মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের সিকদারের বিরুদ্ধে আট মেম্বারের সঙ্গে দুর্নীতির স্বাক্ষ্য দেওয়ার অপরাধে সংরক্ষিত আসনের নারী ইউপি সদস্য লুবনা খানমকে গণধর্ষনের হুমকি দিয়েছে চেয়ারম্যানের ভাতিজা খাইরুল ইসলাম (২৫)। ঘটনার পর ঐ নারী ইউপি সদস্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সম্ভ্রম রক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ দেওয়ার পর প্রভাবশালী চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের সিকদার এবং তার ভাতিজা খাইরুল ইসলামসহ তাদের সহযোগিরা নারী সদস্যকে হুমকি দেওয়ায় পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ১১ নং আজগানা ইউনিয়ন পরিষদে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার পর দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানকে বরখাস্তসহ তার ভাতিজাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগি নারী ইউপি সদস্যসহ এলাকাবাসি।
আজ মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) ভুক্তভোগি ও অসহায় নারী ইউপি সদস্য লুবনা খানম অভিযোগ করেন, ১১ নং আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল কাদের সিকদার একজন দুর্নীতিবাজ ও প্রতারক। ২০২২ সালে টাকার বিনিময়ে দলীয় মনোয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নানা অপকর্মে লিপ্ত হন। সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পরেন। তার অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে হুমকিসহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভিতি দেখান। ওয়ার্ড মেম্বারদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের সিকদার ক্ষমতার দাপট ও প্রভাব বিস্তার করে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষণ (টি আর), গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা), বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচী (এডিপি), এলজিএসপি ও উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের নামে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবসহ একটি সিন্ডিকেট চক্রের সঙ্গে যোগসাজস করে বিপুল পরিমান অর্থ আত্বসাত করেছেন। এছাড়া জন্ম নিবন্ধন, মাতৃত্বকালিন ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, অন্যের জমি দখল করে দেওয়া, বন বিভাগের জমি থেকে মাটি টাকা ও দখল, প্রহসন মুলক বিচারের নামে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন কাজের জন্য আসা অসহায় লোকজনকে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সর্বশেষ তিনি আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের চিতেশ^রী- মাটিয়াখোলা রাস্তা, চিতেশ^রী- ফকিরবাড়ি রাস্তা, হাটুভাঙ্গা জিসি- কুড়িপাড়া-জিসি রাস্তা, মজিদপুর- ঈদগা রাস্তা, ঘাগড়াই কুমড়াতলী- মনিরের বাড়ি রাস্তা, তেলিনা নালীলপাড়- তেমাথা রাস্তা এবং কুড়িপাড়া মধুরটেকি- আরফানের বাড়ির রাস্তাসহ ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অন্তত ১৬ লাখ টাকা আত্নসাত করেন। গত (১৭ জুলাই) ১১ নং আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার নুরুল ইসলাম সরকার, সংরক্ষিত ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার লুবনা আক্তার, ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার আবুল হোসেন, ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার নুরুল হক, সংরক্ষিত ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার সুমাইয়া বেগম, ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার হাজী ছানোয়ার হোসেন, ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার আকতার হোসেন এবং ১ নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল কাদেরসহ ৮ জন মেম্বার চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন। আবেদনের অনুলিপি স্থানীয় সাংসদ খান আহমেদ শুভ এমপি, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন বরাবর দিয়েছেন। চেয়ারম্যানের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আটজন মেম্বারের সঙ্গে তিনি স্বাস্থ্য দেওয়ায় প্রতিশোধ নিতে গতকাল সোমবার (২৪ জুলাই) চেয়ারম্যানের ভাতিজা খাইরুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে গণধর্ষনের হুমকি দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হলে লোকলজ্জায় ভেঙ্গে পরেন নারী ইউপি সদস্য লুবনা খানম। লুবনা খানম আরও অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান ও তার ভাতিজা শুধু গণধর্ষনের হুমকিই নয় তাকে ও তার পরিবারকে ভয়ভিতিসহ বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার নিরাপত্তা চেয়ে তিনি মির্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে চেয়ারম্যান ও তার ভাতিজাকে গেফতারের জোর দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের ভাতিজা খাইরুল ইসলাম বলেন, আমার ফেইজবুক আইডি থেকে কে বা কারা এই অপ প্রচার ছড়িয়েছে। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবী করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল কাদের সিকদার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নারী ইউপি সদস্য লুবনা খানমের অভিযোগটি সঠিক নয়। পরিষদের কিছু মেম্বার জোট বেঁধে আমার বিরুদ্ধে নানা ভাবে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা ও বানোয়টি অভিযোগ দিয়েছেন যার কোন ভিত্তি নেই।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসার শফিউল আলম বলেন নারী সদস্যদের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনরগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Discussion about this post