মাওলানা মুহাঃ আবু মুছা আশয়ারী: আলহামদুলিল্লাহ, সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি আমাদেরকে এই সুন্দর পৃথিবীতে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে সৃষ্টি করেছেন এবং ঈমান আনয়নের তাওফীক দান করেছেন। প্রত্যক মুমিন মুসলমানের সবচাইতে বড় চাওয়া পাওয়া হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও সাক্ষাৎ লাভ করা। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন জান্নাতীরা জান্নাতে সকল নিয়ামত পাওয়ার পরেও পূর্ণ তৃপ্তি লাভ করবে না, যখন আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎ লাভ করবে তখনই পরিপূর্ণ তৃপ্তি অর্জন করবে। সম্মানীত পাঠক ! সূরা কাহাফের সর্ব শেষ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যে ব্যক্তি স্বীয় প্রভুর সাক্ষাত পেতে কামনা করে সে যেন নেক আমল করে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক না করে। নেক আমল হিসাবে ফরজ ওয়াজীব ইবাদত ছাড়াও আমাদের জন্য রয়েছে বিশেষ মাস, দিন ও রাত। তন্মধ্যে ১৪ শাবান দিবাগত রাত শবে বারায়াত বা লাইলাতুল বারায়াত অন্যতম একটি বরকতপূর্ণ রাত। নাসায়ী আস-সুনান কিতাবে বর্ণিত হাদীস রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, এ মাসে রব্বুল আলামীনের কাছে মানুষের কর্ম উঠানো হয়। আর আমি ভালবাসি যে, আমার রোযা রাখা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক। এজন্য রাসুল (সঃ) এ মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন। এ মাসের সবচেয়ে বরকতপূর্ণ রাত শবে বারায়াত বা লাইলাতুল বারায়াত। হাদীস শরীফের পরিভাষায় বলা হয়েছে লাইলাতু নিসফি সাবান বা মধ্য শাবানের রাত। এ বরকতপূর্ণ রাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণীত। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন “আল্লাহ তায়ালা মধ্য সাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি দৃকপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতিত সকলকে ক্ষমতা করে দেন। উল্লেখ্য যে, উল্লেখিত হাদীসখানা ০৮ জন সাহাবীর সূত্রে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে। যাহা ইবনু মাজাহ আস-সুনান ১/৪৪৫, ইবনু হিববান, আস-সহীহ ১২/৪৮১, তাবরানী আল-মুজাম আল-কবীর ২০/১০৮, ২২/২২৩, আল-মুজাম আল-আসওয়াত ৭/৬৮, বায়হাক্বী, শুয়াবুল ঈমান সহ বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। ইমাম তিরমিজী ও ইবনু মাজাহ শরীফে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সঃ) এই রাত্রে জান্নাতুল বাকী গোরস্থানে গিয়ে মুর্দাদের জন্য দোয়া করেছেন। এছাড়াও এ রাতে কবর যিয়ারত করা এবং নফল নামাজ পড়ার ব্যাপারে বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম ইবনু মাজাহ হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন “যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাতে (নামাজে-দোয়ায়) দন্ডায়মান থাক এবং দিনে রোজা রাখ। কারণ ঐ দিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি ? আমি তাকে ক্ষমা করবো, কোন রিযিক অনুসন্ধানকারী আছে কি ? আমি তাকে রিযিক প্রদান করবো। কোন দূর্দশাগ্রস্থ ব্যক্তি আছে কি ? আমি তাকে মুক্ত করবো। এভাবে সূবহে সাদিক পর্যন্ত চলতে থাকে। যদিও হাদীসটির সনদ দূর্বল তবে এ ব্যাপারে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং ওলামায়ে কেরামদের মতে আমলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীস গ্রহণযোগ্য (তাফসীরে জালালাইন)। উপরে উল্লেখিত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণীত এ বরকতপূর্ণ রজনীতে ঘরে বাড়িতে আলোকসজ্জা, আতশবাজী, কবরে বাতি জালানো নিতান্তই উদ্দেশ্য ব্যহত এবং বিদায়াত। ইসলাম পরিপন্থি এহেন কার্যকলাপ করার কারণে গোনাহগার হতে হবে। প্রচলিত হালুয়া রুটি তৈরী ও বিতরণ অবশ্য পালনীয় মনে করা শরীয়তের কোন বিধান নয়। এগুলোর দ্বারা শবে বারায়াতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আমাদের উচিৎ সাধ্য মোতাবেক নামাজ আদায়, কোরআন শরীফ তেলাওয়াত, দরুদ শরীফ পড়া, জিকির করা ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে জীবনের গুনাহ থেকে মাগফেরাত কামনা করা, নেক মনোবাঞ্ছা পেশ করা, কবরবাসীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা এবং দেশ ও দেশবাসীর জন্য মঙ্গল কামনা করে আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রার্থনা করা। সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, নফল ইবাদত করতে গিয়ে কোন ভাবেই যেন ফরজ নামাজ কাযা না হয়। কেননা নফল ইবাদতের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার দরবারে জবাবদিহীতা থাকবে না কিন্তু ফরজ ইবাদত ছেড়ে দিলে অবশ্যই জবাবদিহী করতে হবে। তবে ফরজ ওয়াজীব ইবাদতের সাথে নফল ইবাদত আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভে সবচেয়ে বড় সহায়ক। আসুন যথাসাধ্য ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে আমরা শবে বারায়াত তথা লাইলাতুল বারায়াতের নেয়ামত ও ফযিলত অর্জনে সচেষ্ট হই। সাথে সাথে সকল প্রকার শিরক, কুফর, মুনাফেকী, হিংসা বিদ্বেষ সহ যাবতীয় পাপাচার বর্জন করি। আল্লাহ পাক সকলকে তাওফীক দান করুন। – আমীন। লেখক-অধ্যক্ষ, পাংশা শাহজুঁই কামিল মাদরাসা, পাংশা, রাজবাড়ী।
দৈনিক দেশতথ্য//এল//

Discussion about this post