মোঃ খায়রুল ইসলাম ঃ সম্মানজনক পেশা হলেও ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেজিং পেশা হলো সাংবাদিকতা। মফস্বল সাংবাদিকদের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ আরো বেশি। নানা ধরণের হুমকি ধামকি মধ্য দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় তাদের। নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই স্থির করতে হয় তাদের। মফস্বল সংবাদ ও সাংবাদিকতার গণমাধ্যম এর একটি অপহিার্য অংশ হলেও এদিকে নজর নেই মিডিয়া হাউজগুলোর। তারপওে হলুদ সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জতো রয়েছেই। নানা প্রতিক’লতার মধ্যে এক প্রকার যুদ্ধ টিকে থাকতে হয় মফস্বল সাংবাদিকদের।
সংবাদপত্রের যাত্রা বহু প্রাচীন হলেও বিংশ শতাব্দীতে এসে এর অমুল পরিবর্তন হয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এক ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। শুধু তাই নয় রাখছে অগ্রণী ভূমিকাও। রাজধানী ঢাকার বাহিওে ও মফস্বলে এক ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটছে। নানা প্রতিকূলতা সত্বেও সাংবাদিকতা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিপুল সম্ভাবনার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে।
মফস্বলে থেকে আমার দুই যুগেরও বেশি সময় ধওে সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতার আলোকে মফস্বল সাংবাদিকদেও যে সব চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখিন হতে হয় তা তুলে ধরার চেষ্ঠা করছি।
জাতীয় পর্যায়ের নামীদামী মিডিয়া হাউজগুলো উপজেলা সংবাদদাতা তথা মফস্বল সাংবাদিকদেও তেমন মূল্যায়ন করতে চায় না। অনেক পত্রিকাই তাদের সম্মানিভাতাও ঠিকমতো পরিশোধ করে না বা দেয় না। এ কারণে মফস্বলের প্রকৃত সংবাদকর্মীরা সাংবাদিকতার নীতিচ্যুত হওয়ার কষ্টে ভোগেন। কিন্তু তারা প্রতিবাদী হওয়ার সাহস দেখাতে পারেন না। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় তাদেও জন্য কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। অথচ মফস্বলের সাংবাদিকরাই যে কোন পত্রিকা ও গণমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখার প্রধানতম পুঁজি।
শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতার হাতে পত্রিকা ও মিডিয়া হাউজ চলে যাওয়ায় মফস্বল সাংবাদিকদেও বিপদ আরো বেড়েছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক চরিত্র আড়াল রাখার জন্য তারা পত্রিকাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছেন। যার কারনে মফস্বেেল এখন সাদা,কালো,হলুদন,নীল তথা নানা বর্ণেও সাংবাদিকে ভরে গেছে।
মফস্বল সাংবাদিকদেও বড় সমস্যা হলো নিজেদের সৃষ্ট সমস্যা। তাদের মধ্যে ঐক্যেও অভাব রয়েছে। তাছাড়াও একে অপরের মধ্যে হিংসা, অহংকার বোধতো রয়েছেই। যার কারণে মফস্বলের প্রতিটি জেলা উপজেলায় একাধিক প্রেসক্লাব, রিপোটার্স ইউনিটি, সাংবাদিক সংস্থা নামে বেনামে নানা সংগঠন বিদ্যমান রয়েছে।
সমাজের নানা অসঙ্গতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে গেলেই সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষমতাবান অসৎ ব্যক্তিবর্গ ক্ষুদ্ধ হন। তারা নানা কৌশল প্রয়োগ করে মফস্বল সাংবাদিকদেও সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখার অব্যাহত চেষ্টা করেন। না পারলে তাদের নানা হুমকি ধমকির শিকার হতে হয় সাংবাদিককে। সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে মফস্বলের অনেক সাংবাদিককে হত্যার শিকার হতে হয়েছে। প্রভাবশালী ঐ চক্রটি মফস্বল ভিত্তিক মুক্ত সংবাদ চর্চা ও মফস্বল সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা।
মফস্বলে সাংবাদিকতাকে পুঁজি কওে অনেকেই অপসাংবাদিকতায় লিপ্ত হন। সমাজপতি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের তৈলমর্দন করে নিজের সুবিধা আদায়ই তাদের কাজ। অনেকেই আবার প্রাইভেটকার ও মটরসাইকেলে স্টিকার সাটিয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তারা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ তৈরি ও প্রকাশের চাইতে ফাঁদে ফেলে সুবিধা আদায়ে ব্যস্থ থাকেন বেশি। এদের কারণে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিককতা প্রশ্নবিদ্ধ।
বর্তমানে মফস্বল সাংবাদিকতায় স্বল্প শিক্ষিতদেও ছড়াছড়ি বেশি। বই বিক্রেতা, বীমাকর্মচারী, চা বিক্রেতা, মাদকব্যবসায়ি থেকে শুরু কওে রাজমিস্ত্রী, সিএনজি চালক, ড্রাইভার, বিভিন্ন অফিস আদালতের দালালরাও সাংবাদিকতার খাতায় নাম লিখিয়েছেন। এছাড়া বর্তমান যুগে ফেসবুক ব্যবহারকারী সকলেই সাংবাদিক বলা যায়, কারণ অনেকেই ফেসবুকে বিভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও আপলোড করে সাংবাদিক বনে যান। নীতিমালা না থাকায় প্রতিটি জেলা-উপজেলা সদওে বিভিন্ন নামে ফেসবুক পেইজ খুলে সংবাদকর্মী নিয়োগ দিচ্ছেন এবং নিজেকে মিডিয়া হাউজের পরিচয় দিচ্ছেন। সমাজপতি, কোন রাজনৈতিক নেতা ও কোন কোন দপ্তওে এদেরই কদর বেশি। যার কারণে শিক্ষক ও মেধাবীরা এ পেশায় যেতে এখন আগ্রহী হন না।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post