্যোগ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা। মনপুরাকে রক্ষা করতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি।
মুজিব নগর ও মনপুরা উপজেলা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ পুর্নবাসন নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষন”নামে ১ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে প্রেরন করা হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে।প্রকল্পটি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়। প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই মনপুরা নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শনে আগামী ২৩শে অক্টোবর শনিবার আসছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ মান্নান। মন্ত্রীর সফরে আশার আলো দেখলেও মনপুরাবাসীর দাবি, নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে মনপুরাকে রক্ষা করে নদীর তীর সংরক্ষন প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদন দিয়ে মেঘনার হাত থেকে দেড় লক্ষাধিক মানুষের জীবন বাঁচানো। কয়েক বছরে মেঘনার ভাঙ্গনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,পর্যটন স্থান,বাজার,মসজিদ,মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
পর্যটনের আকর্ষনীয় স্থান মনপুরা ফিসারিজ ,নাইবেরহাট বাজার,হাজির হাট ইউনিয়নের সোনারচর, চরজ্ঞান, দাসের হাট, মনপুরা ইউনিয়নের পুর্বকুলাগাজী তালুক, সীতাকুন্ড, ঈশ্বরগঞ্জ গ্রাম, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাষ্টারহাট বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশ, দক্ষিন সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুর গ্রাম নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।

সরজমিনে দেখা গেছে,হাজির হাট ইউনিয়নের চৌধুরী বাজার সংলগ্ন পুর্ব-পশ্চিম পাশে মেঘনার ভাঙ্গনে কেবলই ভিতরে ঢুকছে। নাইবেরহাট ,সোনারচর ও চরজ্ঞান মুক্তিযোদ্ধা আঃ লতিফ ভূ্ঁইয়া বাড়ীসহ অধিকাংশ গ্রাম মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। মনপুরা ইউনিয়নের আন্দিড়পাড়,মাছুয়াখালি, কাচারির ডগি,সম্পুর্ন এবং ঈশ্বরগঞ্জ মৌজার অধিকাংশ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাষ্টার হাট বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মাষ্টার হাট বাজার সংলগ্ন ব্রীজটি নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। যেকোন সময় ব্রীজটি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে মাষ্টারহাট বাজারটি সম্পুর্ন নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। দক্ষিন সাকুচিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন -পুর্ব পাশ ও রহমানপুর গ্রাম মেঘনার ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে। রাক্ষসী মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে কেবলই ছোট হয়ে যাচ্ছে দক্ষিন সাকুচিয়া ইউনিয়ন। এলাকার ভাঙ্গন কবলিত মানুষেরা দ্রুত নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহনের জন্য জনপ্রতিনিধিসহ উধর্তন কর্তপক্ষের সহযোগীতা কামনা করছেন মনপুরাবাসী।

হাজির হাট ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ নিজামউদ্দিন হাওলাদার বলেন, মনপুরাকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেলিনা আকতার চৌধুরী বলেন, মেঘনার ভাঙ্গনে মনপুরা ছোট হয়ে যাচ্ছে। মেঘনার ভাঙ্গন রোধে ইতিমধ্যে উত্তর মাথায় নদীর তীর রক্ষা প্রকল্প কাজ আমরা শেষ করেছি। উত্তর মাথায় আমরা ব্লক ও ড্যাম্পিং করেছি। মেঘনার ভাঙ্গন রোধে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি নদীভাঙ্গনের হাত থেকে মনপুরাকে রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন,ভোলা জেলার মুজিব নগর ও মনপুরা উপজেলা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ পুর্নবাসন নিস্কাসন ব্যাবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষন ”নামে ১১৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সরজমিনে প্রকল্পটি দেখানোর জন্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি আন্তরিক প্রচেষ্টায় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ মান্নানকে ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শনে নিয়ে আসছেন। আশা করছি মন্ত্রী সরজমিনে ঘুরে যাওয়ার পর দ্রুত প্রকল্পটি অনুমোদন হবে । পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন-২ নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, ইতিমধ্যে ঘূর্ণীঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ীবাঁধগুলো নির্মান করেছি। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। উপকুলীয় এলাকায় স্থায়ীভাবে নদীভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য “ভোলা জেলার মুজিব নগর ও মনপুরা উপজেলা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ পুর্নবাসন নিস্কাসন ব্যাবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষন ”নামে ১১৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করেছি। প্রকল্পটি যাছাই-বাছাই শেষে প্লানিং কমিশনে যাবে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই স্থায়ীভাবে নদীভাঙ্গনের হাত থেকে মনপুরাকে রক্ষা করতে পারব।
এবি/দৈনিক দেশতথ্য/২০ অক্টোবর/২০২১

Discussion about this post