জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনধি: চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলায় অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড ও সেলফিবাজদের রাজনীতিতে দলের তৃণমূল ও ত্যাগী নেতারা অতিষ্ট বলে খবর পাওয়া গেছে।
একদম ওয়ার্ড থেকে পদধারীও বার বার আওয়াজ দিয়ে একই অভিযোগ করে আসছেন। কিন্তু সেলফি লীগ এবং ফেসবুক লীগ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করলেও সাবধানতা অবলম্বন না করায় দিন দিন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
মাঠের চিত্র ও বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের ফেসবুক পোস্ট যাছাই বাচাই করে জানা যায়, এমন কিছু কিছু ছাত্র আছে, এমন কিছু কিছু তরুণ-যুবক আছেন যারা ফেসবুকে রাজনীতি করে। কোন না কোন ভাবে নেতা কিংবা প্রভাবশালী-মন্ত্রীর ডানে বামে দাঁড়িয়ে ছবি একটা তুলবে, ওটা ফেসবুকে দিয়ে দেবে। বাস সেলফি লীগ। এই সেলফি লীগ আর ফেসবুক লীগের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে কর্ণফুলীর প্রবীণ নেতাদেরও কড়া সমালোচনা করতে দেখা গেছে।
সিনিয়র নেতারা বলছেন, সেলফি বর্তমান রাজনীতিতে একটি বড় ফ্যাক্টর, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। যারা সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে সেলফি তুলে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে অপব্যবহার করছে তারাই সেলফিবাজ নামে পরিচিত। আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে সেলফিবাজদের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য মাহবুব আলম তারা বলেন, ‘সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমাদের গন্তব্য কোথায় সেটা পরিষ্কার করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড ও সেলফিবাজদের ভূমিকা কী হবে, না হবে সেটাও বিবেচনায় রেখে আগাতে হবে। কারণ সামনের জাতীয় নির্বাচনেও কর্ণফুলী-আনোয়ারার একমাত্র অভিভাবক সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ভাই কে বিজয় করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে আসতে হবে।’
কর্ণফুলী উপজেলার এক সিনিয়র আওয়ামী লীগ বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার কারণে আমাদের সংগঠনে অনেক আগাছা-পরগাছা ঢুকেছে। অনেকে নানাভাবে পদ পেয়েছে। আগাছা-পরগাছা সংগঠনের সব পর্যায় থেকে দূর করতে হবে। কমিটি গঠনের সময় নেতাদের সবকিছু দেখা উচিত। কেননা, কর্ণফুলীতে বার বার এই বিতর্ক আসতেছে। অনুরোধ করব এসব আগাছা যেন সংগঠনে পদ না পায়, পেলেও যেন বাদ যায়।’
সেলফি লীগ-ফেসবুক লীগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার রাজনীত বিটের তরুণ সাংবাদিক রাহুল দাশ নয়ন বলেন, ‘এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সুসময়। ২০০৮ সাল পরবর্তী অনেক নেতাকর্মী সৃষ্টি হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীও আছে। এরা আওয়ামী লীগের দুঃসময় না দেখার কারণে আগামী দিন নিয়ে তেমন ভাবেন না। নেতারাও ফেসবুক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। যে কর্মী নেতার পক্ষে বেশি স্ট্যাটাস দিবে তিনিই নেতার যোগ্য কর্মী হচ্ছে। প্রতিদান হিসেবে নেতা শীর্ষ পদ পেলে কর্মী পাচ্ছেন সম্পাদকীয় পদ। এখন তো শুধু ফেসবুক কিংবা ছবি রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ নাই, নেতার পরিবার পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এখন নেতার ছবি তো দেয়, তাঁর পাশাপাশি নেতার স্ত্রী-সন্তানদের সাথেও ছবি দিয়ে ফেসবুকে সরব রাজনীতি চলছে। নেতা বিদেশ যাত্রায় বিশাল বহর যায়। প্রশ্ন হলো, বিদেশ যাত্রায় যারা নেতাকে বড় শোডাউনে বিদায় দেয় তাঁরা ক্ষমতাচ্যুত হলে এই শোডাউন সভা-সমাবেশ পর্যন্ত যাবে কিনা?
শিকলবাহার সাবেক ছাত্রনেতা মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘শুধুমাত্র স্লোগান, সেলফি আর দলীয় রাজনীতির মধ্যে যদি আমরা নিজেদের সীমাবদ্ধ করে ফেলি, তাহলে সংগঠন এগিয়ে যাবে না। বঙ্গবন্ধুর যে দর্শন, সেটাকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। চেতনা না থাকলে শুধু সেলফি দিয়ে রাজনীতি করা যাবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ এবং চর্চা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক দর্শন ধারণ করা দরকার। পাশাপাশি চট্টগ্রাম-১৩ আসন হতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য তারুণ্যের প্রতীক, ক্লিন ইমেজধারী মিনিস্টার চট্টগ্রামের গর্ব ভূমিমন্ত্রী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ভাইয়ের সুনাম সবাইকে ধরে রাখতে হবে।’
কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরীকে ফোনে পাওয়া না গেলেও একই কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম টুকু বলেন, ‘আমরা কি বলব। কি জানাবো। সারা অঙ্গে ব্যথা ঔষধ দেবো কোথা!।’
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post