এছাড়াও প্রায় ছয় শ’ নারী বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন
তৃণ মুলে নারীর ক্ষমতায়নে এগিয়ে মির্জাপুর উপজেলা। এই উপজেলার ইউএনও, এসিল্যান্ড, সাব রেজিষ্টার, সমবায় অফিসার, মহিলা বিষয়ক অফিসার, নির্বাচন অফিসার ও পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলীসহ প্রশাসন চালাচ্ছেন ১৫ জন নারী কর্মকর্তা।
বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজের জন্য আসা সাধারণ জনগন এই নারী কর্মকর্তাদের আচার ব্যবহার ও কাজে কর্মে খুবই খুশি।
তারা বলছেন নারী কর্মকর্তাগন আন্তরিকতা নিয়ে তাদের কাজ করে দিচ্ছেন। অফিস আদালতে এসে ঘুরে যেতে হচ্ছে না।
গত কয়েক দিন ধরে মির্জাপুর উপজেলা প্রশাসনের অফিস আদালত ঘুরে এসব নারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত তুলে আনা হয়েছে।
বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুচী রানী সাহা।
মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র সালমা সালমা আক্তার শিমুল এবং উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মীর্জা শামীমা আক্তার শিফা।
সাব রেজিষ্টার উম্মে সালমা, শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাহমিনা জাহান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন সিদ্দিকী, সমবায় অফিসার আমিনা পারভীন, নির্বাচন কর্মকর্তা শরিফা বেগম, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আইরীন সুলতানা, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আফরোজা আক্তার, ভারতেশ্বরী হোমসের প্রিন্সিপাল মন্দিরা চৌধুরী, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র প্রধান শিক্ষক শিরীন আক্তার এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত ডা. তাহমিনাসহ ১৫ জন নারী কর্মকর্তা বর্তমানে মির্জাপুর উপজেলায় রয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, উচ্চ পদে এই ১৫ জন নারী কর্মকর্তা ছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৫০ জন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৬৮ জন, মাদ্রাসায় ৪২ জন, বিভিন্ন কলেজে ৮০ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ১৫০ জন, উপজেলা স্বাস্ত্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন, কমিউিনিটি ক্লিনিকে ১৫ জন, মির্জাপুর থানায় ৭ জন এবং কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজে ৬০০শ জন চিকিৎসক নারী সুনামের সঙ্গে নিজ নিজ দপ্তরে কাজ করছেন।
জানা গেছে, ইউএনও শাকিলা বিনতে মতিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কর্ম বিভাগ পড়াশোনা শেষ করে ৩৪ তম বিসিএসে উত্তীর্ন হয়ে সহকারী কমিশনার ক্যাডার হিসেবে সরকারী কর্মকমিশনে যোগ দেন। তিনি ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং বিআরটিএ অফিসে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এর দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৩ সালের ২৭ এপ্রিল মির্জাপুর উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন। তার নিজ জেলা পিরোজপুর। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি মির্জাপুর উপজেলাকে ঢেলে সাজিয়েছেন।
তিনি বলেন, নারীরা আজ ঘরের কোনে বসে থাকার জন্য নন। তারা অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপুর্ন পদে কাজ করছেন। নারীরা আজ স্বাবলম্বী। আমি অনেক দুর এগিয়ে যেতে চাই। তার স্বামীও বিসিএস ক্যাডার এবং ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
এসিল্যান্ড সুচী রানী সাহা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিং থেকে ফিসারিজ বায়োলজি এন্ড জেনেট্রিক্স এ স্নাতকোত্তর শেষ করে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩৬ তম বিসিএসে সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৮ সালে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ২০২২ সালে দেলদুয়ার উপজেলা সহকারী কমিশনার এবং ২০২৩ সালের ১১ জুন মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। তার নিজ জেলা ঝিনাইদাহ।
তার স্বামী সমীর কুমার সাহা বিসিএসে উত্তীর্ন হয়ে মৎস কর্মকর্তা হিসেবে সখীপুর উপজেলায় কর্মরত। জনগনের সেবা নিশ্চিত এবং ভূমি অফিসকে দুর্নীতি মুক্ত করতে দিন রাত কাজ করছেন।
