টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মহেড়া ও উপজেলা সদরের রেলওয়ে স্টেশন একণ মাকের আখড়ায় পরিনত হয়েছে।
প্রকাশ্যেই চলছে ছিনতাই ও চুরি। দুটি স্টেশনেই মাদক ব্যবসা এখন জমজমাট। নানা কৌশলে চলছে জুয়ার মজমা। একই ভাবে পাড়া মহল্লা ও অলি-গলিতে মাদক কারবারীরা বেপরোয়া হয়ে এই পেশায় জড়িয়ে পরেছে। বাড়ছে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই।
অভিযোগ উঠেছে মাদকের নিরাপদ জোন পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ড। উপজেলার ১৪ ইউনিয়নেও একই অবস্থা। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা ট্যাবলেট, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা, দেশী-বিদেশী মদ, বাংলা ও চোলাই মদ। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) মির্জাপুর থানার ১০০ গস উত্তরে এক শিক্ষকের বাসায় বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়য়ে থানায় অভিযোগ হলেও কেউ আটক হয়নি। উদ্ধার হয়নি মালামাল। খান আহমেদ শুভ এমপি জানিয়েছেন, মাদককের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না। আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নের জন্য প্রশাসনের সহযোগিতায় কাজ করা হচ্ছে।
আজ সোমবার (২৭ জুন) এলাকার ভুক্তভোগি পরিবার ও সাধারন মানুষের সঙ্গে কথা বলে মাদকের এমন চিত্র পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক হয়ে বাস ও ট্রেনে উত্তরাঞ্চল থেকে মাদকের চালান আসছে মির্জাপুরে মহেড়া ও উপজেলা সদরের ট্রেন স্টেশনে। মাদক কারবারীরা বিভিন্ন ভাগে মাদকের চালান মির্জাপুর পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন কৌশলে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলছে এ মাদক ব্যবসা। দুটি ট্রেন স্টেশনেই প্রকাশ্যে চলছে ছিনতাই ও চুরি। নিরাপত্তাহীনতাই ট্রেনে আসা যাত্রীরা বলে অভিযোগ রয়েছে। মাদক কারবারীদের হাতে হয়রানীর শিকার অন্তত ১০ ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, মহেড়া ও মির্জাপুর সদরের ট্রেন স্টেশনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা নেই বলে নানা অপরাধ হচ্ছে।
একই ভাবে মির্জাপুর পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী মাদক কারবারী ও জুয়াড়ি। তাদের সহযোগিতা করে থাকেন স্থানীয় প্রভাবশারী মহল ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অপরাধী সিন্ডিকেট চক্র। মির্জাপুর সাহাপাড়া, কুমুদিনী হাসপাতাল সংলগ্ন লৌহজং নদীর ঘাট, বাইমহাটি, ঘোষপাড়া, আন্ধরা, পাহাড়পুর, বাবু বাজার, মুসলিমপাড়া, পাহাড়পুর, সারিষাদাইর, শ্রীহরিপাড়া, রাজনগর, কুতুববাজার, কান্ঠালিয়া, বাওয়ার কুমারজানি, বংশাই সেলুঘাট, গাড়াইল, ত্রিমোহন, সওদাগড়পাড়া, কাঁচাবাজার, প্রফেসরপাড়া, বাইমহাটি এবং পুষ্টকামুরী গ্রাম এখন মাদকের রাজধানী হিসেবে খ্যাত। মাদকের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা ট্যাবলেট, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা, দেশী-বিদেশী মদ, বাংলা ও চোলাই মদ। এসব এলাকার বাজারের অধিকাংশ চা স্টলে পর্দার অন্তরালে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা হচ্ছে। মাদক ও জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতেই কিশোর গ্যাং গ্রæপের সদস্যরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাহাপাড়া গ্রামে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে মাদক ও জুয়ার ভয়াবহ চিত্র। দুই জন স্কুল শিক্ষক, একজন চিকিৎসক ও দুই জন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, মাদক কারবারী ও জুয়াড়িদের কারনে তারা রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে পারেন না। প্রকাশ্যেই চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই হয়। মাদক সেবীরা মাদক সেবন করে রাস্তা ঘাটে মাতলামি করে পথচারীদের অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজও করছে।
ওয়ার্শি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবব আলম মল্লিক হুরমহল ও ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন অভিযোগ করেন, উপজেলার মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, গোড়াই, লতিফপুর, আজগানা ও বাঁশতৈল এই ১৪ ইউনিয়নের বেশ কিছু পয়েন্টে পাল্লা দিয়ে চলছে মাদক ব্যবসাসহ জুয়া আসরসহ নানা অপরাধ। মির্জাপুর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, সাটুরিয়া ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী আনাইতারা ইউনিয়ন, মির্জাপুর, কালিয়াকৈর ও ধামরাই উপজেলার সীমান্তবর্তী গোড়াই, ভাওড়া, ওয়ার্শি ও বহুরিয়া ইউনিয়ন এবং মির্জাপুর, বাসাইল, সখীপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলার সীমান্তবর্তী মহেড়া, ফতেপুর,ও বাঁশতৈল ইউনিয়ন মাদকের ব্যবসা কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে বলে ভুক্তভোগি এলাকাবাসি অভিযোগ করেছেন। মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়াড়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদের মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় একাধিক অভিযোগ তোলা হয়েছে। তারপরও মাদক ব্যবসা ও জুয়া বন্ধ হচ্ছে না। বিষয়টির দিকে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা জোর দাবী জানিয়েছেন।
মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, মির্জাপুরকে মাদক মুক্ত করার জন্য স্থানীয় এমপি, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, পৌরসভার মেয়র, রাজনৈতিক দলের নেতা, সচেতন মহল ও অভিভাবকদের সমন্ময়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে। এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। মাদক ও জুয়াড়ীরা যত শক্তিশালীই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে শতাধিক অপরাধীকে গ্রেফতার কার হয়েছে।
উপজেল নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান এবং এসিল্যান্ড মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় মাদক ব্যবসী ও জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা এবং কারাদন্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হচ্ছে। তাদের এ মোবাইল কোর্ট চলমান থাকবে বলে উল্লেখ করেন।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//২৭ জুন-২০২২//

Discussion about this post