সাব রেজিষ্টার উম্মে সালমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা ও গবেষনা বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে ২০১৩ সালে সাব রেজিষ্টার হিসেবে হিসেবে যোগদান করেন। তিনি রংপুর ও গঙ্গাচড়া উপজেলায় কাজ করেছেন। সর্বশেষ গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ সালে মির্জাপুর উপজেলায় যোগদান। তার কাজে দলিল লেখকসহ রেজিষ্টি করতে আসা সাধারণ জনগন খুবই খুশি।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাহমীনা জাহান বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশুনা শেষ করে সাধারণ শিক্ষা ২২ তম বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি পরিশ্রমী, ন্যায়পরায়ন ও নিষ্টাবান হিসেবে পরিচিত। সরকারী এম এম আলী কলেজ থেকে সহকারী অধ্যাপক থেকে মির্জাপুর উপজেলায় শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে ২০২২ সালে যোগদান করেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত পালন করছেন। তার নিজ জেলা টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা। কর্মদক্ষতায় তিনি কলেজকে ঢেলে সাজিয়ে যাচ্ছেন।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স মাষ্টার্স শেষ করে ২০১৭ সালে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসনে যোগদান করেন। তিনি নেত্রকোনা , বাসাইল এবং সর্বশেষ মির্জাপুর উপজেলায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে ২০২৩ সালে যোগদান করেন। তার নিজ জেলা টাঙ্গাইলের বাসাইল। তিনি বলেন,দুই বোন এক বাইয়ের মধ্যে তিনি চ্যালেন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এই পেশায় আসতে পেরে তিনি নিজেকে গর্ব করেন। নারীদের দেখবাল, তৃণমুলে নারীদের অগ্রযাত্রায় উন্নয়নে কাজ করতে পেরে তিনি খুশি।
সমবায় অফিসার আমিনা পারভীন দিনাজপুরের মেয়ে। আমিনা পারভীন একজন দক্ষ সমবায় অফিসার। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। পড়াশোনা শেষ করে ২০১০ সালে সমবায় কর্মকর্তা হিসেবে খুলনা, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ এবং ২০১৩ সালে মির্জাপুর উপজেলায় সমবায় কর্তাকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।
তার ছোট বোন আয়শা আক্তার পপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশেনা শেষ করে বিদেশে স্কলারশিপে চাকুরী করেন।
নানা প্রতিকুলতা পেরিয়ে তৃণমুলে সমবায়ীদের নিয়ে ন্যায়, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে সমাজ উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন বরে জানিয়েছেন।
পৌরসভার মেয়র সালমা আক্তার শিমুল সাবেক প্রয়াত মেয়র শাহাদত হোসেন সুমনের সহধর্মীনী। তার গ্রামরে বাড়ি পুষ্টকামুরী। ২০২০ সালে তার স্বামীর মৃত্যুর পর বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২১ সালে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়ে মির্জাপুর পৌরসভাকে মডেল হিসেবে উপহার দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তার আন্তরিকতায় পৌরসভার সকল কর্মকর্তা কর্মচারী উৎসাহ উদ্দীপনায় কাজ করে যাচ্ছন। পৌরভার ৯ টি ওয়ার্ডে তিনি সুষম উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মীর্জা শামীমা আক্তার শিফা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। একাধারে তিনি শিল্পী, রাজনীতিবিদ ও সমাজ সেবক। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে বিপুল ভোটরে ব্যবধানে উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচতি হয়ে তৃণমুলে নারী উন্নয়ন, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধসহ শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শরিফা বেগম, পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী, ভারতেশ্বরী হোমসের প্রিন্সিপাল মন্দিরা চৌধুরী, ওয়ার্শি ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সচিব এবং উত্তর পেকুয়া জাগরণী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শরীন আক্তার ন্যায়, নিষ্টা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনের সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ এমপি এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসরে স্পিকার ও বিরোধী দলের নেত্রীও নারী। তারা দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছেন। নারীদীর্ঘ দিন পর এই প্রথম ১৫ জন নারী কর্মকর্তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ করচেন যা একটি বিরল দৃষ্টন্ত। তারা তাদের নিজেদের কর্মদক্ষতায় সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন যা প্রশংসার দাবীদার।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//নভেম্বর ০৩,২৩//

Discussion about this post